স্ক্রিন টাইম শব্দ টা আমাদের কাছে খুব নতুন । তবে আজকাল কমবেশি স্ক্রিন টাইম শব্দটা বেশ শোনা যাচ্ছে৷ কি এই স্ক্রিন টাইম?
আজকের আর্টিকেলে স্ক্রিন টাইম কি এবং অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম আপনার স্বাস্থ্যের জন্য কেন ক্ষতিকারক হতে পারে সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
স্ক্রিম টাইম মূলত সেই সময় যেটুকু সময় আপনি বিভিন্ন ডিভাইস এর স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকবেন৷ হোক সেটা মোবাইল, কম্পিউটার ট্যাবলেট বা অনান্য আইসিটি ডিভাইস। তা মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর স্ক্রীন পর্যন্ত হতে পারে৷ দিনে ঠিক যতটুকু সময় আপনি বিভিন্ন ধরনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকেন তার সমষ্টিকে বলা হয় স্ক্রিন টাইম৷ তাহলে এবার নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন যে স্ক্রিন টাইম স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর । কিন্তু স্ক্রিন টাইম আমাদের সাথে কোন ধরনের ক্ষতি সাধন করে?
তা জানার আগে প্রথমে আপনাকে জানতে হবে আপনার পরিবারের কোনো সদস্য স্ক্রীন টাইমে অতিরিক্ত সময় অপচয় করে কিনা?
এটা জানার জন্য আপনাকে কিছু প্রশ্ন করতে হবে। এবং সে প্রশ্নের উত্তর গুলো আপনার নিজেরই জানা রয়েছে।
যেমন:
দিন কে দিন আপনার পরিবারের সদস্যরা অমনোযোগী হয়ে পড়ছে কিনা, খাবারের সময় তারা স্ক্রিন টাইম কাটাচ্ছে কিনা, শারীরিক কসরত করার অভ্যাস খুবই কম কিনা?
যদি আপনার সবগুলোর উত্তর হ্যাঁ হয় তাহলে আপনার পরিবারের সদস্যরা স্ক্রিন টাইম এর পেছনে বেশি সময় অপচয় করছে।
চলুন এখন জেনে নেওয়া যাক স্ক্রিন টাইম এর ফলে কোন ধরনের ক্ষতি সাধিত হচ্ছে:
১.স্থুলতা বৃদ্ধি পায়
জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের একটি তথ্য মতে ডিজিটাল প্রযুক্তির কারণে বিভিন্ন ধরনের স্ক্রীন এর পেছনে শিশুরা বেশি সময় অপচয় করছে। যার ফলে তাদের মাঠে খেলাধুলা অথবা দৌড়ানোর আগ্রহ ধীরে ধীরে কমে আসছে। শুধু শিশুরা নয় তরুণদের মাঝেও শারীরিক কসরত বা খেলাধুলা করার আগ্রহ ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে । যা তাদের স্থূলতার কারণ।
২.দৃষ্টিশক্তি হ্রাস
শিশুদের দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পাচ্ছে । জাতিসংঘের ইউনিসেফ জানিয়েছে বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করার ফলে শিশুদের দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে শুরু করেছে৷ তারা মায়োফিও নামক এক ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। যার ফলে শিশুরা বেশি দূরের জিনিস ঝাপসা দেখা ।
৩.মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশে ব্যাঘাত :
যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে দুই ঘন্টা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে ৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশের ব্যাঘাত ঘটে। প্রায় সাড়ে চার হাজার শিশুদের ওপর এক ধরনের পরীক্ষা করা হয় অতঃপর সে পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে এটি৷ আর তাই ১৮ মাসের কম বয়সী শিশুদের সকল ধরনের স্ক্রিন থেকে দূরে রাখতে হবে।
৪.চিন্তা করার ক্ষমতা হ্রাস:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান এর একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে অতিরিক্ত সময় স্ক্রিন টাইম কাটালে যেকোনো মানুষের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। ফলে একজন ব্যক্তি বেশি কিছু চিন্তা করতে পারে না। এবং চিন্তা করতে গেলে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে । সহজে হাল ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা বাড়ে।
স্ক্রিন টাইম একদমই কাটানো যাবে না ব্যাপারটা ঠিক তেমন নয়। কারণ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগে আইসিটি যন্ত্রাংশগুলো আমাদের দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত হয়৷ সুতরাং অতিরিক্ত সময় স্ক্রিন টাইমে না কাটানোর জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ রয়েছে।
প্রথমত,
আপনার জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করুন৷ এবং সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য সামনে এগিয়ে যান। জীবনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিভিন্ন ধরনের বাধা বিপত্তি সামনে আসবে । সে বাধা-বিপত্তির একটি লিস্ট করে ফেলুন। অতঃপর ধীরে ধীরে সেগুলো থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করুন।
অবসর সময় না কাটালে কাজে বেগ পাওয়া যায় না৷ তবে অবসর সময় স্ক্রিন টাইম না কাটিয়ে বাহ্যিকভাবে বিভিন্ন সৃজনশীল কাজ করার অভ্যাস গড়ে তুলুন । যেমন : পরিবারের সাথে সময় কাটান, বই পড়ুন, বাগানে সময় কাটান ইত্যাদি৷
সবকিছু সীমিত আকারে ব্যবহার করা ভালো৷ যদি মাত্রা অতিরিক্ত হয়ে যায় তবে কষ্টটা আমাদেরই। সুতরাং সবকিছু সীমিত পরিসরে নিয়ম মেনে করার অভ্যাস গড়ে তুলুন৷ তথ্য সূত্র : বিবিসি নিউজ