মার্চেন্ট কনফারমেশন করুক বা না করুক এসওপি অনুযায়ী গেটওয়েতে আটকে থাকা অবশিষ্ট ১৫০ কোটি টাকা অনতিবিলম্বে গ্রাহকদের ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করাসহ ১৪ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ই-কমার্স কনজুমার সোসাইটি।
শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত ই-কমার্স থেকে প্রতারিত গ্রাহকদের টাকা ফেরত চেয়ে ১৪ দফা দাবি আদায়ের এক মানববন্ধনে এ দাবি জানানো হয়।
তাদের ১৪ দফা দাবিগুলো হচ্ছে—
১. ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলাদিনের প্রদীপের ৩৬ গ্রাহকের ভোক্তা অধিকার থেকে ভেরিফাই করা লিস্টের টাকাগুলো অতিদ্রুত ফেরত দেওয়া।
২. এসওপি অনুযায়ী গেটওয়েতে আটকে থাকা অবশিষ্ট ১৫০ কোটি টাকা অনতিবিলম্বে গ্রাহকদের ফেরত দেওয়া।
৩. ৩৯টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার যারা এখনো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করেননি বা যোগাযোগ করেও গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেননি, তাদের স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে গ্রাহকদের মাঝে টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৪. আলেশা মার্ট যেন সিরিয়াল অনুযায়ী তাদের অফিশিয়াল পেজে রিফান্ড লিস্ট প্রকাশের মাধ্যমে রিফান্ড কার্যক্রম বড় আকারে শুরু করে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৫. পণ্য ক্রয়ের উদ্দেশ্যে কিউকম গ্রাহকদের ২০২১ সালের ১৫-১৮ জুন গেটওয়ের মাধ্যমে ও ব্যাংক ডিপোজিটের মাধ্যমে পেমেন্ট করা টাকাগুলো অতিদ্রুত ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া ওয়ারহাউজের ১০০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রির মাধ্যমে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে হবে অথবা ওয়ারহাউজের পণ্য গ্রাহকদের অর্ডার অনুযায়ী ভেলিভারি করতে হবে।
৬ অভিযুক্ত ৩৯টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতারিত গ্রাহকদের পেমেন্ট করা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ফ্রিজ অবস্থায় আটকে থাকা টাকাগুলো গ্রাহকদের ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৭. ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জ শপের পরিচালনা বোর্ডের আমানুল্লাহ, সোনিয়া মেহেজাবিন ও মাসুকুর রহমান বর্তমানে জেলহাজতে কারারুদ্ধ অবস্থায় আছে। তাদের সাথে যোগাযোগ করে গেটওয়েতে আটকে থাকা ৩৪ কোটি টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
৮. এছাড়া যেসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার দেশের বাইরে পলাতক আছে তাদের অনতিবিলম্বে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে এবং তাদের সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে গ্রাহকদেরকে টাকাগুলো ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
৯. এস্ক্রো সিস্টেমকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করে যেসকল প্রতিষ্ঠান নীতিমালা বহির্ভূত ও অবৈধ উপায়ে ব্যাংক ডিপোজিটসহ অফিসে ক্যাশ পেমেন্টের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়ে পালিয়েছে, সেসকল প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
১০. বাংলাদেশ ডিল নামক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ফেক ডেলিভারি দেখিয়ে আমার-পে গেটওয়ে প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা তুলে নিয়েছে। অনতিবিলম্বে সে টাকা গ্রাহকদের ফেরত দেওয়াসহ তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসতে হবে এবং নগদ গেটওয়েতে আটকে থাকা অবশিষ্ট টাকাগুলো ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
১১. ২০২২ সালের ২৬ মে গণবিজ্ঞপ্তি আহ্বানে যেসকল ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান সাড়া দেয়নি সেসকল প্রতিষ্ঠানের গেটওয়ে থেকে এসক্রো অ্যাকাউন্টের সকল গ্রাহকদের আটকে থাকা টাকা দ্রুত অটোমেশন পদ্ধতিতে রিফান্ড করে দিতে হবে।
১২. ইভ্যালির বর্তমান ব্যবসায়িক অবস্থান গ্রাহকদের সামনে তুলে ধরতে হবে এবং গ্রাহকদের হাতে থাকা চেক ও অর্ডার করা পণ্যগুলোর ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারণ করে দিতে হবে।
১৩. দালাল প্লাসের মালিকপক্ষ যেহেতু বর্তমানে জেলে কারারুদ্ধ অবস্থায় আছে। তাদের সাথে যোগাযোগ করে সূর্য পে-গেটওয়েতে আটকে থাকা বাকি টাকাগুলো গ্রাহকদেরকে ফেরত প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং সূর্য-পে’র সেটেল করা টাকা গ্রাহকদেরকে ফেরতের বিষয়ে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১৪. গ্রাহক স্বার্থ রক্ষায় মতামত প্রদান করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সংক্রান্ত টেকনিক্যাল কমিটির টাস্কফোর্সে বাংলাদেশ ই-কমার্স কনজ্যুমার সোসাইটিকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
মানববন্ধনে বাংলাদেশ ই কমার্স কনজুমার সোসাইটি সহ-সভাপতি রবিউল সানী বলেন, দুই বছরের অধিক সময় অতিক্রম করার পরেও ই কমার্সের যে এস্ক্রো গেটওয়ের টাকা সেটা রিলজ করা সম্ভব হয়নি। পাশাপাশি অনেক মালিক আছে যারা টাকা দিতে চায় সেটা ফান্ড থেকে হোক বা ব্যাংকে যে টাকা আটকানো আছে, সেই টাকা পর্যন্ত সরকার থেকে কোনো প্রসিডিওর করা হচ্ছে না ছাড়ার জন্য; তাদের (ই কমার্স মালিক) সদিচ্ছা থাকার পরেও।
তিনি বলেন, আমরা ৩৯টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়েছিলাম, তাদের কী অবস্থা, তারা কোথায় আছে, এটা আমরা এখন পর্যন্ত ক্লিয়ার না। আজকে তাদের বিচার হয়নি বলেই নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান প্রতারণা করছে। আমরা বলতে চাই আগেরগুলোর যদি বিচার না হয় তাহলে নতুন করে এসব প্রতিষ্ঠান সুযোগ পাবে, নতুন করে প্রতারণা করবে। আমরা চাই গেটওয়ের যে টাকা সেটি যেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় দ্রুত সল্যুশনের ব্যবস্থা করে। আমরা চাই এসব প্রতিষ্ঠানকে যেন সরকার খুঁজে বের করে।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ই-কমার্স কনজুমার সোসাইটির (বিইসিএস) সভাপতি মো: বেলাল হোসাইন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহিরুল আলম সুজন ও দপ্তর সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম।