সারা বছর ডিসকাউন্টে বা মূল্যছাড়ে পণ্য ও সেবা বিক্রির নতুন ধারণা নিয়ে ‘আলেশা কার্ড’ চালু করেছে আলেশা হোল্ডিংস লিমিটেড। এই প্রিভিলেজড কার্ডটি দেখতে ব্যাংকের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের মতোই। ডিজিটাল কমার্সের পণ্যের মতো এই কার্ডটি কিনতেও প্রতিষ্ঠানটির একটি ওয়েব লিংকে যেতে হয়। সেখানে ৭ হাজার ৯৮০ টাকা পরিশোধ করে কার্ডটি পাবেন গ্রাহকরা; যা দিয়ে আলেশা হোল্ডিংসের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আলেশা মার্ট বা আলেশা রাইডে ৫-১০ শতাংশ হারে মূল্যছাড় পাওয়া যাবে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে ৯০টি ক্যাটাগরিতে ৩ হাজারেরও বেশি সরবরাহকারীর কাছ থেকে এই কার্ডধারীরা সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্ট পাবেন বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এদিকে গত রবিবার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ‘আলেশা কার্ডের’ বিজ্ঞাপন প্রচারের পর থেকে এ নিয়ে অনেকের মনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এটা কোনো প্রলোভন দিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা কিনা বা এ ধরনের কোনো ঝুঁকি আছে কিনা, তা নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গত ৪ জুলাই জারি করা ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকার ৩.১.৯ অনুচ্ছেদে বলা আছে, সব ধরনের ডিজিটাল ওয়ালেট, গিফট কার্ড, ক্যাশ ভাউচার বা অন্য কোনো মাধ্যম যা অর্থের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে তা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদ্যমান নীতিমালা অনুসরণ এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া তৈরি (ইস্যু), ব্যবহার বা ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না।
তবে এ কার্ডটি অন্যান্য প্রিভিলেজড কার্ডের মতো নয় বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, প্রায় ৮ হাজার টাকা খরচ করে কার্ড নিতে হবে। সেক্ষেত্রে কোনো গ্রাহক যদি এই কার্ডের কোনো ব্যবহার করার সুযোগ না পান তাহলে বছর শেষে এ ৮ হাজার টাকার কোনো বেনিফিট কিন্তু মিলবে না। তাছাড়া কার্ড দিয়ে আলেশা ছাড়া অন্যান্য পণ্য সরবরাহকারী বা সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে ছাড় পাওয়া গেলে এই ছাড়ের টাকা ভর্তুকি দিয়ে আলেশা কার্ড কীভাবে লাভবান হবে তা জানার প্রয়োজন রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. মেজবাউল হক বলেন, ‘আলেশা কার্ডের বিজ্ঞাপনটি আমাদেরও নজরে এসেছে। কার্ডটি ব্যাংকের কার্ডের মতোই দেখতে। এই কার্ড চালুর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আলেশা কার্ড কোনো অনুমোদন নেয়নি। এক্ষেত্রে এই কার্ডের ব্যবহার প্রচলিত কোনো নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিনা তা আমরা খতিয়ে দেখব।’
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আলেশা যদি ১ লাখ গ্রাহকের কাছে এই কার্ড বিক্রি করে সেই টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায় তখন এর দায় কে নেবে। এখানে তো একটি আর্থিক লেনদেন সংঘটিত হচ্ছে। এটাকে রেগুলেট না করা হলে গ্রাহকদের প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের বড় বড় বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আড়ং তাদের ক্রেতাদের প্রিভিলেজড কার্ড দিয়ে থাকে। এ কার্ড একদম ফ্রি। একসঙ্গে ১০ হাজার টাকার কেনাকাটা করলেই ক্রেতাদের এই কার্ড অফার করে প্রতিষ্ঠানটি।