বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগের সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে যাকে সন্দেহাতীতভাবে গুরু মানা হয়, সেই আবু সাঈদ খান, প্রিয় সাঈদ ভাই, আজ আমাদের ছেড়ে চিরতরে চলে গেছেন।
সাঈদ ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় এবং যোগাযোগ ১৯৯৫ সাল থেকে। তখন আমি সিটিসেলে কাজ করতাম। সাঈদ ভাই তখন তেল কোম্পানি অক্সিডেন্টালে কাজ করেন। সিটিসেলের সেলস আ্যন্ড মার্কেটিং ডিরেক্টর ফয়সাল খান সাহেবের সাথে সখ্যতার সুবাদে তিনি নিয়মিত সিটিসেলে আসতেন। তিনি তখন টেলিযোগাযোগ খাতের ওপর বিশেষায়িত সাংবাদিক হিসেবে পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করেছেন। আর আমাকে ডেকে নিয়ে অথবা আমার কাছে এসে তিনি প্রযুক্তিগত বিষয়গুলো নিয়ে বুঝতে চাইতেন। সেই থেকে তাঁর সাথে আমার যোগাযোগ।
পরবর্তীতে ২০১১-২০১২ সালে সাঈদ ভাই মোবাইল অপারেটরদের অ্যাসসিয়েশন অ্যামটবের সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালনকালে তাঁর সাথে আমার নিয়মিত ও ঘন ঘন যোগাযোগ হতো। ইন্ডাস্ট্রির বিভিন্ন ইস্যুতে একসাথে অনেক কাজ করেছি। বিভিন্ন মিটিং-এ তিনি তথ্য সহযোগে বক্তব্য রাখতেন। অপর পক্ষ তাঁর সাথে যুক্তিতে সহজে পেরে উঠত না।
প্রযুক্তি বোঝার ব্যাপারে সাঈদ ভাইয়ের আগ্রহ ছিল অপরিসীম। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনার ও কনফারেন্সে নিয়মিতভাবে অংশ নিতেন। সেইসাথে প্রযুক্তি ও ব্যবসাবিষয়ক বিদেশি ম্যাগাজিন সাবস্ক্রাইব করে পড়তেন। ইংরেজিতে তাঁর লেখার হাত ছিল অনবদ্য। ডেইলি স্টার সহ বিভিন্ন পত্রিকায় লিখতেন। দারুণ সাহসী মানুষ ছিলেন। টেলিযোগাযোগ খাতে অনিয়মের বিরুদ্ধে তাঁর ক্ষুরধার লেখনী ছিল সদা চলমান।
সাঈদ ভাইয়ের সাথে আমার অনেক স্মৃতি। একটা মজার অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি। তখন ২০০১ সাল। আমি গ্রামীণফোনে কাজ করি। ঢাকায় IEEE-এর তিন দিনের এক কনফারেন্সে আমার একটা প্রেজেন্টেশন ছিল ২য় দিনে। সাঈদ ভাই আমার কাছ থেকে আগেই পাওয়ারপয়েন্ট স্লাইড চেয়ে নিলেন। আমার প্রেজেন্টেশনের আগেই দেখি সাঈদ ভাই অবজার্ভার পত্রিকার প্রথম পাতায় কনফারেন্সের উদ্বোধনের খবরের সাথে বেশ বড় পরিসরে আমার প্রেজেন্টেশনের (যা আমি তখনও দেইনি) খবর(!) লিখে ছাপিয়ে দিয়েছেন। আমি বললাম, “সাঈদ ভাই, এ কী করলেন?” তিনি জবাব দিলেন, “আরে রাখ মিয়া! দ্বিতীয় দিনে কী প্রথম দিনের মতো কাভারেজ পাওয়া যাবে?” এ-ই ছিল আমার সাঈদ ভাই!
অসুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত সাঈদ ভাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সক্রিয় ছিলেন। গত কয়েক বছরে তাঁর সাথে যোগাযোগ কমে গেলেও ফেসবুক ও টুইটারে আমি তাঁকে ফলো ও কমেন্ট করতাম। এজন্য মনে হতো যেন সাঈদ ভাইয়ের সাথে যোগাযোগের মধ্যেই আছি। তাই তাঁর এই অকাল প্রস্থানে খুব শূন্য শূন্য লাগছে। তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি। ওপারে ভালো থাকুন, প্রিয় সাঈদ ভাই।
লেখক : মাহমুদ হোসেন এর ফেসবুল ওয়াল থেকে সংগৃহীত