রাজনৈতিক অস্থিরতা, লাগামহীন মূল্যস্ফীতি আর টেলিকম খাতের ‘বিশ্বসেরা’ করের বোঝায় ধুঁকছে দেশের মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো। এই ত্রিমুখী চাপের মাঝে গত ১০ মাসে হারিয়ে গেছে প্রায় এক কোটি মোবাইল গ্রাহক। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলালিংক—একা হারিয়েছে ৬২ লাখ ৫০ হাজার গ্রাহক।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সালের জুন থেকে ২০২৫ সালের মার্চ—এই ১০ মাসে মোবাইল ফোন গ্রাহক সংখ্যা কমেছে ৯৮ লাখ ৬০ হাজার।
কে কত হারিয়েছে?
অপারেটর | ২০২৪ জুন (গ্রাহক) | ২০২৫ মার্চ (গ্রাহক) | হ্রাসকৃত সংখ্যা |
---|---|---|---|
গ্রামীণফোন | ৮ কোটি ৫৫ লাখ ৩০ হাজার | ৮ কোটি ৪০ লাখ ৯০ হাজার | ১৪ লাখ ৪৪ হাজার |
রবি | ৫ কোটি ৯৫ লাখ ১০ হাজার | ৫ কোটি ৬৩ লাখ ৬০ হাজার | ৩১ লাখ ৫০ হাজার |
বাংলালিংক | ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৮০ হাজার | ৩ কোটি ৮২ লাখ ৩০ হাজার | ৬২ লাখ ৫০ হাজার |
টেলিটক | ৬৫ লাখ ৬০ হাজার | ৬৫ লাখ ৪০ হাজার | ২০ হাজার |
তিনি আরও জানান, আঞ্চলিক বাজারের তুলনায় বাংলাদেশে স্পেকট্রাম খরচ অস্বাভাবিকভাবে বেশি, যা অপারেটরদের জন্য টেকসই ব্যবসায় বাধা তৈরি করছে।
রবি আজিয়াটার করপোরেট ও রেগুলেটরি প্রধান সাহেদ আলম বলেন, ‘সিম কর ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করায় মানুষ নতুন সিম কেনা থেকে বিরত থাকছে। মূল্যস্ফীতির চাপে অনেকেই একাধিক সিম রাখাও বন্ধ করে দিচ্ছেন।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অপারেটর কর্মকর্তা জানান, “সরকারবিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ এখন আত্মগোপনে। বহু নেতাকর্মীর সিম বন্ধ। যেসব নম্বর দিয়ে দলীয় কাজ চালানো হতো, সেগুলোও এখন নিষ্ক্রিয়। রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যবহৃত হাজারো বিকল্প সিম হঠাৎ করে নেটওয়ার্ক থেকে হারিয়ে গেছে।”
গ্রাহক হারানোর ধারাবাহিকতা: মাসভিত্তিক বিশ্লেষণ
গ্রামীণফোনের ক্ষেত্রে প্রতি মাসেই একটু একটু করে কমেছে গ্রাহক। জুনে ৮ কোটি ৫৫ লাখ থেকে মার্চে নেমেছে ৮ কোটি ৪০ লাখে।
রবি হারিয়েছে প্রায় ৩২ লাখ, আর বাংলালিংক—প্রতিটি মাসেই সবচেয়ে বড় পতনের সাক্ষী।
এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিটক তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকলেও সামান্য ২০ হাজার গ্রাহক হারিয়েছে।
টেলিকম বিশ্লেষক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক, সিম কর, স্পেকট্রাম ফি—সব মিলিয়ে গ্রাহক ও অপারেটর উভয়ের জন্যই পরিবেশ অনুকূল নয়। সরকারের উচিত অবিলম্বে টেলিকম খাতকে ডিজিটাল অর্থনীতির অংশ হিসেবে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় কর-ছাড় ও নীতিগত সহায়তা নিশ্চিত করা।’