ই-কমার্স ব্যবসায় প্রধান বিষয় গুলোর অন্যতম কাস্টমার সার্ভিস।কোনো পণ্য দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে পারে শুধুমাত্র ই-কমার্সের কল্যাণে।বর্তমানে দেশে ই-কমার্স বিজনেস এবং অনলাইন শপিং বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন অন্তরায়ের সাথে একটি সমস্যা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে প্রায়ই এবং সেটি হলো ডেলিভারি চার্জ । নিজ জেলা এবং অন্য জেলায় পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে বিক্রেতারা কুরিয়ার কোম্পানির মাধ্যমে পাঠাচ্ছেন এবং স্থান ও পরিমাণ ভেদে ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে চার্জ।প্রায় প্রত্যেক পণ্যের জন্য গড়ে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা চার্জ দিতে হয় কুরিয়ার কোম্পানি গুলোকে।
এদিকে দেশিপণ্যের ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) এর অনেক উদ্যোক্তাদের উদ্যোগে ব্যতিক্রম দেখতে পাওয়া গিয়েছে। দেশিপণ্যের কেনাকাটায় অনেক উদ্যোক্তা ফ্রি ডেলিভারি সেবা দিচ্ছেন। এটি নিয়ে আমরা কয়েকজন উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি এই পরামর্শটি ই-ক্যাবের ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট জনাব রাজিব আহমেদ দিয়েছেন এবং তিনি এটি পণ্যের রিভিউ আহরণের উপায় প্রসঙ্গে বলেছিলেন।
জামদানী শাড়ীর ব্র্যান্ড কাকলী’স এটিয়্যারের স্বত্ত্বাধীকারী কাকলী রাসেল তালুকদার বলেন, “ডেলিভারি চার্জ ফ্রী করলে কাস্টমার স্পেশাল ফিল করে।কারণ কাস্টমার সাইকোলজি বলে যে প্রডাক্ট আমি অর্ডার করেছি সেই প্রডাক্ট এর জন্য আমি পে করবো,এক্সট্রা টাকা কেনো দেবো? একজন কাস্টমারকে গিফট দিলে যতোটা না খুশি হয়, ডেলিভারি চার্জ ফ্রী করে দিলে এর দ্বিগুণ খুশি হয়।রিপিট কাস্টমার বাড়ে।কারণ তারা রিলাক্স থাকে যে কাকলী’স এটিয়্যার থেকে কেনাকাটা মানে কোনো এক্সট্রা চার্জ নেই।তাই মনের আনন্দে কেনাকাটা করা যায়”।
পরিধান শৈলীর’র স্বত্ত্বাধীকারী রাকিমুন বিনতে মারুফ জয়া হাফসিল্ক শাড়ীর উদ্যোক্তা। তিনি এ বিষয়ে জানান, “যখনই কোনো কাস্টমার হাফসিল্ক শাড়ির দাম জানতে চান এবং দাম বলার পর আমি জানাই ডেলিভারি চার্জটা ফ্রি তখন তারা অনেক খুশি হয়। ক্রেতা হিসেবে এতটুকু খাতির পেয়ে তারা আনন্দিত হয় এবং অনেকেই এই আনন্দ সরাসরি ধন্যবাদ জানিয়ে প্রকাশ করে। ডেলিভারি চার্জ ফ্রি করার পর থেকে বিক্রিও বেড়েছে। অনেকেই ডেলিভারি চার্জ ফ্রি শুনলে একাধিক শাড়ি অর্ডার করে। গত বছর শ্রদ্ধেয় রাজিব আহমেদ স্যারের পরামর্শ অনুযায়ী আমি আমার পণ্যের ক্ষেত্রে ডেলিভারি চার্জ ফ্রি করেছিলাম এবং এরপর থেকে আমার অর্ডারের পরিমান বেড়েছে; রিভিউও বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি খুশি হন ঢাকার বাইরের ক্রেতারা। কারণ কুরিয়ার চার্জের জন্য বেশ ভালো একটা চার্জ তাদেরকে দিতে হতো। আবার কুরিয়ার অফিস থেকে পণ্য কালেক্ট করতেও তাদের যাতায়াত ভাড়াসহ অতিরিক্ত একটা খরচ হতো। এখন ডেলিভারি চার্জ ফ্রি হওয়াতে তাদের অর্ডার করার প্রবণতা বেড়েছে । সব মিলিয়ে একজন বিক্রেতা হিসেবে আমি বলবো, ডেলিভারি চার্জ ফ্রি দেয়াতে আমার ক্রেতার সংখ্যা বেড়েছে, রিভিউ বেড়েছে, রিপিট কাস্টমারের সংখ্যা বেড়েছে এবং ক্রেতার সন্তুষ্টির হার বেড়েছে”।
আবায়া ডিজাইনার সিরাজুম মুনিরা, স্বত্ত্বাধীকারী আবায়া স্টোরি, টেকজুমকে বলেন, “প্রতিটি ক্রেতা যখন অর্ডার কমপ্লিট করার পরে জানিতে পারেন কোন ডেলিভারি চার্জ নেই সারাদেশে৷তখন অর্ডার কনফার্ম এর হার বেড়ে যায় সাথে রিপিট কাস্টমার হবার সম্ভাবনাও অনেক বাড়ে৷ডেলিভারি চার্জ ফ্রি দেয়াকে অনেকে লস মনে করলেও আমার কাছে মনে হয় এটি আমার বিজনেস এর সেরা ইনভেস্টমেন্ট যা আমি শিখেছি ই-ক্যাব এর প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট রাজিব আহমেদ ভাইয়ার কাছ থেকে।ক্রেতার জন্য কিছু করলে তা কয়েকগুন ফিরে আসে। আর ডেলিভারি চার্জ ফ্রি দেয়ার ফলে ক্রেতা খুশি নিয়ে নিজে যেমন আরো বেশি অর্ডার করেন সাথে সাথে অন্যদের রেকমেন্ড করেন যেন এখান থেকেই কেনা হয়”।
হোমমেড খাবারের উদ্যোগ এইচ এন্ড এফ ফুড এর স্বত্ত্বাধীকারী সালমা আলম জানান, “প্রতিটি কাস্টমার চায় সে তার কস্টার্জিত টাকা খরচ করে যেন সে আনন্দ পায় অর্থাৎ জিতে। এটি মানুষের স্বভাবজাত ব্যাপার। খাবার খুবই সেনসেটিভ ইস্যু। যখন কোন কাস্টমারকে ডেলিভারি চার্জ ফ্রি দিই তখন সে খুশী হয় তখন সে রিপিট কাস্টমার হয়ে যায়।আমার ক্ষেত্রে অনেকবার তাই দেখেছি”।
এ প্রসঙ্গে এই চমৎকার পরামর্শটি নিয়ে ই-ক্যাবের ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট এবং উই এর এডভাইজর জনাব রাজিব আহমেদ টেকজুমকে বলেন, “ঢাকার মধ্যে ডেলিভারি চার্জ আসে প্রায় ৮০ টাকার মত। নতুন উদ্যোক্তাদের বলি প্রথম ১০০ অর্ডারের ডেলিভারিতে এই চার্জটা কাস্টমারদের কাছ থেকে না নিতে।এতে করে কাস্টমাররা অনেক খুশি হয় এবং রিপিট অর্ডার আর কেনার পর রিভিউ পোস্ট দেবার হার অনেক বেড়ে যায়” তিনি আরো বলেন দেশিপণ্যের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে এটির সুফল বিষয়ে, “ডেলিভারি চার্জ ফ্রি দেবার ফলে অনলাইনে দেশি পণ্যের অর্ডার বেড়ে যাচ্ছে। সারা দেশ থেকে ক্রেতারা দেশি পণ্য কিনতে আগ্রহী হচ্ছে। এতে করে বিক্রেতারা সাময়িক কিছু লসের সম্মুখীন হলেও দীর্ঘ মেয়াদে তাদের জন্য সুফল বয়ে আনছে”।
ক্রেতাদের এভাবেই খাতির করছে দেশিপণ্যের উদ্যোক্তারা এবং এই সেক্টরে অদূর ভবিষ্যতে লম্বা সময়ের জন্য তৈরি করছেন সুনাম ও খ্যাতি। দেশিপণ্যের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে এটি হয়ে উঠেছে চমকপ্রদ এক উপায় যেখানে ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়ই আনন্দ অনুভব করছেন দেশিপণ্যের সাথে থেকে।