‘নিরাপদ ইন্টারনেট দিবস’ উদযাপন উপলক্ষে ডিজিটাল বাংলাদেশের কানেক্টিভিটি পার্টনার গ্রামীণফোন আজ রাজধানীর জিপি হাউজে এক ব্যতিক্রমধর্মী অংশগ্রহণমূলক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানে গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান ও জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক ইন্টারনেট এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। অনুষ্ঠানে তাদের সাথে নানা বয়সের শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
এই অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য ছিলো শিশুদের ইন্টারনেট দুনিয়ার বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে ধারণা দেয়া এবং তাদের জীবনে এর সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারির কারণে মানুষকে বাসার ভেতরে থাকতে হয়েছে। ফলে, বাসার ভেতরে বসেই সবাইকে বাইরের চারপাশ সম্পর্কে জানতে হয়েছে। শিশুদেরও এ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে এবং বাসায় বসেই অনলাইন টুল ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের শিক্ষাগ্রহণ ও বিনোদন লাভ করতে হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে অপরাধীদের অনলাইন মাধ্যমে শিশুদের ক্ষতিসাধনের আংশকা রয়েছে। তাদের ফাঁদে পড়ে অনেক সময় শিশুরা পাসওয়ার্ড ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয় এবং যা পরবর্তীতে অপরাধীরা অসৎ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ব্যবহার করে।
অনুষ্ঠানে শিশুরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলে। যার মধ্যে ছিলো: সোশ্যাল মিডিয়ায় কতটুকু শেয়ার করা যাবে, ব্যক্তিগত কনটেন্টের সুরক্ষা কীভাবে বজায় রাখা যাবে, অপরিচিতদের সাথে কীভাবে যোগাযোগ করতে হবে, ডাটা বেহাত হলে কার সাথে যোগাযোগ করতে হবে, ভুল তথ্য কীভাবে চিহ্নিত করা যাবে, যে কোন সংবাদের নির্ভুলতা কীভাবে নিরূপণ করা যাবে এবং কারো সাথে আলোচনার সময় কোন কোন বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।
ইন্টারনেট সুরক্ষার বিষয়ে এখন পর্যন্ত গ্রামীণফোন কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে? শিশুদের এমন প্রশ্নের জবাবে গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান বলেন, “আমরা দেখেছি, কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন কানেক্টিভিটির মাধ্যমে ডিজিটালিজেশন কিভাবে আমাদের নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তা করেছে। এখন আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আগের চেয়ে বেশি সময় ব্যয় করছে; এজন্য একইসাথে তারা নানা ঝুঁকির মুখে পড়ছে। নিরাপদ ইন্টারনেট দিবস আবারও গ্রামীণফোনকে এর পার্টনারদের সাথে নিয়ে এ বিষয়ে এগিয়ে আসার বিষয়ে, পাশাপাশি সমাজের উন্নয়নে অংশীদারিত্ব করা, আমাদের শিশুদের উদ্বেগের বিষয় চিহ্নিত করা এবং তাদের জন্য নিরাপদ অনলাইন দুনিয়া তৈরির বিষয়ে সচেতন করেছে।’
ইন্টারনেটে কোনো ধরণের অপ্রত্যাশিত বিষয়ের মুখোমুখি বা বুলিংয়ের শিকার হলে সে বিষয়টি নিয়ে বাবা-মায়ের সাথে শেয়ার করার পরামর্শ দেন তিনি। অভিভাবকদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরির বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে শিশুদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘একটি বিষয় তোমাদের মনে রাখতে হবে যে, তোমরা একা নও। তোমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সবাই তোমাদের পাশে আছি। অন্যান্য বিভিন্ন সমস্যার মতো ইন্টারনেটে কোন সমস্যার মুখোমুখি হলে তোমার বন্ধু বা পরিবারের সাথে বিষয়টি শেয়ার করতে দ্বিধাবোধ করবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘সবার জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে তোমাদের এ ব্যাপারে কথা বলতে হবে।’
জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক বলেন, ‘পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো ও বিশ্বস্ত বন্ধু হলো বাবা-মা। তারা সবসময় তোমাদের ভালো চায়। ইন্টারনেটে কোনো প্রতিকূলতার মুখোমুখি হলে বাবা-মা’কে বলবে। তারাই সবচেয়ে বেশি তোমাদের ভালো চায়।’
অনুষ্ঠানে গ্রামীণফোনের চিফ কর্পরোট অ্যাফেয়ার্স অফিসার ওলে বিয়র্ণ স্লাস্টেন, স্ট্রাটেজিক প্রজেক্ট এ্যান্ড পার্টনারশীপ রাসনা হাসান, প্রধান যোগাযোগ কর্মকর্তা খায়রুল বাশার উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও, গতবছর, গ্রামীণফোন ও টেলিনর বাংলা ভাষার লার্নিং রিসোর্স প্ল্যাটফর্ম ‘ডিজিওয়ার্ল্ড বাংলা’(https://gpsocial.co/digiworld), চালু করে। এ প্ল্যাটফর্মটি ৫ থেকে ১৬ বছরের শিশুদের নিজের ভাষায় সঠিকভাবে অনলাইন মাধ্যম বুঝতে এবং নিরাপদে অনলাইন মাধ্যম ব্যবহারে সহায়তা করছে। টেলিনর গ্রুপ, গ্রামীণফোন ও ইন্টারন্যাশনাল এক্সপার্ট প্যারেন্ট জোন শিশু, পরিবার এবং স্কুলগুলোর জন্য গ্লোবাল অনলাইন কারিকুলাম তৈরি করেছে এবং ইউনিসেফের সাথে পার্টনারশিপে এর বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে।
নিরাপদ ইন্টারনেট দুনিয়া তৈরির ধারাবাহিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে মা-বাবা, অভিভাবক ও শিক্ষকদের এ বিষয়ে সচেতন করতে ইউনিসেফ ও টেলিনরের সাথে অংশীদারিত্বে ২০১৫ সালে প্যারেন্টস গাইড তৈরি করে গ্রামীণফোন। ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহার ও এ সম্পর্কে সচেতন করার লক্ষ্যে গ্রামীণফোন ১০ লাখেরও বেশি শিশু ও দুই লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি শিক্ষককে প্রশিক্ষণ প্রদান করে এবং সম্মিলিতভাবে বিভিন্ন ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি ২ কোটিরও বেশি মানুষের মাঝে অনলাইন সুরক্ষা নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করেছে।