যুগযুগ ধরে উৎপাদন হওয়া টাঙ্গাইল জেলার বাহিরে তেমন পরিচিত নয় খেশ পণ্য। রবীন্দ্রনাথের পর খেশ পণ্যের পরিচিত করাতে উল্লেখযোগ্য ভাবে কেউকে চেষ্টা করতে দেখা যায়নি। তবে গত একবছরে আরিয়া’স কালেকশনের স্বত্বাধিকারী নিগার ফাতেমা ফেসবুকের মাধ্যমে খেশ পণ্য পরিচিতি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে নিরলস পরিশ্রম করছে। যার ফলশ্রুতিতে লক্ষ লক্ষ বাঙালি চিনেচে টাঙ্গাইল জেলার খেশ শাড়ি, পাঞ্জাবি, জামাকাপড়, শাল ইত্যাদি। বর্তামনে খেশ রুচিশীল মানুষের গর্বের পোশাকে পরিণত হয়েছে। দেশি ক্রেতাদের পাশাপাশি প্রবাসীরাও অনলাইনে কেনাকাটা করছে খেশ পোশাক। এ প্রতিবেদন লেখা পূর্বে কয়েকজন প্রাবাসীর সাথে খেশ নিয়ে কথা হয়েছে। তাদের কথাগুলো লেখায় প্রকাশ করেছি।
জান্নাতুল ফেরদৌসী (মেলবর্ণ, অষ্ট্রেলিয়া) এর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৯ সালের শেষ ভাগে উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) এর ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হয়ে খেশ সম্পর্কে জানতে পারেন। খেশ পণ্য নিজে ব্যবহারের পাশাপাশি বিদেশের মাটিতে ছড়িয়ে দেওয়ার স্বপ্ন নিয়ে কাজ করছেন।
আরিয়া’স কালেকশনে খেশ পণ্য কেনাকাটার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে তিনি বলেন, বলতে গেলে একটু ইমোশনাল অভিজ্ঞতা। আরিয়া’স কালেকশন ইতিহাস তৈরী করেছে খেস নিয়ে কাজ করে। আমার কোনো ধারনাই ছিল না খেশ সম্পর্কে। নিগার আপুর একনিষ্ঠ পরিশ্রমের কল্যাণে খেশ পণ্য চিনেছি। আপুর ব্যবহার আর বন্ধুত্বসুলভ আচরণ আমাকে মুগ্ধ করেছে।
নাজমুন শ্রাবণী (ইনছন, সাউথ কোরিয়া) জানায়, খেশ শাড়ির ফ্যামিলি সেট দিয়ে শুরু করেছেন আরিয়া’স কালেকশনে কেনাকাটা। খেশ শাড়ী ভালো লাগায় নিজের দেওয়া ডিজাইনে বানিয়ে নিছেন স্বামী-ভাগ্নে ও ছেলের পাঞ্জাবি, নিজের শাড়ী, মেয়ের ফ্রক। তিনি খেশ পণ্য বার বার কেনাকাটা করেছেন আরিয়া’স কালেকশনে।
আরিয়া’স কালেকশনে কেনাকাটার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে শ্রাবণী বলেন, আমার হাসব্যান্ডের জন্য নেয়া পাঞ্জাবির মাপ ভুল দেয়ার কারণে ব্যবহার অযোগ্য হয়ে যায়। আপুকে রিকোয়েস্ট করায় শত ব্যস্ততার মাঝে আমাকে এক দিনের মধ্যে সঠিক মাপের পাঞ্জাবি প্রস্তুত করে তার ব্যক্তিগত চালক দিয়ে বাসায় পৌছে দেন। পরদিনই আমার প্রতিবেশীর মাধ্যমে কোরিয়া নিয়ে আসি। বলাবাহুল্য আপু সহযোগীতা না করলে আমার কিছুই করার ছিলো না।
শারমিন আরা (নিউ ইয়র্ক, আমেরিকা) জানায়, মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা থেকে বিদেশি ব্র্যান্ডের পরিবর্তে নিজের দেশের পোশাক ব্যবহার করি। তিনি আরও বলেন, আমার শাশুড়ীর ঈদ ও জন্মদিনের শাড়ী, শাল আরিয়া’স কালেকশনের। খেস শাড়ীর সাথে মিলিয়ে পেটিকোট এবং স্যান্ডেল কিনে দিয়েছে আরিয়া’স কালেকশনের স্বত্বাধিকারী নিগার ফাতেমা আপু। শুধু তাই না আপু আমার শাশুড়ী মা’র জন্মদিনে খেস ওড়না ও চাবির রিং উপহার দিয়েছেন। আপুর এ ভালোবাসার কি নাম দিবো জানিনা। যেটা প্রবাসে আমাকে আনন্দিত করছে। আরেকটা কথা না বললেই না। আমেরিকায় প্রথম নিজের জন্য যে শাড়িটি কিনেছিলাম সেটাও আরিয়া’স কালেকশনের। নিগার আপুর আন্তরিকতা আর ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে বার বার কেনাকাটা করছি আরিয়া’স কালেকশনে।
রাকিব সবুজ (মালয়েশিয়া) জানায়, মালয়েশিয়া থেকে রাতে আরিয়া’স কালেকশনে শাড়ী অর্ডার দেয় মায়ের জন্যে। বিল পরিশোধের পূর্বে শাড়ি কুরিয়ারে বুকিং দিয়ে নিয়মিত আপডেট জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী নিগার ফাতেমা। রাকিব সবুজ তাদের সার্ভিসে মুগ্ধ হয়ে শীত মৌসুমে পুনরায় খেশ শাল অর্ডার দেয় বাবা-মায়ের জন্যে।
আরিয়া’স কালেকশনের স্বত্বাধিকারী নিগার ফাতেমা বলেন, প্রবাসী কাস্টমারদের মাধ্যমে টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী খেশ পণ্য বিশ্বব্যাপী প্রচার পাচ্ছে। জাপান, কোরিয়া, আমেরিকা, লন্ডন, কানাডা, দুবাই, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, ওমান, কাতার থেকে খেশ পণ্যের অর্ডার পেয়েছি। কেউ নিজের জন্য নিয়েছে, কেউ নিজের পরিবারের জন্য খেশ পণ্য অর্ডার করেছে। খেশ শাড়ি,পাঞ্জাবি, বেবি ড্রেস, শাল সহ খেশের বিভিন্ন পণ্য বিদেশের মাটিতে গিয়েছে। আমার কাছে ভালো লেগেছে নতুন এই পণ্যটি প্রবাসীদের কাছেও গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। শুধু তাই নয় প্রবাসী কাস্টমার এর মধ্যে আমার অনেক রিপিট কাস্টমার রয়েছে। আমি চাই আমার উদ্যোগের মাধ্যমে খেশ পণ্যের আরো প্রচার পাক। দেশ-বিদেশের সকল কাস্টমারদের চাহিদা পূরণ করার প্রত্যাশা রাখি।
লেখক : মোঃ দেলোয়ার হোসেন।