রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর, টেলিটক বেসরকারী খাতের প্রতিযোগীদের পরিষেবা সরবরাহের তুলনায় এখনো অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং পরিষেবাগুলিকে উন্নত করার লক্ষ্যে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার একটি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছে টেলিটক। প্রকল্পটির অধীনে ২০২৪ সালের মধ্যে দেশের শতভাগ অঞ্চল নিজেদের নেটওয়ার্কের আওতায় আনার পরিকল্পনা করছে টেলিটক।
পোস্ট এবং টেলিযোগাযোগ বিভাগের একটি সাম্প্রতিক বৈঠকে টেলিটক এর নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণসহ আরো কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী, মোস্তফা জব্বার এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা, সজীব ওয়াজেদ জয় উক্ত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
মোস্তফা জব্বার বলেন, “সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ত্রুটিগুলি সমাধান করতে এবং বেসরকারী অপারেটরদের সাথে যোগাযোগে সহায়তা করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নিয়েছে। পুরো দেশকে টেলিটকের নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে একটি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।”
টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সাহাব উদ্দিন বলেন, ‘টেলিটক ৪জি নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণ এবং পল্লী অঞ্চলে ৪জি নেটওয়ার্ক পরিষেবা সরবরাহ’ শীর্ষক প্রকল্পটি সারা দেশকে টেলিটকের নেটওয়ার্কের আওতায় আনার লক্ষ্য নিয়েছে।
প্রকল্পটি ইতিমধ্যে পরিকল্পনা কমিশন দ্বারা অনুমোদিত হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের (একনেক) কার্যনির্বাহী কমিটির অনুমোদন পেলে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে টেলিটকের গ্রাহক সংখ্যা ৪৭ লক্ষ। ২০২০ সালের মধ্যে গ্রাহক সংখ্যা ৭০ লক্ষ, ২০২১ সালের মধ্যে ১ কোটি, ২০২২ সালের মধ্যে ১ কোটি ৫০ লক্ষ এবং ২০২৪ সালের মধ্যে ২ কোটি করার লক্ষ্য রয়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে গ্রামীণ অঞ্চলের লোকেরা ৪জি নেটওয়ার্ক পরিষেবা উপভোগ করতে পারবেন বলে জানান তিনি।
টেলিটক প্রধান আরো জানান; নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ পরিকল্পনা অনুযায়ী, তারা ২০১৯-২০ সালে ৫,৮৫০ বেস ট্রান্সসিভার স্টেশন (বিটিএস), ২০২০-২১ সালে ৯,৫১০ বিটিএস, ২০২১-২২ সালে ১২,৫১০ বিটিএস, ২০২২-২৩ সালে ১৩,৩১০ বিটিএস এবং ২০২৩-২৪ সালে ১৫,৫১০ স্থাপন করতে সক্ষম হবেন।
টেলিটক কর্তৃপক্ষ ২০১৯-২০ সালে ১ হাজার কোটি টাকার রেভিনিউ অর্জন করবে বলে জানান তিনি। তিনি আরও আশাবাদ ব্যাক্ত করেন যে ২০২০-২১ অর্থবছরে এই সংখ্যা ১৩শ কোটি টাকা অতিক্রম করবে।
টেলিটক ২০০৫ সালে ৬৪৩ কোটি টাকার মূলধন নিয়ে তাদের যাত্রা শুরু করে এবং পরে ২০০৮ সালে এটির নামকরণ করা হয় টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড। জিটুজি চীনা অর্থায়নে, টেলিটক ২০১৩-১৫ সালে ১৭শ কোটি টাকা ব্যায়ে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে তাদের ২জি/৩জি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করে।
এখন টেলিটক তাদের ব্যবসায়িক সম্প্রসারণ এবং আধুনিক ডিজিটাল পরিষেবা প্রদানের লক্ষ্যে মূলত সরকারী ও কর্পোরেট কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী, যুবক এবং মহিলা গ্রাহকদের দিকে নজর দিচ্ছে।
বাংলাদেশ টেলিযোগযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এর তথ্য অনুসারে, আগস্ট ২০১৯ পর্যন্ত দেশে ৭কোটি ৫৬ লক্ষ গ্রামীণফোন গ্রাহক, ৪কোটি ৭৭লক্ষ রবি গ্রাহক, ৩কোটি ৪৮লক্ষ মিলিয়ন বাংলালিংক গ্রাহক এবং ৭৩লক্ষ টেলিটক গ্রাহক রয়েছেন।