২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে চলমান ছাত্র ও জনতার আন্দোলনের সময় বাংলাদেশে পরিকল্পিতভাবে ইন্টারনেট সেবা বন্ধের অভিযোগে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ISPAB)-এর সভাপতি জনাব ইমদাদুল হক এবং তার নির্বাহী কমিটির বিরুদ্ধে কঠোর অভিযোগ তুলেছেন একাধিক আইএসপি মালিক ও সচেতন প্রযুক্তি উদ্যোক্তারা। তারা দাবি করছেন— বর্তমান কমিটি সরকারের ইচ্ছানুযায়ী ইন্টারনেট বন্ধ করে জনগণের মৌলিক অধিকার, তথ্যপ্রবাহ ও গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
অভিযোগে বলা হয়, ইন্টারনেট শাটডাউনের সুযোগ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকার সমর্থিত গোষ্ঠী ভয়াবহ দমন-পীড়ন, গুম ও নির্যাতন চালায়, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। এছাড়া, ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ঘটনাস্থলের বাস্তব তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি, ফলে দমন-পীড়নের তথ্য ধামাচাপা দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।
অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষতির চিত্র তুলে ধরে অভিযোগকারীরা জানান:
ইন্টারনেট বন্ধের ফলে ব্যাংকিং, ই-কমার্স, অনলাইন ট্রানজেকশন ও স্বাস্থ্য খাত মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।
শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাস ও রিসোর্স থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহ ও প্রচারে বাধাগ্রস্ত হন।
ISPAB সভাপতি ও নির্বাহী কমিটির ভূমিকা নিয়ে অভিযোগে বলা হয়:
তারা সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে ইন্টারনেট শাটডাউনের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেন।
জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করতে “ডেটা সেন্টারে আগুন লাগা” জাতীয় ভিত্তিহীন ব্যাখ্যা দেওয়া হয়।
নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ রয়েছে। সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে একাধিকবার নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়ে নিজের অনুগতদের নির্বাহী কমিটিতে বসিয়েছেন বলে অভিযোগ।
নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বেচ্ছাচারিতা নিয়েও অভিযোগ রয়েছে।
মনোনয়ন ফি একাধিক ধাপে বাড়িয়ে সাধারণ সদস্যদের অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। যেমন— ২০২১ সালে মনোনয়ন ফি ছিল ৩০,০০০ টাকা, যা ২০২৫ সালের ঘোষিত তফসিলে একলাফে ১,০০,০০০ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়া, ২০২৪ সালের ৬ অক্টোবর একটি ইজিএম এর মাধ্যমে গঠনতন্ত্র সংশোধন করা হলেও নতুন নির্বাচন তফসিলে পুরনো নিয়মই অনুসরণ করা হচ্ছে।
অভিযোগকারীদের দাবি:
১. ISPAB-এর বর্তমান সভাপতি ও নির্বাহী কমিটিকে অবিলম্বে অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ
২. আর্থিক অনিয়ম, সদস্য ফি ব্যবহারে স্বচ্ছতার অভাব ও ফ্ল্যাট ক্রয়ে দুর্নীতির তদন্ত
৩. নতুন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন
৪. মনোনয়ন ফি যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনা
৫. ইন্টারনেট শাটডাউনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা
৬. ক্ষতিগ্রস্ত জনগণ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষতিপূরণ প্রদান
তাদের দাবি, ISPAB-এর বর্তমান নেতৃত্ব গণতান্ত্রিক চর্চা, সদস্যদের অধিকার এবং স্বচ্ছ নির্বাচন ব্যবস্থাকে ভূলুণ্ঠিত করেছে। একটি শক্তিশালী ও বিশ্বাসযোগ্য আইএসপি সংগঠন গঠনের লক্ষ্যে নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের দাবি।