শহুরে এবং গ্রামীণ পরিবেশের এক সুন্দর মিলনমেলা আমাদের টাঙ্গাইল জেলা। এখানে যেমন আছে শহুরে পরিবেশের স্বাদ, আছে ছোট বড় মাঝাড়ি কুটির শিল্প, মিল কারখানা তেমনি আছে গ্রামে বিস্তৃত ফল, ফসল এর জন্য উপযুক্ত আবাদী জমি।
আছে গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ, চারপাশ বেষ্টিত কত নদী যেমন যমুনা, ধলেশ্বরী, লৌহজং, বংশী, খিরু নদী। আছে প্রতিটা উপজেলা কে ঘীরে ছোট বড় বীল এবং বিলের মাছ।
এই শহর এ শিক্ষার সময়কাল চলে আসছে সেই পাচীন যুগ থেকেই। কেননা এ এলাকায় এত রাজা জমিদার ছিল, তারা ছিলেন সচেতন এবং শিক্ষার কদর বুঝে প্রতিষ্ঠা করেছেন অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যার কারণে প্রাচীন কিছু বিদ্যাপীঠ আছে এ জেলায়৷ আছে স্বানামধন্য স্কুল প্রতিষ্ঠান সহ কলেজ, ভার্সিটি এবং মেডিকেল কলেজ।
কত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জন্মস্থান এ জেলায়। কত রাজা জমিদারদের শাসনামল ছিলো এখানে যার স্মৃতিচিহ্ন স্বরূপ এখনো আছে জমিদারবাড়ি, রয়েছে অনেক প্রাচীন মসজিদ, মন্দির। যা সব ই এখন দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে এবং সব ই পর্যটন এরিয়ার মাঝে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে ই-কমার্স এর হাত ধরে৷। এছাড়া ও আছে যমুনা রিসোর্ট, মধুপুর জাতীয় উদ্যান, ডিসি লেক, এলেংগা রিসোর্ট সহ অনেক দর্শনীয় স্থান।
আমরা অর্থনৈতিক বিবেচণায় টাঙ্গাইল কে বিবেচণা করতে চাই তাহলে বলতে হয় টাঙ্গাইল এমন জেলা যার আনাচে কানাচে আছে কাজে লাগানোর মত উপযুক্ত সোর্স।
টাঙ্গাইল এ যেমন আছে তাঁতশিল্প যা আমাদের জেলায় যা শুধু দেশের মধ্যে সবথেকে বড় কুটির শিল্প এই তাঁতশিল্প। টাঙ্গাইল এর শাড়ি জুড়ি মেলা ভার এবং শাড়ির যে কত শত ডিজাইন তাঁতীরা করে থাকে তার কোন সঠিক হিসাব ই নেই।৷ একটা সময় যেমন শুধু বসাক সম্প্রদায় এ এলাকায় তাঁত বুনতো এখন মুসলমান রা ও তাঁতে কাপড় বুনে। শুধু শাড়ি না আধুনিকতার ছোঁয়াতে এখানে হয় উন্নতমানের থ্রিপিছ সহ গামছা, লুঙ্গি, বেডশিট, ওড়না বিভিন্ন কিছু।। সারাদেশের প্রয়োজন মিটিয়ে তা চলে যায় বিদেশে। ভারত, ইউরোপ, আমেরিকা অনেক জায়গায় রপ্তানি হয় এইসব তাঁতের পণ্য।
এছাড়াও এখানে আরেকটি কুটিরশিল্প বেশ লাভজনক এবং গৌরবের সাথে জায়গা করে নিয়েছে তা হলো বাঁশ ও বেতশিল্প৷ এখানকার শীতলপাটি বিদেশে ও রপ্তানি হয়৷ বাঁশ এর তৈরি কুলা, ডালা, চালা, টুকরি, ধামা, ফুলের ঝাড়, পাখির বাসা, ট্রে, মাথার ক্যাপ আরো কত কিছু যে রয়েছে যার কদর এখন বেড়েই চলছে রুচিশীল সমাজে।
কুটিরশিল্পের কথা যখন আলোচনা করি তখন বারবার ই মনে হয় মধুপুর এর গাড়ো সম্প্রদায় এর কথা৷ যেখানে নারীরা ঘরে বসে থাকে না, বিভিন্ন কৃষিকাজ করে এবং এর পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগ এ গড়ে উঠেছে বস্ত্রশিল্প কারখানা৷ যেখানে নারীরা কাজ করছে, তৈরি করছে শাড়ি, লুঙ্গি এবং ঘর সাজানো বিভিন্ন সৌখিন জিনিসপত্র, দোলনা, টিস্যুবক্স, র্যাক সহ অনেক কিছু৷ সবথেকে আশ্চর্যজনক হলো এসব কিছুই তারা তৈরি করে আনারস এর পাতা এবং পচা কলাগাছ থেকে এক বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি ফাইবার থেকে যাকে পাইনএপেল ফাইবার বা ব্যনানা ফাইবার বলে।
টাংগাইল এর মৃৎশিল্পের কথা ও ছিলো লোকমুখে সমাদৃত৷ যা এখন বিলীন এর পথে অথচ সেই সুনামধন্য মৃৎশিল্প আবারো মাথা নাড়া দিয়ে উঠতে পারে ই-কমার্স এর মাধ্যমে। কেননা এখনো কুমার রা আশায় দিন গুণে যে তাদের এ পৈতৃক শিল্প গুলো অবশ্যই হাল ধরবে কেউ না কেউ।
কাঁসা-পিতল শিল্প যা ছিলো একটা সময় গর্বের কারণ তা আর সেই গৌরবের জায়গাটা ধরে রাখতে পারেনি। তবে হ্যা দিন দিন সেই সুনাম আবার ফিরছে বলে ই আশা করি এখন। কেননা ই-কমার্স এর মাধ্যমে যেমন এই পণ্যগুলো সম্পর্কে মানুষ কে সচেতন করা সহজ তেমনি এগুলো দেশ ছাড়িয়ে বিদেশ ও ডেলিভারি দেয়া সম্ভব।
এখানে ছিলো কাগজশিল্প, কালের গর্ভে সব হাড়িয়ে যেতে বসেছে। গড়ে উঠেছে অনেক ক্ষুদ্রশিল্প। যেমনঃ প্রসাধনী, কালী, ধাতবদ্রব্য, ছাতা, জর্দা, রুটি-বিস্কুট,লবণ, তৈল, আসবাব পত্র, সাবান কারখানা, জুতা কারখানা, চিড়ার মিল, অটো রাইস মিল, আইসক্রিম কারখানা, তুলা স্পিনিং মিল, ছাপা কারখানা সহ আরো অনেক ক্ষুদ্র শিল্প।
আমাদের এ জেলার অনেক বড় শক্তি হলো কৃষিখাত। প্রতিটি উপজেলায় ধান চাষ হয় প্রচুর পরিমাণে। তাছাড়া ও হয় পাট, গম, ভুট্টা, বাদাম, আঁখ, সরিষা, আলু, পিঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, কত ধরনের সবজি, আরো অনেক কিছু।
বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হয় ফল চাষ।। এখানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ই গড়ে উঠেছে আমবাগান, পেয়ারা বাগান, লিচু বাগান, লেবু বাগান, কুল, ড্রাগন ফল, মাল্টা সহ আরো কত কিছু। ইভেন বিদেশি ফল যেমন ত্বীন, রামবুটান, অ্যাভাকোডা সহ আরো বেশ কিছু মুখরোচক ফল এর বাণিজ্যিক চাষাবাদ শুরু হয়েছে। তাছাড়া আনারস এর রাজধানী যেহেতু মধুপুর এর জলছত্র বাজার, একে নিয়ে নতুন করে আর কি ই বা বলার আছে। প্রচুর পরিমাণে কলা হয় এখানে। দূর দূরান্ত থেকে এসব আমারস কলার পাইকার রা নিয়ে যায়৷
অবাক হলে ও সত্যি যে মধুপুর এ এখন বাণিজ্যিক ভাবে কফির চাষ হয়। মাশরুম চাষ হয় এবং এসব ই সফল। মৎস্য খাত ও এ জেলায় অনেক বেশি সম্ভাবনাময় যেহেতু এখানে অনেল বিল আছে এবং আছে নদীর মাছ।।
টাঙ্গাইল এ আছে অনেক নার্সারী। সদর উপজেলা সহ প্রতিটি জেলায় রয়েছে নার্সারী। আছে মৌমাছি থেকে আর্টিফিশিয়াল ভাবে মধু উত্তোলন এর নার্সারী ও।এছাড়া ও রয়েছে ছোট বড় অনেক মুরগীর খামার, ছাগল, গরুর খামার।
এসবের পাশাপাশি আমরা যদি ই-কমার্স এর সম্ভাবনাময় খাত এর কথা বিবেচনায় আনি অবশ্যই ঘুড়ে ফিরে দেখার মত আছে তো অনেক জায়গা কিন্তু ই-কমার্স এ জায়গা পায়নি তেমন কিছুই৷ এখন ও জেলায় ঘুড়তে আসলে পর্যটকদের দূর্ভোগ পোহাতে হয়, এখন ও তেমন কোন ইনফরমেশন পাইনা আমরা গন্তব্যস্থলের, যা খুব সহজে ই সমাধান হতে পারে এই দিকে উদ্যোগ নিলে।
সবশেষে বলতে চাই টাঙ্গাইল এর পোড়াবাড়ির চমচম এর কথা। যার সুনাম বিশ্বজুড়ে রয়েছে। ভ্রমণ পিয়াসী মানুষ যেমন এখানে এসে খায় তেমনি যাওয়ার সময় নিয়ে যেতে ও ভোলেনা এ মিষ্টি। আর হ্যা শুধুমাত্র টাঙ্গাইল এ ই এই মিষ্টি হয়। আশ্চর্যজনক হলেও এটাই সত্যি যে এখানকার মিষ্টির সেইম রেসিপি তে বানালেও দেশের কোথাও এর মত স্বাদ হয়না। তাই এই মুখরোচক চমচম নিতে পারে ই-কমার্স এর অনেক বড় একটা খাত। যেহেতু এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অনেক ভালো তাই যেকোন প্রান্তে বসে যে কেউ নিতে পারবে এ মিষ্টির স্বাদ। এছাড়া ও দই, ঘি, সন্দেশ তো আছেই।
ইন্টারনেট জীবন কে করেছে সহজ। সব ই হাতের মুঠোয়, এক্ষেত্রে টাঙ্গাইল জেলা হতে পারে ই-কমার্স এর সেরা একটি সম্ভাবনাময় জেলা যেখানে ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের হাত ধরে উঠে আসবে হাড়িয়ে যাওয়া পণ্য, সম্ভাবনার তৈরি হবে অনেক নতুন পণ্যের সাথে তৈরি হবে অনেক নতুন কর্মসংস্থান এর যা আমাদের বেকারত্ব দূরীকরণে অনেক সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। আমাদের শুধু নিজেদের জায়গা থেকে তুলে ধরতে হবে আমাদের ঐতিহ্য তবেই জেলা হবে ইন্টারনেট এর আলোয় আলোকিত ও সমৃদ্ধ টাঙ্গাইল জেলা।
লেখক, রোখসানা আক্তার পপি
ইপ্পি শপিং