বর্তমান সময়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। মোবাইল ফোন এখন মানুষের পকেটে পকেটে। ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে রাত্রে ঘুমোতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত মোবাইল এখন সঙ্গী বহু মানুষের। কিন্তু জানেন কি, মোবাইল ফোনের এই নিত্য ব্যবহার কীভাবে ক্ষতি করছে আপনার শরীরের?
আমাদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে আটজনই ঘুমানোর সময় ফোন বন্ধ করি না৷ অ্যালার্ম দিয়ে ফোনকে বালিশের নিচে নিয়ে শোওয়াও অনেকের অভ্যাস৷ কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলেন ফোন ও মস্তিষ্কের মধ্যে অল্প তফাত থাকলে তা ঘুমের পরিমাণ ও ঘুমের মান দু’য়ের ওপরেই প্রভাব ফেলে৷ ফোন কাছে নিয়ে শুলে তা আমাদের স্নায়ুকে উত্তেজিত রাখে৷ অবচেতনে আমরা পরের ফোন অথবা ম্যাসেজের জন্য অপেক্ষা করে থাকি৷ যা আমাদের বেশিক্ষণ চোখ বন্ধ করে রাখতে দেয় না৷ তাছাড়া রাতের অন্ধকারে ফোনের স্ক্রিনের আলো মানুষের চোখের রেটিনার পক্ষে ক্ষতিকারক৷ এই আলোই আমাদের মস্তিষ্ককে জানান দেয় ফোন অথবা ম্যাসেজ আসার প্রাথমিক খবর৷ এই আলো তন্দ্রার জন্য প্রয়োজনীয় হরমনকে নিঃসরণ হতে বাধা দেয়৷ যার ফলে আমরা অনেক বেশি সচেতন থাকি৷ মস্তিষ্ক থেকে অন্তত ২০ সেন্টিমিটার দূরে ফোন রেখে ঘুমানো উচিত৷ তাতে ফোনের রেডিয়েশনের প্রভাব ৯৮ শতাংশ কম হয়৷ মারাত্বক এই অভ্যাসটি যদি পরিবর্তন না করেন তাহলে আপনার কঠিন কোন রোগ শরীরে বাসা বাধতে পারে।
সম্প্রতি চিনের সিনহুয়া ইউনিভার্সিটি আর আমেরিকার ইনস্টিটিউট অফ এনবিসি ডিফেন্স-এর গবেষকরা দু’টি পৃথক গবেষণায় দেখিয়েছেন, মোবাইল ফোনের সর্বক্ষণের সঙ্গ, বিশেষত রাত্রে ঘুমনোর সময়ে শরীরের কাছাকাছি মোবাইল ফোন রাখা অত্যন্ত বিপজ্জনক। এমনকী, পরিস্থিতি বিশেষে এই অভ্যাস প্রাণঘাতী বলে প্রতিপন্ন হতে পারে। ভারতীয় গণমাধ্যম এবেলা এমন খবর প্রকাশ করেছে।
ঠিক কীভাবে শরীরের ক্ষতি করে মোবাইল ফোন? গবেষকরা বলছেন, আজকাল অধিকাংশ মোবাইল ফোনেই ব্যবহৃত হয় লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি। এই ব্যাটারি থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় প্রায় একশোটি গ্যাস নির্গত হয়, যেগুলি মানবশরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর।
এই সমস্ত গ্যাসের মধ্যে রয়েছে কার্বন মনোক্সাইডের মতো বিষাক্ত গ্যাসও। এই কার্বন মনোক্সাইড যদি অতিমাত্রায় শরীরে প্রবেশ করে তাহলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
তবে গবেষকরা জানাচ্ছেন, সাধারণভাবে মোবাইলের ব্যাটারি থেকে যে পরিমাণ গ্যাস নির্গত হয় তা প্রাণঘাতী মাত্রার নয়। তবে বিষয়টি সম্পর্কে মোবাইল গ্রাহকদের সচেতনতা অবশ্যই প্রয়োজন।
বিশেষত যাঁরা রাত্রে ঘুমনোর সময়ে মোবাইল ফোনটিকে শোওয়ার ঘরেই রেখে দেন, সেইসঙ্গে ঘরের জানলা-দরজাও বন্ধ রাখেন, মোবাইলের প্রভাবে তাঁদের শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অবশ্য গবেষকরা জানিয়েছেন, শুধু রাত্রে নয়, মোবাইলের সান্নিধ্য দিনের যে কোনও সময়েই ক্ষতিকর। এবং মোবাইল বা ট্যাবের ব্যাটারি যদি নিম্নমানের হয়, তাহলে তা থেকে নির্গত গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, ফলে শারীরিক ক্ষতির সম্ভাবনাও বাড়ে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, যেসব মোবাইল বা ট্যাবলেটের ব্যাটারি চার্জিং-এর সময়ে গরম হয়ে যায়, সেগুলি সাধারণত বেশি ক্ষতিকর হয় শরীরের পক্ষে।