বর্তমানে ফেসবুকের লাইক এবং ভিউ পেতে অনেক কিছুর মাপকাঠি করা হয়। এজন্য কারো কারো কাছে লাইকের মূল্য কম নয়।
অনেকে লাইক পাওয়ার জন্য এমন সব অদ্ভূদ কাজ করে থাকেন যা অনেক সময় অন্যের কাছে খুবই বিরক্তের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
তবে লাইক পাওয়ার একটি কারিগরি একটি দিক আছে। যাকে বলা হয় এলগরিদম।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্লেষক-ফার্ম ‘কিসমেট্রিকস’-এর ফেসবুক নিয়ে গবেষণায় কিছু চমকপ্রদ তথ্য উঠে এসেছে। ফেসবুকে ছবি পোস্ট করলে সাধারণত ৫৩ শতাংশ বেশি লাইক পাওয়া যায়। ১০৪ শতাংশ কমেন্টস ও ৮৪ শতাংশ লাইক বেশি পাওয়া যায় ছবিভিত্তিক স্ট্যাটাসে। পোস্টে লেখার ব্যাপ্তি নিয়েও কিছু পরামর্শ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
ন্যূনতম ৮০ শব্দের মধ্যে পোস্ট দিলে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সঙ্গে ৬৬ শতাংশ সম্পৃক্ততা বাড়ে।
নিয়ম করে প্রতিদিন দু-একবার পোস্ট করলে ‘লাইক’-এর সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়বে। তবে নিরপেক্ষ পোস্টে মানুষ লাইক কম দেয়। নেতিবাচক পোস্ট কিংবা মানবিক কোনো ব্যাপারে মানুষের লাইক দেওয়ার প্রবণতা বেশি। এ ছাড়া সপ্তাহে ন্যূনতম এক থেকে চারবার পোস্ট করলে ৭১ শতাংশ বেশি সাড়া পাবেন বন্ধু কিংবা ফলোয়ারদের কাছ থেকে। তবে ইদানীংকালে ফেসবুক ভিডিওকে গুরুত্ব দিচ্ছে।
এজন্য ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার সময় একটু মাথা খাটাতে হবে। পোস্ট করার আগে ১০ বার চিন্তা করে নিন, কী পোস্ট করতে যাচ্ছেন।
চলুন দেখা নেওয়া যাক কোন বিষয়ে সতর্ক থাকলে ফেসবুকে লাইক বেশি পাওয়া যাবে।
১. ফেসবুকে জনপ্রিয় হতে সব ধরনের পোস্টে লাইক দিয়ে যাওয়া। এতে নিজের অ্যাকাউন্টেও বেশি বেশি লাইক ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা দেখেন অনেকে। কিন্তু এটা একেবারেই ভুল ধারণা। অপ্রীতিকর, বিতর্কিত কোনো পেজ কিংবা কারও পোস্টে লাইক দিলে উল্টো আপনার অ্যাকাউন্টে লাইকের সংখ্যা কমতে পারে! কেননা, মানুষ তখন ভেবে নেবে আপনার ব্যক্তিত্ব কিংবা চিন্তাচেতনায় সমস্যা আছে।
২. ফেসবুকে সব মানুষের মনোভাব সমান না। এজন্য বিরক্তিকর কিছু পোস্ট না করে, ব্যতিক্রমী পোস্ট করুন। মানুষ ব্যতিক্রমী যেকোনো কিছুই পছন্দ করে। সেটা হতে পারে মজা, হাসি-কান্না কিংবা ভ্রমণের ছবি।
৩. মানুষ খবর পেতে ভালোবাসে, খবর দিতেও ভালোবাসে। এখন তো যেকোনো খবর সংবাদমাধ্যমের চেয়ে ফেসবুকেই আগে পাওয়া যায়। এ কারণে বিশ্বস্ত সূত্রের নানা ধরনের খবর শেয়ার দিন। তবে সামাজিক সমস্যা নিয়ে বেশি লিখুন, কারণ মানুষের এর প্রতি ব্যাপক আগ্রহ কাজ করে।
৪. বন্ধুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান, পারলে তাকে নিয়ে ব্যতিক্রমী কিছু করুন। আপনার বন্ধুর জন্মদিনে কোন কোন বিখ্যাত মানুষ জন্মেছে, তা খুঁজে বের করে মজার কিছু লিখতে পারেন। মনে রাখবেন, ফেসবুকে সৃজনশীলতার আলাদা কদর আছে।
৫. ফেসবুকে বেশি লাইক পেতে পোস্টের ‘টাইমিং’ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কোনো ঘটনার রেশ কাটার আগে তা নিয়ে পোস্ট করা উচিত। কোনো আলোচিত ঘটনা ঘটলে ফেসবুকে মানুষের উপস্থিতি বাড়ে। এছাড়া ছুটির দিনগুলোতে কীভাবে সময় কাটালেন তাও শেয়ার করতে পারেন। কারণ ছুটির দিনে ফেসবুকে মানুষের উপস্থিতি বাড়ে।
৬. মাঝে মাজে প্রোফাইল ছবি পরিবর্তন করুন। একই ছবি বার বার ব্যবহার না করে বিভিন্ন ধরনের ছবি পোস্ট করুন।
৭. সিনেমা কিংবা বই-রিভিউ করুন নিজস্ব ঢংয়ে। সেটা মজার হলে ভালো। তবে অযৌক্তি ও মনগড়া কিছু লিখবেন না। কারণ এতে বিপদও আছে।
৮. নিজের আবেগ-অনুভূতি নিয়ে পোস্ট করুন, তবে সেটা সংখ্যায় পরিমিত হওয়াই ভালো। তবে অশ্লীল কিংবা সাম্প্রদায়িক পোস্ট দিয়ে বেশি লাইক পাওয়া দূরের কথা, উল্টো বিপদে পড়ার আশঙ্কাই বেশি। লেখালেখির হাত ভালো হলে নানা বিষয় নিয়ে লিখুন, যা মানুষকে ভাবতে বাধ্য করবে।
৯. কারও বিপদে পাশে দাঁড়ানোর অভ্যাস থাকলে এ ক্ষেত্রে আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হতে পারে অনেক বড় একটা ‘প্ল্যাটফর্ম’।
১০. আপনার ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রধান দুয়ার হতে পারে ফেসবুকে সেই ব্যবসার প্রচারের জন্য বানানো পেজ। প্রোফাইল ও কাভার ছবি ভালো রেজল্যুশনে হওয়া গুরুত্বপূর্ণ এবং সেটা অবশ্যই হতে হবে ব্যবসাভিত্তিক কোনো ছবি। আপনার পণ্যের নানা গুণাবলি নিয়ে নিয়মিত পোস্ট করুন। পণ্য যত ভালোই হোক না কেন, তা প্রচারে নিয়মিত পোস্ট না করলে বেশি লাইক আসবে না। এছাড়া পেজের ‘অ্যাবাউট’ সেকশন সব সময় হালনাগাদ থাকতে হবে।
তবে মনে রাখবেন ফেসবুক যেন আপনার নেশায় পরিণত না হয়। ফেসবুকে অথযা সময় ব্যয় করা থেকে সব সময় বিরত থাকুন।