গ্রাহকের সুবিধামতো সময়ে লেনদেনের সুবিধায় দেশ জুড়েই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এটিএম বুথগুলো। ব্যাংকের চেয়ে এসব বুথেই নগদ টাকা জমা ও উত্তলনে বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন গ্রাহক। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দেশেজুড়ে বিভিন্ন ব্যাংকের ১৩ হাজার ৪২৮টি এটিএম বুথ স্থাপিত হয়েছে গত মে মাস পর্যন্ত সময়ে। এর মধ্যে শহরাঞ্চলে ৯ হাজার ৪০৯টি আর গ্রামাঞ্চলে ৪ হাজার ১৯টি।
এটিএম ছাড়া সিআরএমের (ক্যাশ রিস্লাইকিং মেশিন) মাধ্যমেও নগদ টাকা উত্তোলন করা যায়। দেশের বেসরকারি খাতের ব্র্যাক, সিটি, ঢাকা ব্যাংকসহ অনেক ব্যাংক এখন এটিএমের বদলে সিআরএমের প্রতি ঝুঁকছে। সিআরএমে টাকার উত্তোলনের পাশাপাশি নগদ জমারও সুযোগ রয়েছে। এ কারণে ধীরে ধীরে সিআরএমের সংখ্যা বাড়ছে। গত মে মাস শেষে দেশে সিআরএমের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪৫০। এসব সিআরএমের সিংহভাগই শহরাঞ্চলে, ৩ হাজার ৯৮৫টি।
কিন্তু ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানে সৃষ্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ‘সরকারহীন’ সময়ে দুস্কৃতকারীদের উত্থানে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে দেশের অভ্যন্তরীন আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি। এর ফলে নিরাপত্তার অভাবে দেশজুড়ে বেশির ভাগ ব্যাংকের এটিএম বন্ধ রাখা হয়। এতে নগদ টাকা উত্তলন ও জমা দিতে গিয়ে বিপাকে পরছেন গ্রাহক। রাজধানীর বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে এই সঙ্কটটা ছিলো চোখে পড়ার মতো। সপ্তাহজুড়ে এই সঙ্কট ঘনীভূত হয়েছে। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, গত কয়েকদিন ধরে অপর্যাপ্ত নিরাপত্তার কারণে এটিএম বুথে টাকা পাঠানো যায়নি। তাই বেশিরভাগ বুথে টাকা নেই। এমনকি ব্যাংকের অনেক শাখাতেও টাকার অভাব। টাকা তুলতে অনেককে একাধিক বুথে দৌড়াদৌড়ি করতে দেখা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্যাংকের এটিএমে অর্থ সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যম সারির এক কর্মকর্তা জানান, স্বাভাবিক সময়ে চারটি ব্যাংকের এটিএমে দিনে তাঁরা প্রায় ৩০ কোটি টাকা সরবরাহ করেন। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার সবরবাহ করতে পেরেছেন মাত্র ১০ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রয়োজনের তিন ভাগের এক ভাগ অর্থ সরবরাহ করতে পেরেছে প্রতিষ্ঠানটি।
ঢাকার মধ্যে মতিঝিল, পল্টন, দিলকুশা, ফকিরাপুল ও গুলিস্তান, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, শ্যামলী, কলাবাগান ও সায়েন্স ল্যাব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হাতে গোনা কিছু এটিএম বুথ খোলা রয়েছে। এসব এলাকার মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ইউসিবি ব্যাংকসহ বেশকিছু ব্যাংকের এটিএম সেবা বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ব্রাক ব্যাংকসহ অল্প কিছু ব্যাংকের এটিএম বুথ খোলা রয়েছে। বন্ধ থাকা বেশিরভাগ ব্যাংকের বুথের নিরাপত্তাকর্মীদেরও পাওয়া যায়নি। যাদের পাওয়া গেছে তারা জানিয়েছেন, নিরাপত্তার অভাবে বুথগুলোতে টাকা সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি।
এ নিয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এবং ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন বলেছেন, দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে খুদে বার্তার মাধ্যমে এক লাখ টাকার বেশি উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, বেশির ভাগ ব্যাংকের এটিএমের অর্থ সরবরাহের কাজটি তৃতীয় পক্ষ করে থাকে। কয়েক দিন ধরে নিরাপত্তাহীনতার কারণে তৃতীয় পক্ষের এ সেবা বন্ধ রয়েছে। এ কারণে অনেক ব্যাংকের এটিএমে প্রয়োজনীয় অর্থ জোগান দেওয়া সম্ভব হয়নি। আশা করছি, চলতি সপ্তাহের মধ্যে এ পরিস্থিতির উন্নতি হবে।