কোভিড-১৯ এর প্রভাবে দেশের স্টার্টআপ ব্যবসাসমূহ মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন। স্থানীয় বাজারে বিক্রয় ও সেবা গ্রহণ বন্ধ থাকার কারণে দেশের প্রায় ৩০০ স্টার্টআপের প্রায় ৪৫০ কোটি টাকার ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছে। এই স্টার্টআপগুলোতে প্রত্যক্ষভাবে কর্মরত প্রায় দেড় লাখ কর্মীর চাকরির হুমকির সম্মুখীন।
এছাড়াও স্টার্টআপগুলোর সাথে পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় সাত লাখ সেবা প্রদানকারী তাদের সেবা প্রদান করতে পারছে না। অনেক স্টার্টআপের রপ্তানি আয় আছে যা অন্ততপক্ষে ৮০ শতাংশ কমে যাবার আশংকা দেখা দিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল এন্ড প্রাইভেট ইকুইটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ভিসিপিয়াব) একটি জরুরি সভার আয়োজন করে যেখানে ভিসিপিয়াব এর সদস্য ও পোর্টফোলিও কোম্পানিগুলোকে রক্ষার্থে নিম্নোক্ত ৬টি প্রস্তাব সরকারের কাছে উত্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়।
০১. আগামী ৬ মাস (এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর) কর্মীদের বেতনের একটি অংশ সরকারি অনুদান হিসাবে দেয়া।
০২. আগামী ৬ মাস (এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর) আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন স্টার্টআপগুলোর অফিস ভাড়া সরকারি অনুদান হিসাবে দেয়া।
০৩. সরকার যেহেতু এ ধরণের দূর্যোগকালীন সময়ের জন্য অনলাইন ক্লাশরুম, ডিজিটাল শিক্ষণের বিষয়বস্তু, স্বাস্থ্য বিষয়ক অনলাইন কন্টেন্ট, বিনোদনমূলক কন্টেন্ট ইত্যাদি তৈরির কথা ভাবছে, এই কাজগুলো দেশীয় স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে করা।
০৪. সরকারি কাজে স্টার্টআপ কোম্পানিগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া যাতে স্টার্টআপগুলোর ব্যবসা সচল থাকে এবং তাদের স্থানীয় বাজার সম্প্রসারিত হয়।
০৫. ভিসিপিয়াব এর সদস্য ও পোর্টফোলিও কোম্পানিগুলোর জন্য নূন্যতম সুদে (২%) জামানতবিহীন ঋণ প্রদান যার মাধ্যমে কোম্পানিগুলো তাদের ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের ঘাটতি পূরণ করতে পারে।
০৬. সরকারের স্টার্টআপ বাংলাদেশ এর আইডিয়া প্রকল্পের তহবিল থেকে অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড কোম্পানিগুলোর তহবিলে অর্থ (ফান্ড অফ ফান্ড হিসাবে) প্রদান।
ভিসিপিয়াব সভাপতি শামীম আহসান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশের যে ভিশন দেন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা যে ভিশন বাস্তবায়নের পরিকল্পনা প্রদান করেন, সেই ভিশনে অনুপ্রাণিত হয়ে হাজার হাজার তরুণ উদ্যোক্তা তাদের স্বল্প পুঁজি, বাবা-মা এর পেনশনের টাকা এবং কিছু এঞ্জেল বিনিয়োগকারী ও ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টের বিনিয়োগকৃত অর্থ নিয়ে তাদের উদ্ভাবনী চিন্তাকে ব্যবসায় রূপ দেবার মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশের অংশ হবার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে। গত ১২ বছরে এই উদ্যোক্তাদের রক্ত, ঘাম এবং ত্যাগের ফলে আমাদের দেশে অনেকগুলো উদ্ভাবনী স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু আজ এই কভিড-১৯ মহামারীর প্রকম্পনে আমাদের তিলে তিলে গড়ে তোলা স্টার্টআপ ও ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ইকোসিস্টেমটি নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে যা সরকারের প্রণোদনা ও আশু পদক্ষেপ ছাড়া মুখ থুবড়ে পড়বে।’
ভিসিপিয়াব মহাসচিব শওকত হোসেন বলেন, ‘এই প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে ভিসিপিয়াব এর সদস্য ও পোর্টফোলিও কোম্পানিগুলোর আয় ও নগদ প্রবাহ অব্যাহত থাকবে এবং ব্যবসার উপর বড় ধরণের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। পরবর্তীতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ও প্রাইভেট ইক্যুটি ফার্মগুলো দেশ ও বিদেশ থেকে তহবিল সংগ্রহ করে স্টার্টআপদের অর্থায়ন বা পুনঃঅর্থায়নের মাধ্যমে সচল করে তুলতে পারবে।’