বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি দুই সেকেন্ডে কোথাও না কোথাও কারো জীবন বাঁচাতে রক্তের প্রয়োজন হয়। জরুরী প্রয়োজন ছাড়াও এমন লক্ষ লক্ষ রোগী আছেন যাদের বেঁচে থাকতে নিয়মিত নিরাপদ রক্তের উপর নির্ভর করতে হয়, যেমন- ক্যান্সার রোগী কিংবা থ্যালাসেমিয়ার মত বিভিন্ন ধরণের রক্তজনিত সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিরা।
বাংলাদেশে প্রায় ১০-১২ শতাংশ মানুষ থ্যালাসেমিয়ায় ভোগেন। প্রতিবছর প্রায় ১০ হাজার শিশুর এই রোগ ধরা পড়ে। কোভিড-১৯ মহামারীর সময়ে চলাচলের সীমাবদ্ধতার কারণে রক্তদান কর্মসূচী সীমিত হওয়ায় বিশ্বজুড়ে রক্তের সংকট দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশেও বেশিরভাগ ব্লাড ব্যাংকে গত মার্চের শেষ দিক থেকে রক্তের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
ব্লাডম্যান বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মোঃ শাহরিয়ার হাসান জিসান বলেন, “স্বেচ্ছায় রক্তদান সংকট বাংলাদেশে কোনো কল্পকথা নয় – নিরাপদ রক্ত পাওয়ার জন্য মানুষের লড়াই এখনও বিদ্যমান। ১৬ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার এই দেশে মূল চ্যালেঞ্জটি হলো রক্ত সন্ধানকারী এবং রক্তদাতার মধ্যে যোগাযোগের অভাব। এক্ষেত্রে ফেসবুক দুই পক্ষের সংযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। এটি ডেঙ্গু রোগীদের জন্য প্লাটিলেট দাতা এবং কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য প্লাজমা দাতাদের সন্ধান সহজ করে তুলেছে। আপনাদের নিকটস্থ ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তদানের মাধ্যমে রক্তের ঘাটতি দূর করতে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।”
দুই বছর আগে ফেসবুকে রক্তদান ফিচারটি চালু হওয়ার পর থেকে বিশ্বব্যাপী ৭০ মিলিয়নের বেশি মানুষ স্বেচ্ছাসেবী রক্তদাতা হিসেবে সাইন আপ করেছেন যার মধ্যে শুধুমাত্র বাংলাদেশ থেকেই রয়েছেন আট মিলিয়নের বেশি রক্তদাতা। রক্তদানের ফিচারটি ব্যবহারের মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবী রক্তদাতাদের সংখ্যা যে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে তা জানিয়েছেন ফেসবুকের স্থানীয় অংশীদাররাও। ব্লাডম্যান বাংলাদেশ এমন একটি উদাহরণ যারা জানিয়েছে ২০১৮ সাল থেকে এই টুলটি ব্যবহার করে রক্তদানকারীদের সংখ্যা ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেন, “ফেসবুকের রক্তদান ফিচারটি দেশজুড়ে বিস্তৃত স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদেরকে একত্রিত করার জন্য একটি প্রয়োজনীয় টুল। ঢাকার বাইরেও রক্তদানকারীদেরকে রক্তের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অবহিত করার অন্যতম দ্রুত ও সহজ উপায় এটি। স্বেচ্ছাসেবী রক্তদাতা পেলেই নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য রক্ত সরবরাহ নিশ্চিত করার সুযোগ তৈরি হয় এবং সংকটের মুহূর্তে রক্ত পাওয়ার প্রস্তুতি থাকে। আমি ফেসবুকে রক্তদাতা হওয়ার জন্য সাইন আপ বা কাউকে রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করতে সবাইকে উত্সাহ দেই যাতে প্রয়োজনে নিরাপদ রক্ত পাওয়া নিশ্চিত হয়।”
ফেসবুক এবং আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সাথে অংশীদারিত্বে বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল রক্তদান সংস্থা ব্লাডম্যান, ফেসবুকের রক্তদানের ফিচারটি কাজে লাগাতে আগ্রহী বাংলাদেশের ব্লাড ব্যাংকগুলোকে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ কর্মশালা দিচ্ছে। এই প্রশিক্ষণে ব্লাড ব্যাংকগুলো কীভাবে প্রয়োজনের মুহূর্তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে দাতাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে তা শেখাবে।
ফেসবুকের সাউথ এশিয়া ও সেন্ট্রাল এশিয়ার পলিসি প্রোগ্রামস প্রধান শেলি ঠাকরাল বলেন,“আমরা আমাদের প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সবাইকে একত্রিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। বিশ্বব্যাপী এই মহামারীটি আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে যে ফেসবুকে রক্তদাতা হওয়ার জন্য সাইন আপ করা কতটা জরুরী। যাতে আমরা আশেপাশের মানুষদের রক্তের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অবগত থাকি, রক্তদানের নিরাপদ উপায়গুলো সম্পর্কে জানি এবং অন্যকে রক্ত দিতে উদ্বুদ্ধ করতে পারি।”
ফেসবুকে রক্তদাতা হিসেবে নিবন্ধন করতে এখানে ক্লিক করুন: http://facebook.com/donateblood
কীভাবে ফেসবুক রক্তদানের ফিচারটি কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে হয় সে সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্য ভিজিট করুন- https://socialgood.fb.com/health/blood-donations/