বাংলাদেশ সীমান্তে মিয়ানমারের টেলিযোগাযোগ কোম্পানির নেটওয়ার্ক বন্ধ করতে না পারলে ব্যর্থতার দায় নিয়ে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ও বিটিআরসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবি করেছেন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ। একইসঙ্গে রোহিঙ্গাদের মোবাইল ফোন সিম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত বাতিল করে দ্রুত তাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি।
বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন জাতীয় সংগ্রাম কমিটি কর্তৃক আয়োজিত “রোহিঙ্গাদের সহজ শর্তে ও সুলভ মূল্যে মোবাইল সিম প্রদানের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে” মানববন্ধন ও সমাবেশ থেকে দাবি জানান তিনি। মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে মূল বক্তা হিসেবে মহিউদ্দিন বলেন, দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবত শরণার্থী হিসেবে আশ্রিত মায়ানমানের রোহিঙ্গা নাগরিকরা বাংলাদেশের নেটওয়ার্ক ব্যবহারের পাশাপাশি মায়ানমারের এমটিএমসির টেলিকম নেটওয়ার্কও ব্যবহার করে আসছে যা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ এবং অসাংবিধানিক। আমরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে মাঝে মাঝে বিটিআরসির কিছু কর্মকর্তাদের পরিদর্শনে পাঠানো হয়। কিন্তু বাস্তবে এখন পর্যন্ত কোন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ২০১৫ সালে সরকার দেশে যখন বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালু করে তখন সেই নীতিমালায় বলা হয় বাংলাদেশের কোন বৈধ নাগরিক যার বয়স ১৮ বছর সেই ব্যক্তি জাতীয় পরিচয় পত্র বা তার পাসপোর্ট দিয়ে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন করতে পারবে। অথচ মায়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকরা আমাদের দেশের নাগরিকদের নামে ব্যবহৃত সিম অবৈধভাবে ব্যবহারের পাশাপাশি মায়ানমারের টেলিকম নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছে দেদারসে। এর মাধ্যমে মায়ানমারে টেলিকম প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ও ব্যবসা পরিচালনা করছে। টেলিকম সেবা ও মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা মায়ানমারে চলে গেছে। কার্যত বর্তমান টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী এবং বিটিআরসি চেয়ারম্যান প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে। সেই ব্যর্থতার দায়ভার ঘোঁচাতে তারা রোহিঙ্গা নাগরিকদের বৈধ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পাঁচটি করে সিম দেয়ার পাঁয়তারা তৈরি করেছে। এর মাধ্যমে হয়তো অপারেটরদের মোটা দাগে কিছু ব্যবসা পরিচালনা হবে। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরে অরাজকতা, সন্ত্রাস মাদক ও এইডস এর মত মহামারী ব্যাপকতা সৃষ্টি করতে পারে। এর সুষ্ঠু সমাধানের জন্য আমাদের মতামত হচ্ছে সবার আগে অবৈধ নেটওয়ার্ক বন্ধ ও সকল অবৈধ সিম জব্দ করা। দ্বিতীয়ত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাথে বসে স্থানীয় প্রতিনিধি এবং বিশেষজ্ঞদের মতামতের প্রেক্ষিতেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
সভাপতির বক্তব্যে আতাউল্লাহ খান বলেন, আমরা বাংলাদেশী নাগরিকরা আজ মহা বিপদে। আমাদের আশ্রয় দেওয়ার মানবিক দিক বিবেচনায় মানবতার প্রধানমন্ত্রী যে মানবতা দেখিয়েছেন তা যে আমাদের জন্য এত বড় কাল হয়ে দাঁড়াবে তা বুঝতে পারিনি। আমরা দেখেছি মহিবুল্লাহ এই অবৈধ মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে কিভাবে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গাদের নিয়ে সমাবেশ করেছিল। এই রোহিঙ্গারা অবৈধ নেটওয়ার্ক সিম ব্যবহার করে মাদক পাচার, অর্থ পাচার, চোরা চালান এবং অসামাজিক কার্যে লিপ্ত হয়ে হাজারের মতো এইডস রোগী আজ শুধু কক্সবাজার জেলা নয় সারা বাংলাদেশের জন্য আতংক তৈরি করেছে । টেলি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মানবতার আড়ালে ব্যবসায়ীদের সুবিধা করে দেওয়ার যে পায়তারা তা আমরা বুঝি। কোনভাবেই রোহিঙ্গাদের বৈধভাবে পাঁচটি করে সিম প্রদান করা যাবে না। তারমানে আমরা অমানবিক এ কথা বলা যাবে না, আমরা তাদের আত্মীয়-স্বজনের সাথে যোগাযোগ রক্ষার্থে সাবেক ডাক ও টেলিযোগ মন্ত্রী যেভাবে টেলিফোন বুথ তৈরি করে সেখানে গিয়ে কথা বলার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন বিনামূল্যে সেটি কেন বন্ধ হল? সকল সিম উদ্ধার করে সঠিক মালিকদের কাছে শেষ সিম বুঝিয়ে দিতে হবে সেই সাথে টেলিফোন বুথের মাধ্যমে তাদের যোগাযোগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। রোহিঙ্গাদের অবৈধ কারবারের ফলে স্থানীয় জনগোষ্ঠী যে সকল মামলা হামলার শিকার হয়েছে তার যথাযথ অন্ত করে প্রয়োজনে ব্যবস্থাপনা করতে হবে।
উখিয়া পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সংগঠনের সদস্য সচিব এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমরা যারা স্থানীয় অধিবাসী তারা আজ মহা বিপদে। রোহিঙ্গারা মায়ানমারের নেটওয়ার্ক এবং বাংলাদেশের নেটওয়ার্ক উভয় ব্যবহার করছে, এমনিতেই তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ তাদের বর্তমানে ব্যবহৃত সকল সিম জব্দ না করে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে। তারা বলছে বৈধভাবে দিলে অবৈধ ব্যবহার বন্ধ হবে এটা হাস্যকর কথা। সরকারের উচিত হবে তাদেরকে অবৈধ সকল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়া। তা না করে নতুন করে বৈধ ভাবে সিম দিয়ে সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী মূলক। আমরা এ সিদ্ধান্ত মানিনা।
রোহিঙ্গা এসপি হিসেবে পরিচিত সাবেক পুলিশের ডিআইজি বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বক্তব্যে বলেন, আমি রোহিঙ্গাদের নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত কাজ করে আসতেছি সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে চাই রোহিঙ্গাদের নতুন করে বৈধ ভাবে চিন্তা সিদ্ধান্ত একদিকে যেমন সংবিধান পরিপন্থী তেমনিভাবে ভুল সিদ্ধান্ত।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন লেবার পার্টির মহাসচিব আব্দুল্লাহ মামুন, সাধারণ নাগরিক সমাজের কো অর্ডিনেটর শেখ ফরিদ, উখিয়ার স্থানীয় সাংবাদিক জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্নস্থরের নাগরিকবৃন্দ।