”সুন্দর আগামী কালের জন্য আজ লিঙ্গসমতা দরকার” প্রতিপাদ্য কে সামনে রেখে বিশ্বব্যাপী আজ পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস।
শিল্প-সাহিত্য-সহ সমাজের সর্বস্তরে মহিলাদের অবদানকে স্বীকৃতি ও লিঙ্গবৈষম্য দূর করে নারীর প্রতি সম্মান জানাতে প্রতি বছর ৮ মার্চ বিশ্বজুড়ে নারী দিবস পালিত হয়। বাংলাদেশেও যথাযথ মর্যাদায় পালন করা হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস।
দেশি পণ্যের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে নারীর অংশগ্রহণ ও ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক কে কাজে লাগিয়ে স্বল্প পুঁজিতে উদ্যোক্তা হয়ে উঠছেন নারীরা। সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও ধারণা করা হয় দেশে ফেসবুক ভিত্তিক ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের ৬০ ভাগের বেশি নারী। তারা শৌখিন পণ্য, পোশাক, শাড়ি-গয়না, খাবার, মসলা, মাছ, আম, কৃষি পণ্য সহ নানা রকম দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করছেন। হ্যান্ডপেইন্ট, হাতে তৈরি জিনিস, কনটেন্ট রাইটিং সহ বিভিন্ন ভাবে নিজেদের মেধা কে কাজে লাগাচ্ছেন নারীরা। এখাতে নারীর অংশগ্রহণ দিন দিন বাড়ছে।
দেশি পণ্যের অগ্রযাত্রায় নারীর ভূমিকা নিয়ে জানতে কয়েকজন ফেসবুক ভিত্তিক দেশি পণ্যের উদ্যোক্তার মন্তব্য নেওয়া হয়েছে। ধারাবাহিক ভাবে মন্তব্য গুলো তুলে ধরেছি-
কাকলী তালুকদার, স্বাত্বাধিকারী- ককলী’স এট্যায়্যার : আমাদের দেশের নারীরা মেধা ও মননে সবসময়ই এগিয়ে। তারা তাদের মেধা ও প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সেক্টরে যোগ্যতার প্রমাণ রেখে চলেছে। তার ধারাবাহিকতায় দেশের ৬৪ টি জেলার নারীরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশি পণ্য এগিয়ে নিচ্ছে। কেউ উদ্যোক্তা হিসেবে দেশি পণ্যের বাজার তৈরিতে ভূমিকা রাখছেন আবার কেউ ক্রেতা হিসেবে বাজার বড় করতে অবদান রাখছেন। ই-কমার্সের কল্যাণে ঘরে বসে নারীরা দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে, সেই সাথে দেশি পণ্যকে এগিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করতে অবদান রাখছেন।
নিগার ফাতেমা, স্বত্বাধিকারী- আরিয়াস কালেকশন : বাংলাদেশ ছোট হলেও হরেক রকম দেশীয় পণ্য রয়েছে। বর্তমান সময়ে ই-কমার্সের মাধ্যমে এসব পণ্যের প্রচার বেড়েছে। মানুষ নিজের চাহিদা পূরণ করতে দেশি পণ্য কেনাকাটা করছে। আমার মনে হয় দেশীয় পণ্যের প্রচারে পুরুষের চেয়ে নারীর ভূমিকা বেশি। ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিক ২০২০’ এর ফলাফল অনুযায়ী পুরুষ ও নারীর অনুপাত প্রায় সমান। বর্তমান যুগে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে। বিশাল সংখ্যক নারীরা কাজ করছে ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে।
দেশি পণ্যকে গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষিত নারীরা গড়ে তুলছে নিজের উদ্যোগ। তারা দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করছে, কন্টেন্ট তৈরি করছে, দেশ ও দেশের বাহিরে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে, নতুনত্ব নিয়ে আসছে এবং সর্বোপরি তৈরি করছে পণ্যের চাহিদা।
উম্মে সাহেরা এনিকা, স্বত্বাধিকারী- তেজস্বী : সকল নারীদের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শুভেচ্ছা। একজন নারী সংসার, সন্তান সামলে যখন একটি উদ্যোগ পরিচালনা করেন তখনই আমরা তার শক্তি সম্পর্কে কিছুটা ধারনা পেয়ে যাই। বাংলাদেশে মোট উদ্যোক্তার শতকরা প্রায় ৬০ ভাগই নারী৷ দিন দিন এই সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পোশাক, গয়না, ঘরে তৈরী খাবার সহ নানান ধরনের দেশীয় পণ্য নিয়ে নারীরা অনলাইনে কাজ করছেন। নিজের উপার্জিত অর্থ দিয়ে সংসারের হাল ধরছেন৷ ঘরে বাইরে সমান তালে কাজ করছেন৷ শুধু শহরাঞ্চল নয় বরং ইউনিয়ন পর্যায়ে নারীরাও স্বাবলম্বী হচ্ছে। অনলাইনে পড়াশোনা করারও সুযোগ পাচ্ছেন, ফলে তারা এখন অনেক দক্ষ ও আত্নবিশ্বাসী হয়ে উঠছেন। এই দক্ষতা নারীদের নানান প্রতিবন্ধকতাকে পেরিয়ে নিজের কাজে আরো ভালো করার চেষ্টা করছেন৷ নারীরা দেশের জিডিপি বৃদ্ধিতে অবদান রাখছেন৷
রোখসানা আক্তার পপি, স্বত্বাধিকারী- ইপ্পি শপিং : “Gender equality today for a sustainable tomorrow” বিশ্বজুড়ে এই থিমে এবার পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস৷ নারীর এক রূপ মা, নারীর অন্যরূপ বোন, নারীর ই আরেকটি রূপ সহধর্মিনী, নারীই নিজের আদরের কন্যা, প্রতিটা রূপেই সৃষ্টির শুরু থেকে এখনো পর্যন্ত মানবসভ্যতার টিকে থাকার পিছনে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা সমান ভাবে ভূমিকা রেখে আসছে। তাহলে এটাই তো ধ্রুব সত্য যে সুন্দর টেকসই আগামীর জন্য অবশ্যই নারী পুরষের সমতা ভীষণ গুরুত্ত্বপূর্ণ। নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা বাড়ছে অকল্পনীয় ভাবে। সব ধরনের পেশায় এগিয়ে যাচ্ছে নারীরা। অবদান রাখছে পরিবার, সমাজ ও অর্থনীতিতে। প্রতিটি জায়গায় নারীর প্রতি সন্মানবোধ, সহযোগী মনোভাব দেশকে আরো এগিয়ে নিতে পারে। সকলকে নারী দিবসের অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
রাকিমুন বিনতে মারুফ জয়া, স্বত্বাধিকারী- পরিধান শৈলী : বর্তমানে নারীরা কোন দিক থেকে পিছিয়ে নেই। যাদের ঘরের বাইরে গিয়ে চাকরি করার সুযোগ নেই, তারা ঘরে বসেই নিজের একটি উদ্যোগের মাধ্যমে নিজের পরিচিতি তৈরি করছে, সাবলম্বী হচ্ছে। নারীদের এই এগিয়ে চলা দেশি পণ্যের অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দেশি পণ্য গুলো সোর্সিং করা সহজ এবং এসব পণ্য নিয়ে কাজ করতে পুঁজিও লাগে তুলনামূলক কম। তাই দেশি পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করা নারীদের জন্য সহজতর। ইন্টারনেটের কল্যাণে ঘরে বসে নারীরা বিভিন্ন ধরনের দেশি পণ্য নিয়ে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। ফলে দেশি পণ্যের অনেক উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। এতে করে দেশি পণ্যের চাহিদা, বিক্রি ও জনপ্রিয়তা বাড়ছে। যা দেশি পণ্যের অগ্রযাত্রায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
সিরাজুম মুনিরা, স্বত্বাধিকারী আবায়া স্টোরি : ঘরে বসেই পরিবারের হাল ধরার উদাহরণ তৈরি করছেন নারীরা৷ ইন্টারনেটের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশীয় পণ্যকে এগিয়ে নিতে নারীদের এই চেষ্টা ও যাত্রা সফল হোক সুন্দর হোক এই কামনা করছি৷ পৃথিবীর সকল নারীদের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা প্রতিদিন নতুন ভাবে নিজেকে এগিয়ে নিতে চেষ্টা করে যাওয়ার জন্য।