নতুন করোনাভাইরাস বাস্তবতায় অনেকটাই বদলে গেছে বিশ্ব। আমাদের চারপাশের গতানুগতিক ব্যাপারগুলোও হচ্ছে একটু ভিন্নভাবে। মানুষ এই পরিবর্তনগুলোকে মেনে নিয়েই বেঁচে ও টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। সোমবার থেকে পরিবর্তন এসেছে উবার রাইডের সেবাও।
মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে উবার চালকদের জন্য। তারা মাস্ক পড়ছেন কি না, সে ব্যাপারে প্রমাণও নিচ্ছে উবার। গত সপ্তাহের শেষের দিকে প্রতিষ্ঠানটি ঘোষণা দিয়েছে, যাত্রী উঠানোর আগে উবার চালককে অ্যাপে সেলফি তুলে মাস্ক পড়ার প্রমাণ দিতে হবে।
সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলেছে, এটি শুধু একটি অংশ কেবল। যতোবার উবার চালক অনলাইন হবেন এবং রাইড অ্যাকসেপ্ট করবেন, ততোবার চালককে নিশ্চিত করতে হবে যে তার কোনো উপসর্গ নেই, তিনি নিয়মিত গাড়ি স্যানিটাইজ করছেন এবং নিজ হাত পরিষ্কার রাখছেন।
শুধু যে চালককে এ ধরনের কাজ করতে হবে তা নয়। বেশ কিছু কাজ করতে হবে যাত্রীকেও। গাড়িতে উঠার আগে মুখে মাস্ক আছে কিনা বা মুখ ঢাকা আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে যাত্রীদেরকেও। তবে, যাত্রীদের বেলায় সেলফি তুলে প্রমাণ দিতে হবে না।
মূলত কোভিড-১৯ লড়াইয়ে যাত্রী ও চালকের উপর নির্ভর করছে উবার। এরা এক পক্ষ অপর পক্ষকে সুস্থ রাখবে এমনটাই প্রত্যাশা করছে রাইড শেয়ারিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানটি। “চালক এবং যাত্রীদের কাছে বিষয়গুলো একটু অন্যরকম মনে হবে”। – গত সপ্তাহের শেষে বলেছেন উবার প্রধান দারা খোসরোশাহি।
“আমরা অনেকগুলো ‘চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সের’ মধ্যে দিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছি, কারণ এটি এমন একটি বিষয় যা আদতেই ভাগ করে নেওয়া জবাবদিহিতা।” – বলেছেন উবারের সেবা সুরক্ষা প্রধান সাচিন কানসাল, “যদি কোনো যাত্রী দেখেন চালকের মুখে মাস্ক নেই, তাহলে তারা ট্রিপ বাতিল করতে পারবেন। গাড়িতে উঠার প্রয়োজন পড়বে না”।
এ ধরনের ট্রিপ বাতিলের জন্য কোনো জরিমানা হবে না বলেও জানিয়েছে উবার।
রাইডের পর কোনো চালক বা যাত্রী যদি স্বল্প রেটিং পায়, তাহলে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হবে। এই প্রতিক্রিয়ার মধ্যে যোগ করা হয়েছে নতুন ট্যাগ “মুখ ঢাকা ছিলো না বা মাস্ক ছিলো না”। এই ট্যাগের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানানো হলে, নিয়মভঙ্গকারী চালক বা যাত্রী যেই হোন না কেন, ব্যবস্থা নেবে উবার।
“যদি আমরা বারবার এমন ঘটনা ঘটতে দেখি, সে চালক বা যাত্রী যেই হোন না কেন, আমরা তাদেরকে প্ল্যাটফর্ম থেকে সরিয়ে দেওয়ার মতো বাড়তি আরেকটি পদক্ষেপ নিতে পারি”। – বলেছেন উবারের সেবা সুরক্ষা প্রধান কানসাল। তবে, কতগুলো নিয়ম ভাঙলে প্ল্যাটফর্ম থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে, সে ব্যাপারে কানসাল বিস্তারিত কিছু জানাননি।
যাত্রীদের সুরক্ষায় চালকদের মতো সুরক্ষা পদক্ষেপ কেন নিয়ে আসা হয়নি, সে বিষয়ে উবারকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। এ প্রশ্নের উত্তরে কানসাল বলেছেন, “আমরা যত দ্রুত সম্ভব কিছু নিয়ে আসতে চেয়েছিলাম”।কানসালের দেওয়া তথ্য অনুসারে, অনেক আগে থেকেই চালকদের জন্য উবারের কিছু কাঠামো রয়েছে। রিয়েল-টাইম আইডি চেক অনেক বছর ধরেই রয়েছে। পরিচয় শনাক্তে ব্যবহৃত হতো ইন-অ্যাপ ফিচারটি। এই কাঠামোর কারণে নতুন সুরক্ষা পদক্ষেপগুলো নিয়ে আসা সহজ হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রথমে চালকের মাস্ক ছাড়া সেলফি এবং পরে মাস্ক পরা সেলফি চাইবে প্রতিষ্ঠানটি।
নিজেদের বৈশ্বিক কারপুল সেবা “উবার পুল” বন্ধ করে দিয়েছে উবার। নিজেদের ‘উবারএক্স’ সেবাতেও পরিবর্তন নিয়ে এসেছে রাইড শেয়ারিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানটি। এখন থেকে চারজনের বদলে তিনজন উঠতে পারবেন ‘উবারএক্স’ সেবাটিতে। মাস্ক পরে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করার পর যাত্রীদেরকে ‘সেন্টারস ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের’ নির্দেশনা দেখানো হবে। এরকম নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে সামনের আসনে না বসা বা বাতাস পেতে জানালার কাঁচ না নামানো ইত্যাদি।
জুনের শেষ পর্যন্ত থাকবে কোভিড-১৯-এর প্রকোপ। তারপর আবারও স্থানীয় অবস্থার ভিত্তিতে বদলাবে উবারের নিয়ম। এরকম তথ্যই জানিয়েছেন উবার প্রধান খোসরোশাহি।
সিএনএনের নিবন্ধ বলছে, চালকদের জন্য মাস্ক, গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং জীবাণুনাশক স্প্রে এবং ওয়াইপ কেনার জন্য পাঁচ কোটি ডলার বরাদ্দও করেছে প্রতিষ্ঠানটি।