গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ স্বপ্ন বাস্তবায়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ কাজ করছে নিরলসভাবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক, এমপি এর প্রত্যক্ষ নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে আইসিটি বিভাগের বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ক্ষেত্রে দেশকে অগ্রগামী করে তুলতে ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে আসছে।
বাংলাদেশের দুর্গম স্থানে ইন্টারনেটের সুবিধা পৌঁছাতে বিসিসি গ্রহণ করেছে “কানেক্টেড বাংলাদেশ” নামক একটি প্রকল্প। অক্টোবর ২০১৮ সাল থেকে শুরু হওয়া এই প্রকল্পটি চলবে ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত যেখানে প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যায়ের পরিমাণ ৫০৪৪৩.৩১ লক্ষ টাকা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের দুর্গম ৬১৭টি ইউনিয়নে ইন্টারনেটের সুবিধা নিশ্চিতকরণের কার্যক্রম গ্রহণ করেছে বিসিসি।
প্রকল্পটির আওতায় টেলিযোগাযোগ সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় উচ্চ নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হবে। একইসাথে সারাদেশে ব্যাকবোন নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের ইন্টারঅপারেবিলিটি, এফিশিয়েন্সি, ট্রান্সপারেন্সি, ইফেক্টিভনেস এবং কোয়ালিটি অফ সার্ভিসেস (এসওএস) বৃদ্ধি করার পাশাপাশি জাতীয় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বিসিসির কানেক্টেড বাংলাদেশ প্রকল্প।
আমাদের আধুনিক জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞানের প্রভাব আজ অতিমাত্রায় স্পষ্ট। বর্তমানে ব্যাপকভাবে বহুমুখী কাজে ইন্টারনেট ব্যবহৃত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, মানবজীবনে ইন্টারনেট নিয়ে এসেছে আমূল পরিবর্তন। এছাড়া, বিশ্ব জুড়ে সকল ধরণের যোগাযোগ ব্যবস্থার একটি অন্যতম যুগান্তকারী মাধ্যম হল ইন্টারনেট। ইন্টারনেটের সংযোগ দেশের প্রতিটি অঞ্চলে পৌঁছাতে বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে নানাবিধ পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। এরই আলোকে টেলিযোগাযোগ সুবিধা বঞ্চিত প্রত্যন্ত অঞ্চলে নেটওয়ার্ক কানেক্টিভিটি স্থাপনে কাজ শুরু করেছে বিসিসি’র কানেক্টেড বাংলাদেশ প্রকল্প। যার ফলে ঐ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ ইন্টারনেটের সুফল পূর্ণাঙ্গভাবে ভোগ করতে পারবেন বলে মনে করছেন বিসিসি নির্বাহী পরিচালক ও সরকারের অতিরিক্ত সচিব ড. মোঃ আব্দুল মান্নান, পিএএ।
টেলিযোগাযোগ সুবিধা বঞ্চিত প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরকারের বিভিন্ন ধরণের সেবা প্রদান করা, ৬১৭টি ইউনিয়নের সকল স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, গ্রোথ সেন্টার, টেলিকম অপারেটর ইত্যাদি স্থানে নেটওয়ার্ক সংযোগ প্রদান করাসহ ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার এর নেটওয়ার্ক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা এই প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য। এছাড়া, উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে ই-কমার্স, ই-সার্ভিস, টেলিমেডিসিন এর প্রচার ও প্রসার করার পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা ও নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করাও এই প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য। এর ফলে দেশের নদীবহুল, অতি দুর্গম, পাহাড়ী এবং প্রত্যন্ত ৬১৭ টি ইউনিয়নে ডিজিটাল বিভাজন বৈষম্য দূর হবে বলে মনে করছেন “কানেক্টেড বাংলাদেশ” প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও উপ-সচিব জগদীশ চন্দ্র সরকার।
টেলিযোগাযোগ সুবিধা বিস্তৃত করার লক্ষ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) কর্তৃক পরিচালিত “সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল (এসওফ)” এর অর্থায়নে কানেক্টেড বাংলাদেশ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় ইউনিয়ন পর্যায়ে ৮১০৬ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল স্থাপন, ইউনিয়নে ব্যাকবোন রাউটার ও ডিসি পাওয়ার সিস্টেম স্থাপন এবং পপরুম সংস্কার কাজ চলমান আছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ক্যাবল শিল্প লিমিটেড, খুলনা হতে ৮১০৬ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল ও ৫ হাজার কিলোমিটার ডাক্ট পাইপ ক্রয় করা হয়েছে। জানুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত প্রকল্পের অভ্যন্তরীণ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা যায় যে, পপরুম রেনোভেশন এর কার্যক্রম প্রায় ৫১.২৮% এবং অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল স্থাপনের কার্যক্রম প্রায় ৪০.২২% সম্পন্ন হয়েছে। প্রায় ৬২ জন দক্ষ জনবলের সমন্বয়ে গঠিত একটি শক্তিশালী টিম এই প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে। প্রকল্প পরিচালক জানান যে, ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় দুর্গম ও পার্বত্য অঞ্চল বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি এই ৩টি এলাকার ৫৯টি ইউনিয়নে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল স্থাপনের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, দুর্গম এলাকার পাশাপাশি সাগরের তলদেশ দিয়ে অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে শীঘ্রই সন্দ্বীপের ১৩ টি ইউনিয়নকে ব্রডব্যান্ড কানেক্টিভিটির আওতায় আনা হবে।