বাংলাদেশে মুঠোফোন ব্যবহারকারী ৪১ শতাংশের মুঠোয় আছে স্মার্টফোন। এ হার ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এমনকি নেপালের চেয়েও কম। আর বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকার কারণ স্মার্টফোনে উচ্চ কর।
মোবাইল ফোন অপারেটরদের বৈশ্বিক সংগঠন জিএসএমএর এক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। ‘মোবাইলনির্ভর ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি’ শীর্ষক এ প্রতিবেদন আজ মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বাংলাদেশে মুঠোফোন ব্যবহারের চিত্র ও দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবার নানা দিক উঠে আসে।
দেশে মোবাইল সংযোগের সংখ্যা ১৭ কোটির বেশি। এর মধ্যে ইউনিক ইউজার ৫৪ শতাংশ। ইউনিক ইউজারের ক্ষেত্রে এক ব্যক্তির একাধিক সিম থাকলেও তাঁকে একজন ধরে হিসাব করা হয়।
জিএসএমএর প্রতিবেদন বলছে, ভারতে ৬৯, পাকিস্তানে ৫১, নেপালে ৫৩ ও শ্রীলঙ্কায় ৬০ শতাংশ মুঠোফোন ব্যবহারকারীর হাতে স্মার্টফোন রয়েছে। আর বাংলাদেশে ৫৯ শতাংশ মানুষ এখনো ফিচার ফোন ব্যবহার করছে।
অথচ দেশে দ্রুতগতির চতুর্থ প্রজন্মের ইন্টারনেট সেবার (ফোর-জি) আওতা বেড়েছে। জিএসএমএর প্রতিবেদন বলছে, দেশের ২০২০ সাল শেষে দেশের ৯৫ শতাংশ এলাকা ফোর-জির আওতায় এসেছে, যা ২০১৮ সালেও ৭৯ শতাংশ ছিল। ভারতে ৯৯ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ৯৩, পাকিস্তানে ৮০ ও নেপালে ৭৫ শতাংশ এলাকা এখন ফোর-জির আওতায়।
ফোর-জি নেটওয়ার্কের আওতার দিক দিয়ে অবস্থান ভারতের ঠিক পরে হলেও বাংলাদেশের মুঠোফোন ব্যবহারকারীদের ৪৭ শতাংশ টু-জি, ২৫ শতাংশ থ্রি-জি ও ২৮ শতাংশ ফোর-জি ব্যবহার করেন। থ্রি-জি ও ফোর-জি ব্যবহারে এগিয়ে রয়েছে ভারত। দেশটিতে ৬৮ শতাংশ মুঠোফোন ব্যবহারকারী দ্রুতগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, যার মধ্যে ৬৩ শতাংশই ফোর-জি। পাকিস্তানে ৩৫, নেপালে ১৭ ও শ্রীলঙ্কায় ১৮ শতাংশ মানুষ ফোর-জি ব্যবহার করেন। বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেট সেবার আওতায় থাকা দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না।
জিএসএমএর প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে একটি মুঠোফোনের মালিক হতে যে কর দিতে হয়, তা ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে অনেক বেশি। যেমন বাংলাদেশে টোটাল কস্ট অব মোবাইল ওনারশিপে (টিসিএমও) করহার ৩৫ শতাংশ, ভারতে তা ২৫ ও পাকিস্তানে ২৩ শতাংশ। টিসিএমও হিসাব করা হয়েছে মোবাইল সেট, সিম ও এক গিগাবাইট ডেটার দাম ধরে।
জিএসএমএ বলছে, মোবাইল সেট কেনার ক্ষেত্রে কর একটি অন্যতম বড় অংশ। বাংলাদেশে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাটের পাশাপাশি ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক রয়েছে। এর পাশাপাশি সিমের ওপর ২০০ টাকা কর রয়েছে। এ ধরনের কর ইন্টারনেট ব্যবহার উপযোগী মোবাইল সেটের দাম বাড়িয়ে দেয়।
বাংলাদেশে জিএসএমএর প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয় ভার্চ্যুয়াল এক আলোচনা সভায়। এটি আয়োজন করে জিএসএমএ ও বাংলাদেশের মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব। এতে টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, বিটিআরসির মহাপরিচালক (সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ, এটুআই প্রকল্পের নীতি পরামর্শক আনির চৌধুরী, রবি আজিয়াটার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, গ্রামীণফোনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী জেন বেকার, টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহাবুদ্দিন বক্তব্য দেন।
অ্যামটব জানায়, অনুষ্ঠানে বক্তারা বাংলাদেশে মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার বাড়াতে সরকারের কাছে নীতিসহায়তা চান। তাঁরা বলেন, মানুষ বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করলে পরোক্ষভাবে তা অর্থনীতির ওপর বড় প্রভাব ফেলবে। মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি কতটা জরুরি, তা করোনাকালই দেখিয়ে দিয়েছে।