দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সবচেয়ে এগিয়ে আছে ভারত। আগামী বছরগুলোয় দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি ঊর্ধ্বমুখী থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। আর্থিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয়দের মধ্যে মোবাইল ফোন ব্যবহারের হারও বাড়ছে। বাড়ছে টেলিকম ব্যবসার পরিধি। এ কারণে যত দিন যাচ্ছে, টেলিকম খাত থেকে দেশটির রাষ্ট্রীয় কোষাগারে বাড়তি রাজস্ব যুক্ত হচ্ছে। ২০২৩ সাল নাগাদ ভারতের টেলিকম অবকাঠামো খাত থেকেই রাষ্ট্রীয় কোষাগারে যুক্ত হওয়া রাজস্বের সম্মিলিত পরিমাণ ৩১ হাজার কোটি রুপিতে উন্নীত হতে পারে। লন্ডনভিত্তিক বহুজাতিক প্রফেশনাল সার্ভিস ফার্ম আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়াংয়ের (ইওয়াই) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। খবর ব্লুমবার্গ ও ইকোনমিক টাইমস।
টেলিকম অবকাঠামো খাতের অধীনে মূলত ভারতজুড়ে বিস্তৃত মোবাইল টাওয়ার নেটওয়ার্ককে চিহ্নিত করেছে ইওয়াই। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রাহকসংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি প্রতি বছরই নতুন নতুন এলাকা মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায় আসছে। ফলে ভারতজুড়ে গড়ে তোলা হচ্ছে শক্তিশালী টাওয়ার নেটওয়ার্ক। সরকারের পক্ষ থেকেও মোবাইল টাওয়ার স্থাপনকে টেলিকম খাতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। ফলে এ খাত থেকে রাজস্বপ্রাপ্তির পরিমাণও বাড়তির দিকে থাকবে। ২০২৩ সাল নাগাদ শুধু টেলিকম অবকাঠামো খাত থেকেই ভারতের রাষ্ট্রীয় কোষাগারে যুক্ত হওয়া রাজস্বের সম্মিলিত পরিমাণ ৩১ হাজার কোটি রুপিতে দাঁড়াতে পারে।
প্রতিষ্ঠানটির উদীয়মান বাজার বিষয়ক গবেষক প্রশান্ত সিংহল বলেন, টেলিকম ভারত সরকারের অগ্রাধিকারমূলক খাতগুলোর একটি। ক্রমবর্ধমান রাজস্বের কারণে ভারত সরকার বরাবরই টেলিকম খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। সামনেই ফাইভজি নেটওয়ার্ক চালুর কথা চলছে। ওই সময় বিদ্যমান টাওয়ারগুলো আধুনিকায়ন করা হবে। সক্ষমতা বাড়ানো হবে। নতুন নতুন অনেক টাওয়ার স্থাপন করতে হবে। এতে একদিকে ভারতের টেলিকম অবকাঠামো খাত যেমন বর্তমানের তুলনায় গতিশীল হয়ে উঠবে, তেমনি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে রাজস্বের পাল্লাও ভারী হবে।
তবে বিপুল এ কর্মযজ্ঞ সম্পাদনের জন্য ভারতের টেলিকম অবকাঠামো খাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে বলেও জানিয়েছে ইওয়াই। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত ৩১ হাজার কোটি রুপি রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য পূরণের জন্য ভারতের টেলিকম অবকাঠামো খাতে ৬৬ হাজার কোটি রুপি থেকে সর্বোচ্চ ৯৩ হাজার কোটি রুপি বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে।
ফাইভজি নেটওয়ার্কের কারণে বিশ্বব্যাপী মোবাইল টাওয়ার ব্যবসায় কাঠামোগত পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় টাওয়ার কোম্পানিগুলো তুলনামূলক বড় আকারের টাওয়ার নির্মাণে আগ্রহ হারাতে শুরু করেছে। বিপরীতে এসব কোম্পানির মনোযোগের কেন্দ্রে রয়েছে ফাইবারভিত্তিক নেটওয়ার্ক। একই সঙ্গে ডাটা সেন্টার, বড় পরিসরে ওয়াই-ফাই জোন কিংবা স্মার্ট সিটি তৈরিতে এসব প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করতে চাইছে। টেলিকম অবকাঠামো খাতের এ পরিবর্তন অনুধাবন করতে পেরেছে ভারত সরকারও। এজন্য ভারতজুড়ে একাধিক স্মার্ট সিটি গড়তে বিনিয়োগ খুঁজছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টেলিকম অবকাঠামো খাতের বৈশ্বিক পরিবর্তনের বাইরে নয় ভারত। বরং এ খাতে ভারত একটি উদীয়মান বাজার। এ পরিবর্তনজনিত কারণে ভারতের টেলিকম অবকাঠামো নির্মাণে ২০২৩ সালের মধ্যে নতুন করে সর্বোচ্চ ৯৩ হাজার কোটি রুপি বিনিয়োগ প্রয়োজন হতে পারে।
এদিকে যুক্তরাজ্যভিত্তিক অন্য প্রতিষ্ঠান গ্লোবালডাটার এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে ভারতে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ১২০ কোটির বেশি। ২০২৪ সাল নাগাদ তা বেড়ে ১৪০ কোটিতে উন্নীত হতে পারে। ২০২৪ সাল নাগাদ ভারতের ১৩ কোটি ৮০ লাখ মোবাইল ব্যবহারকারী ফাইভজি নেটওয়ার্কের আওতায় আসতে পারে। ২০২৪ সাল নাগাদ ভারতের মোবাইল সার্ভিস খাত থেকে প্রাপ্ত রাজস্বের পরিমাণ ৩ হাজার ৯৮০ কোটি ডলারে দাঁড়াতে পারে বলে জানিয়েছে গ্লোবালডাটা। গত বছর দেশটির মোবাইল সার্ভিস খাত থেকে ১ হাজার ৯৬০ কোটি ডলার রাজস্ব আয় হয়েছে।