চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধের ডামাডোলে ট্রাম্প প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার খড়গ নেমেছে হুয়াওয়ের ওপর। আর এতে স্যামসাংয়ের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের বাজার সম্প্রসারণের ব্যাপক সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। স্মার্টফোনের পাশাপাশি ফাইভজি নেটওয়ার্ক সরঞ্জামের আন্তর্জাতিক বাজারে এ কোরীয় কোম্পানির আধিপত্য প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা দেখছে ক্রেডিট রেটিং সংস্থা ফিচ রেটিং।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় হুয়াওয়েকে কালো তালিকাভুক্ত করার পর সার্চ জায়ান্ট গুগল ও সফটব্যাংক গ্রুপের মালিকানাধীন চিপ ডিজাইনার প্রতিষ্ঠান এআরএম হুয়াওয়েকে সরঞ্জাম সরবরাহ ও হালনাগাদ দেয়া স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে।
এ দুই প্রধান সহযোগীর এমন ঘোষণায় হুয়াওয়ে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ গুগলের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম পেলেও নিরাপত্তা হালনাগাদ ও স্বত্বযুক্ত সেবায় প্রবেশে ব্যর্থ হওয়ায় মানুষ হুয়াওয়ের স্মার্টফোন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। এছাড়া হুয়াওয়ের বেশির ভাগ নিজস্ব চিপ এআরএমের সহযোগিতায় নকশা করা।
ফিচ রেটিং জানিয়েছে, গুগলের অ্যান্ড্রয়েড ইকোসিস্টেমে প্রবেশের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চীনের বাইরে হুয়াওয়ের স্মার্টফোন বিক্রি ব্যাহত হবে। আর এ সুযোগেই স্যামসাংয়ের বাজার অংশীদারিত্ব বাড়তে পারে।
তবে বেইজিং-ওয়াশিংটনের এ বাণিজ্যযুদ্ধে আইফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাপলও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যেখানে এরই মধ্যে চীনে অ্যাপলের বাজার অংশীদারিত্ব কমতে শুরু করেছে। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে অ্যাপলের পণ্যে চীনে বিধিনিষেধ আরোপের পক্ষপাতী নন বলে জানিয়েছেন হুয়াওয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রেন ঝেংফেই। ব্লুমবার্গকে তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, বেইজিং এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নিলে তিনিই সবার আগে প্রতিবাদ করবেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে যেকোনো ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হলে সেটা স্যামসাংয়ের জন্য আশীর্বাদই হবে। পাশাপাশি এ সুযোগে বিশ্বে ফাইভজি নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম সরবরাহে স্যামসাং শীর্ষ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হলেও অবাক হওয়ার বিষয় হবে না।
দক্ষিণ কোরীয় কনগ্লোমারেট স্যামসাং হোম অ্যাপ্লায়েন্স (হোয়াইট গুডস), জাহাজ নির্মাণ ও সেমিকন্ডাক্টর, আবাসনসহ বিভিন্ন খাতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলেও নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম ব্যবসায় এখনো তেমন সুবিধা করে উঠতে পারেনি। যেখানে ইউরোপ ও আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশে নেটওয়ার্ক অবকাঠামো খাতে হুয়াওয়ে প্রায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
তবে স্যামসাং সম্প্রতি ফাইভজি নেটওয়ার্ক ব্যবসার বাজার ধরতে ২ হাজার ২০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। ২০২০ সালের মধ্যে অন্তত ২০ শতাংশ বাজার দখলের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে তারা। পাশাপাশি সেলফোনের ব্যবসায়ও পাঁচ বছর আগের অবস্থানে ফিরে আসার উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখছে কোম্পানিটি। পাঁচ বছর আগে রেকর্ড মুনাফার পর সেভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি স্যামসাংয়ের সেলফোন বিভাগ।
এদিকে গুগলের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের বিকল্প নিজস্ব ‘হংমেং’ অপারেটিং সিস্টেম বানানোর ঘোষণা দিয়েছে হুয়াওয়ে। পাশাপাশি অন্যান্য হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারেরও বিকল্প তৈরির কথা ভাবছে প্রতিষ্ঠানটি। তাছাড়া কোম্পানির বাইরে শেয়ারহোল্ডারের সংখ্যা খুব কম হওয়ায় ব্যবসা রক্ষায় যেকোনো বেপরোয়া সিদ্ধান্ত নিতে হুয়াওয়ের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ফলে নতুন অপারেটিং সিস্টেমের পাশাপাশি নিজেদের চিপ নির্মাণেও মনোযোগ দিতে পারবে হুয়াওয়ে। আর চীনের বাজারের ওপর ভর করেই যখন দ্বিতীয় বৃহত্তম স্মার্টফোন নির্মাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছে, তখন নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে অতটা শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ দেখছেন না অনেক পর্যবেক্ষক।