আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের দুনিয়ায় যুগান্তকারী আবিষ্কার। স্মার্ট ফোন, স্মার্ট ঘড়ি, স্মার্ট টিভির পর এ বার বাজারে এল স্মার্ট বন্দুক! কিন্তু কেন স্মার্ট বন্দুক নাম? বন্দুকের মালিক ছাড়া এই বন্দুক কেউ চালাতে পারবেন না। কাজ করবে কেবলমাত্র মালিকের আঙুলের ছাপে (ফিঙ্গারপ্রিন্ট)। অন্য কেউ বন্দুকটি নিয়ে শত টানাহেঁচড়া করলেও গুলি চালাতে পারবেন না।
১৯৯০ সালে স্মার্ট বন্দুক তৈরির ভাবনা প্রথম মাথায় আসে বিজ্ঞানীদের। অনেক বিতর্কের মধ্যে দিয়েও যেতে হয়েছিল সেই ভাবনাকে। বিজ্ঞানীদের সেই স্বপ্ন সত্যি হল আমেরিকার কলোরাডোর একটি সংস্থার হাত ধরে। ওই সংস্থা ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই স্মার্ট বন্দুক বাজারে আনতে চলেছে বলে শোনা যাচ্ছে।
স্মার্ট বন্দুকের বাজারমূল্য কত হবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই মানুষের মধ্যে কৌতূহলের অন্ত নেই। শোনা যাচ্ছে, স্মার্ট বন্দুকের দাম হতে পারে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা। কলোরাডোর ওই সংস্থাটি ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বহু কোটির তহবিল সংগ্রহ করে সেই বছর থেকেই স্মার্ট বন্দুক তৈরির কাজে হাত লাগিয়েছিল তারা।
কলোরাডোর ব্রুমফিল্ডের এই সংস্থা বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, তারা বিশ্বের প্রথম বায়োমেট্রিক স্মার্ট বন্দুক তৈরি করে ফেলেছে। বন্দুকটিতে ‘ফিঙ্গারপ্রিন্ট আনলকিং সিস্টেম’ রয়েছে। এই প্রযুক্তি বন্দুকজনিত অপরাধের সংখ্যা কমাবে বলে সংস্থার তরফে আশা করা হচ্ছে। সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা কাই ক্লোইফফার জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই সারা বিশ্বের হাজার হাজার মানুষ বন্দুকটি হাতে পাওয়ার জন্য অগ্রিম বুকিং শুরু করেছেন। যদিও তার মধ্যে আমেরিকার বাসিন্দাদের সংখ্যাই বেশি। অগ্রিম বুক করা যাচ্ছে ১৩ হাজার টাকা দিয়ে।
উল্লেখযোগ্য যে, বায়োফায়ারের ৯ এমএম স্মার্ট বন্দুকটি শুধুমাত্র তখনই কাজ করবে, যদি এটি তার মালিককে ‘চিনতে’ পারে। অর্থাৎ, মালিকের আঙুলের ছাপের সাহায্যেই একমাত্র বন্দুকটির ‘লক’ খোলা যাবে। ঠিক যেমনটা দেখা যায় স্মার্ট ফোনের ‘লক’ খোলার ক্ষেত্রে।
ওই সংস্থার তরফে আরও জানানো হয়েছে, বন্দুকের পিছনে একটি ক্যামেরাও লাগানো থাকবে। সেই ক্যামেরা মালিকের মুখ চিনতে পারলেও বন্দুকের লক নিজে থেকে খুলে যাবে।
সংস্থার ওয়েবসাইটে লেখা রয়েছে, “আমাদের ৯ এমএম স্মার্ট বন্দুকটিকে হাত থেকে নামালেই সেটি লক হয়ে যায়। মালিকের অনুমতি ছাড়া সেই বন্দুক থেকে অন্য কেউ গুলি চালাতে পারবেন না। গুলি চালাতে পারবেন শুধুমাত্র বন্দুকের মালিক। ওই আগ্নেয়াস্ত্র ভুল করে কখনও কোনও শিশু বা অপরাধীর হাতে পড়লেও ক্ষতির আশঙ্কা নেই।’’
সংস্থার ওয়েবসাইটে এ-ও লেখা রয়েছে, ‘‘যে কোনও পরিস্থিতিতে পরিচয় যাচাই করার জন্য ‘ইন্টিগ্রেটেড ফিঙ্গারপ্রিন্ট’ এবং ‘থ্রিডি ফেসিয়াল রিকগনিশন সিস্টেম’ রয়েছে এই বন্দুকে। তাই কোনও ভুল হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’’ স্মার্ট বন্দুকের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য প্রযুক্তির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বলেও ওই সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে।
সংস্থাটি এর আগে কৃত্তিম উপগ্রহের যন্ত্রাংশ, স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার যন্ত্র, সুপারসনিক জেট তৈরি করেছে। ওই সংস্থা আরও নতুন নতুন অস্ত্র প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে বলেও সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে। বন্দুক সংক্রান্ত অপরাধ এবং আগ্নেয়াস্ত্র চুরি কমানোর জন্যই প্রথম স্মার্ট বন্দুক তৈরির ভাবনা মাথায় আসে বিজ্ঞানীদের।
এর আগেও স্মার্ট বন্দুক বাজারে আনার চিন্তা করা হলেও বিভিন্ন কারণে তা ফলপ্রসূ হয়নি। স্মার্ট বন্দুক বাজারে চাহিদা তৈরি করে ফেলতে পারলে আমেরিকায় বন্দুকবাজদের দৌরাত্ম্য কিছুটা কমতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি, বন্দুক ব্যবহারের কারণে আমেরিকার বিভিন্ন স্কুল চত্বরে যে ভাবে অপরাধের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে, তা-ও খানিকটা কমতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আবার বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, স্মার্ট বন্দুক হ্যাক করার পদ্ধতি জানা থাকলে তা হিতে বিপরীত হতে পারে।