শখ থেকে উদ্যোগ এর গল্প আমরা প্রায়ই শুনে থাকি,আমাদের আশপাশে এমন হাজারও উঠে আসার গল্প রয়েছে। কিন্তু মানসিকভাবে বিপর্যস্ততা থেকে বাঁচতে উদ্যোগ নিয়েছেন শান্তির আশায় এমনটা বেশ দুর্লভ। বিয়ের পর ছোট সন্তানকে নিয়ে কিভাবে যাত্রা শুরু করেছেন আঁখি সেই কথা জানতে চলেছি আমরা।চলুন জানা যাক।
সিদরাত ফারজানা আঁখি, সুনামগঞ্জের মেয়ে, ২৬ বছর শেষ করে ২৭ এ পা রেখেছেন। বাংলা সাহিত্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বাংলা সাহিত্যে পড়াশোনা শেষ করেছেন। বৈবাহিক সূত্রে তিনি এখন মৌলভীবাজার জেলায় থাকেন।টেকজুমের সাথে “উমাইমাহ্”র স্বত্ত্বাধীকারী আঁখির সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হলো।
টেকজুমঃ কিভাবে শুরু হয়েছিলো উদ্যোক্তা যাত্রা?
সিদরাত ফারজানা আঁখিঃ আমার বাবা নেই, পারিবারিক চাপ ও পারিপার্শ্বিক কারণে পড়াশোনা চলাকালীন সময়েই বিয়ে করি। বিয়ের পরপর কনসিভ করি এবং আমার কোল জুড়ে আসে আমার রাজকন্যা। প্রথম প্রথম ভালোই চলছিলো সব….. কিন্তু দিনরাত বেবীর টেক কেয়ার করতে করতে মনে হচ্ছিলো স্বাভাবিক জীবন থেকে ছিটকে পড়ে গেছি। এক সময় শুরু পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন,আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভুগতে শুরু করলাম, মনে হতো আমার জীবন এখানেই শেষ,আমার আর কিছু করার নাই। এসব পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আমার একটা কাজ দরকার ছিলো,যার মাধ্যমে আমি নিজেকে ফিরে পাবো। কিন্তু আমার বাচ্চাটা এতো ছোট তখন,তাকে রেখে চাকরি করা সম্ভব ছিলো না। তাই তাকে সাথে নিয়ে,তার নামেই শুরু করলাম উদ্যোগ।
টেকজুমঃ অন্য কিছুর বদলে ই-কমার্সেই উদ্যোগ নিলেন কেন?
সিদরাত ফারজানা আঁখিঃ ই-কমার্সে বিজনেস করার বড়ো সুবিধা হচ্ছে, ধরাবাঁধা সময় নিয়ে কাজ করতে হয়না। ঘরে বসে নিজের সুবিধা মতো যেকোনো জায়গায় থেকেই কাজটা করা যায়। মানুষের সান্নিধ্যে থাকা যায়। বাচ্চা-সংসার সব সামলে নিজের মতো করে কাজ করা যায়।
টেকজুমঃ আপনার উদ্যোগ শুরুর পর এই পথে বাধা এসেছে কখনও?
সিদরাত ফারজানা আঁখিঃ জ্বী,অসংখ্য বাধা এসেছে। নেটওয়ার্ক সমস্যা,পণ্য ডেলিভারির সমস্যা, এসব তো আছেই। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা মানুষের কটু কথা। প্রথম প্রথম অনেক খারাপ লাগতো, মনে হতো পারবো না। কিন্তু দিন দিন সেটি কাটিয়ে উঠছি সেটা, আলহামদুলিল্লাহ।
টেকজুমঃ দেশি পোশাককে কেন উদ্যোগের পণ্য হিসেবে বেছে নিলেন এবং এগুলোর ভবিষ্যত কেমন মনে হয় আপনার দেশিপণ্য হিসেবে?
সিদরাত ফারজানা আঁখিঃ শাড়ি আমার অসম্ভব প্যাশনের জিনিস। তাই শাড়ি নিয়ে কাজ শুরু করা। তবে দেশিপণ্য নিয়ে কাজ করার সাহসটা আসলে উই ও রাজিব আহমেদ স্যারের থেকে পাওয়া। শাড়ি যেহেতু ভালো লাগার জিনিস, তাই কিছু ধারণা ছিলো, আর উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) থেকে বাকিটা নিয়েই আমার পথ চলা।
টেকজুমঃ আপনার এগিয়ে যাওয়ায় উৎসাহ এবং কৃতিত্ব কার এবং কেন?
সিদরাত ফারজানা আঁখিঃ প্রথমত, আমার স্বামীকে। সে সবকিছুতে আমাকে ছায়া দিয়ে আগলে না রাখলে এখানে আমার আসা হতো না। শুধু তাই না, আরো অনেক কিছুই হতোনা।আর প্রতিদিনের এনার্জি পাই,ভাঙতে ভাঙতেও দাঁড়ানোর সাহস পাই যার কাছে, তিনি ই-ক্যাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রাজিব আহমেদ স্যার। আমার ভেতরে যে কাজ করার ইচ্ছে, ভালো থাকার ইচ্ছে তা আরো তীব্র হয় স্যারের লেখা পড়ে। প্রতিকূল পরিবেশে নিজেকে শান্ত রেখে কাজ করে যাওয়া আয়ত্ব করে যাচ্ছি স্যারের লেখা পড়ে।
টেকজুমঃ উমাইমাহ্’কে নিয়ে অদূর ভবিষ্যতে কি স্বপ্ন দেখেন?
সিদরাত ফারজানা আঁখিঃ আমার উদ্যোগ আমার আরেক সন্তান। দেশি শাড়ি ও মণিপুরী তাঁত পণ্য বলতে একদিন মানুষ একবার হলেও উমাইমাহ্’র কথা চিন্তা করবে, এটিই চাই। দেশি পোশাকের জগতে উমাইমাহ্ একটি ব্র্যান্ড হবে, ইনশাআল্লাহ। হয়তো সময় লাগবে, আরো বেশি পরিশ্রম করতে হবে।আমি দোয়াপ্রার্থী উমাইমাহ্’র জন্য।
টেকজুমঃ চমৎকার লাগলো আপনার উঠে আসা এবং টিকে থাকার কথা।ধন্যবাদ আঁখি,ভালো থাকবেন।
সিদরাত ফারজানা আঁখিঃ টেকজুমকেও ধন্যবাদ।