ই-কমার্সের জন্য নতুন আইনের দরকার হবে না বলে জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ। আজ সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক শেষে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ই-কমার্স খাতের সুষ্ঠু পরিচালনায় সরকার আইন প্রণয়নের কথা ভাবছে, বিষয়টি নিয়ে একটি আইনি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এমন সময় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জানান, ই-কমার্স নিয়ন্ত্রণে আইনের পক্ষপাতী নন তিনি। বিদ্যমান আইন, নীতিমালা ও বিধিমালাতেই খাতটিতে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান সম্ভব।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি স্ট্রাটেজি ফাস্ট, পলিসি সেকেন্ড এবং আইন হচ্ছে থার্ড।দেশে কোনো ইনোভেটিভ বা ক্রিয়েটিভ অথবা ডিজিটাল ইকোনমিক গড়ে তুলতে গেলে প্রথমেই আইন নয়। প্রথমেই রেগুলেশন নয়, প্রথমেই বাধা নয়।’
পলক বলেন, ‘প্রথমে হবে কৌশলপত্র। তারপর একটি নীতিমালা, তারপর আইন। তবেই দেশটা একটি ডিজিটাল বেইজড ইকোনমির দিকে আগাবে।
‘সে কারণে আমরা প্রথমে ডিজিটাল পলিসি করেছিলাম, সেটি ২০১৮ সালের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুমোদন হয়। এখন ই-কমার্স নীতিমালা সংশোধন হয়েছে। এখানে পরিধি, সংজ্ঞা এবং সার্বিক দিক নির্দেশনার সমন্বয়ের এমন একটি টাইমফ্রেম স্মার্ট পলিসি তৈরি হয়েছে, যা দিয়ে ই-কমার্স খাত সুষ্ঠু পরিচালন সম্ভব।’
নীতিমালায় এসক্রো সার্ভিস সিস্টেমের কথা বলা হয়েছে। স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর-এসওপির কথাও বলা আছে। মনিটরিংয়ের কথা বলা আছে। কার কী দায়িত্ব সেটাও বলা আছে বলে জানান তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এটা ঠিক, একটা নীতিমালা এভাবে থাকলে হবে না। প্রয়োগ করতে হবে। সে কারণেই আমরা বসেছি। ক্রাইসিস সিচুয়েশনের মধ্যেই সলিউশন থাকে। সমস্যা তৈরি হয়েছে বলেই আমরা বসেছি; বাণিজ্যমন্ত্রী এখন সাহসিকতার সঙ্গে ফাইট করছেন।’
ইভ্যালি আমাজন হবে প্রতিমন্ত্রীর একসময়কার এমন মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘ইভ্যালি অ্যামাজন না হয়ে হয়তো এখন সমস্যায় আছে। কিন্তু চাল-ডালের প্রবৃদ্ধি অলরেডি ৩০০ ভাগ। শপ আপ এর প্রবৃদ্ধি কয়েক শ পার্সেন্ট।
‘ইভ্যালি, চালডাল ও শপঅ্যাপ -যদি এই তিনটাকে মেনশন করে আজ থেকে পাঁচ বছর আগে এই প্রেডিকশন দিয়ে থাকি, এই তিনজনের মধ্যে যদি দুইজন সাকসেসফুল হয় এবং আরেকজন যদি ফেইলর হয়; তাহলে আমাদের সাকসেসফুল পারসেন্টেন্স রেট কিন্তু সিলিকন ভ্যালি, সিঙ্গাপুর, ভারত থেকে বেশি।
‘কারণ ই-কমার্স খাতে যেসব স্টার্টআপ আছে, তাদের মাত্র ১০ ভাগ সফল হয়, বাকি ৯০ ভাগই ঝরে পড়ে। কিন্তু যে ১০ ভাগ উদ্যোক্তা সফল হয়, তা ওই ৯০ ভাগের অবদান ছাড়িয়ে যায়।’
পলক দাবি করেন, বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা খুবই সাহসী-সৎ ও সৃজনশীল। যে কারণে আমাদের ডিএনএর মধ্যে একটা উদ্যোক্তা হওয়ার বিষয় আছে। এটা মূলত একটা ইকোসিস্টেম। প্রত্যেকটা দেশেই এ সিস্টেমের মাধ্যমে ই-কমার্স বেড়ে ওঠে।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আপনি ধরেন যে, চালডাল, শপআপ- যারা পাঁচ বছর আগে ব্যবসাটা শুরু করেছিল, এমন কয়েকজনের মূলধন ছিল কয়েক লাখ টাকা। আজ ৫ বছর পর তাদের মূলধন হয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা।’
‘একই সময়ে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ এসেছে। দেশের ভেতর থেকেও বিনিয়োগ হয়েছে। এখানে ১৫ লাখ তরুণ-তরুণী কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। আইসিটি বিভাগের পক্ষ থেকে ডিজিটাল এই উদ্যোগ যদি পাঁচ বছর আগে না নিতাম, তাহলে দেশে স্টার্টআপ কালচারটা হয়তো এত দ্রুত বড় হত না,’ বলেন পলক।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সিলিকন ভ্যালিতে এই স্টার্টআপ তৈরি হতে ৬০ বছর সময় লেগেছে। আমাদের এই স্টার্টআপ ক্যাম্পেইন কেবলমাত্র ২০১৬ সালে শুরু হয়েছে। এই পাঁচ বছরের মধ্যে আড়াই হাজার স্টার্টআপ তৈরি হয়েছে। স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি করোনার মধ্যেও নিবন্ধন নিয়ে ইতিমধ্যে ১৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। স্টার্টআপ উদ্যোগে ৫০০ কোটি টাকা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এই যে সাহসী উদ্যোগগুলোর ফলে আমাদের উদ্যোক্তা তৈরি, এটা নতুন সম্ভাবনার দ্বার সৃষ্টি করেছে।’
পলক বলেন, ‘দেশে ই-কমার্স খাতে স্টার্টআপ বেসিসের সঙ্গে পার্টনারশিপে শুরু হয়েছে ২০১৬ সালে। ২০১৭ সালে উপলব্ধি করেছি আমাদের ই-কমার্স পলিসি দরকার। খাত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে এক বছর গবেষণা করে আমরা ই-কমার্স পলিসি দাঁড় করাই। হয়তো অনেক প্রেডিকশনই আমরা জানতাম না।
‘কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় অনুমান করেছিলেন এবং আমাদের বলেছিলেন, এই ই-কমার্স খাত এত বড় হবে এখনই যদি একটা নীতিমালা না করো তাহলে সমস্যা হবে। তখনই কিন্তু আমরা নীতিমালা করেছিলাম। যা এখন সময়ের সঙ্গে সংশোধন হচ্ছে।’