বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) দাবি করা বকেয়া অর্থ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চলমান দ্বন্দ্বের কোনো অগ্রগতি নেই বলে জানিয়েছেন গ্রামীণফোনের (জিপি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়াসির আজমান। একইসঙ্গে টেলিকম অপারেটরটি যে সিম সংকটে ভুগছে, সে পরিস্থিতিরও কোনো অগ্রগতি নেই বলে জানান তিনি।
রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
গ্রামীণফোনের সিইও ইয়াসির আজমান বলেন, সিম সংকট সমাধানে কোনো অগ্রগতি হয়নি। নতুন গ্রাহকদর কাছে সিম বিক্রির ক্ষেত্রে আমরা সমস্যার মুখোমুখি হব। তাই এই সমস্যার সমাধান না করতে পারলে নতুন গ্রাহক পাওয়া যাবে না। কারণ সিম থাকবে না।
বর্তমান গ্রাহকদের ক্ষেত্রে এটি সমস্যা তৈরি করবে না জানিয়ে জিপি সিইও বলেন, বর্তমান গ্রাহকদের সিম রিপ্লেসমেন্টেও কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার গ্রাহক আমাদের কাছে নতুন সিম নিতে আসে। এই গ্রাহকদের জন্য সমস্যা হবে। তবে আমরা আশা করছি, এ সমস্যার সমাধান হবে।
এদিকে, গত ২ এপ্রিল টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পাওনা দাবি করে চিঠি দেয় গ্রামীণফোনকে। বিটিআরসি বলছে, দেশের বৃহত্তম এই মোবাইল অপারেটরের কাছে তাদের পাওনা আট হাজার ৪৯৪ কোটি এক লাখ টাকা। আর বাকি চার হাজার ৮৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা পাওনা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। বিটিআরসির পাওনার মধ্যে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সুদের পরিমাণ ছয় হাজার ১৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এ বকেয়া নিয়ে চলামান দ্বন্দ্ব আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে গত ২৭ জানুয়ারি গ্রামীণফোনের পরিচালনা পর্ষদ ২০১৯ সালের সমাপ্ত বছরের জন্য ৪০ শতাংশ নগদ চূড়ান্ত লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এর আগে অন্তর্বর্তীকালীন ৯০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এর মাধ্যমে বছরটিতে ১৩০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির ঘোষণা করা এই লভ্যাংশের পরিমাণ আগের বছরের ২০১৮ সাল তুলনায় অর্ধেকেরও কম। ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটি ২৮০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছিল।
লভ্যাংশের পরিমাণ কমে গেলেও ২০১৯ সালে গ্রামীণফোন মোটা অঙ্কের মুনাফা করেছে। বছরটিতে শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয় ২৫ টাকা ৫৬ পয়সা। তবে শেয়ারবাজার গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে, সরকারের বকেয়ে পরিশোধের কারণ গ্রামীণফোন লভ্যাংশের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে গ্রামীণফোনের সিইও বলেন, বিটিআরসির দাবি করা পাওনা টাকা পরিশোধের সঙ্গে লভ্যাংশের কোনো সম্পর্ক নেই। যদি এটার (বিটিআরসির দাবি করা বকেয়া টাকার সমস্যা) আমরা দ্রুত সমাধান করতে পারি, তাহলে এ ধরনের কোনো প্রশ্ন আসবে না। আর লভ্যাংশ সম্পূর্ণ আলাদা একটি বিষয়। একটি পলিসি ফলো করে এটি করা হয়।
চীনে কভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোবাইল সেবার ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে কি না— এমন প্রশ্নে ইয়াসির বলেন, সমস্যা কিছুটা হবে, তাতে ভুল নেই। সব ধরনের পণ্যই চীন থেকে আসে। শুধু নেটওয়ার্ক নয়, যেকোনো খাতের জন্যই এ পরিস্থিতি সমস্যার কারণ। তবে এটি কতটা সংকট তৈরি করবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।