চাইলে নিউজিল্যান্ডে আরাম আয়েশের জীবন কাটাতে পারতেন ডা. এড্রিক বেকার। কিন্তু তা না করে বাংলাদেশের মানুষের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ কাটিয়েছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলে। টানা ৩২ বছর টাঙ্গাইল জেলার মধুপুরের কালিয়াকুড়ি গ্রামের দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা দিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, তাদের জন্য গড়ে তুলেছিলেন হাসপাতালও। স্বদেশে আরাম-আয়েশের জীবন ত্যাগ করে মানবসেবায় তার এই অবদানে মুগ্ধ হয়ে সবাই তাকে ডাক্তার ভাই বলে ডাকতেন।
দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে ২০১৫ সালে মারা যান ডা. এড্রিক বেকার। অবশ্য অসুস্থ হওয়ার পর অনেকেই তাকে ঢাকা নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে চেয়েছিলেন। তবে রাজি হননি গ্রামের মানুষের চিকিৎসায় জীবনের প্রায় অর্ধেক সময় ব্যয় করা এই ডাক্তার। নিজের তৈরি হাসপাতালেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এড্রিক বেকার। তবে, মৃত্যুর আগে নিজের একটা ইচ্ছার কথা বলে গিয়েছিলেন তিনি। চেয়েছিলেন এ দেশের কোনো ডাক্তার যেন গ্রামে এসে তার প্রতিষ্ঠিত এই হাসপাতালের হাল ধরেন। কিন্তু হানিফ সংকেতের ইত্যাদিতে প্রচারিত প্রতিবেদন অনুসারে- এ দেশের একজন ডাক্তারও তার সেই আহ্বানে সাড়া দেননি।
বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, বাংলাদেশের কেউ সাড়া না দিলেও এড্রিক বেকারের আহ্বানে সুদূর আমেরিকা থেকে ছুটে এসেছেন আরেক মানবতাবাদী ডাক্তার দম্পতি জেসিন এবং মেরিন্ডি। আমেরিকার বিলাসবহুল জীবন পেছনে ফেলে বাংলাদেশে এসে গ্রামের ধুলামাটির সঙ্গে সংসার পেতেছেন শুধু কিনা সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে চিকিৎসা দেবেন বলে। শুধু যে নিজেরা এসেছেন তা নয়, নিজেদের ফুটফুটে সন্তানদেরও সাথে করে নিয়ে এসেছেন। তাদের শিক্ষার জন্য গ্রামের স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছেন। গ্রামের শিশুরা এখন তাদের খেলার সাথী।
ইতোমধ্যে তারা কিছু বাংলা ভাষা আয়ত্ত করে ফেলেছেন। থাকছেন মাটির ঘরে। স্থানীয়দের সাথে মিশে যেতে ডা. জেসিন লুঙ্গি এবং তার স্ত্রী মেরিন্ডি পরছেন শাড়ি।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) বিটিভিতে প্রচারিত হানিফ সংকেতের ইত্যাদি অনুষ্ঠানে এই দম্পতিকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পরপরই তা সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। দরিদ্র মানুষদের জন্য নিউজিল্যান্ডের চিকিৎসক এড্রিক বেকারের প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালের হাল ধরে প্রশংসায় ভাসছেন আমেরিকান এই দম্পতি।
ডা. জেসিন হানিফ সংকেতকে জানান, ডা. এড্রিক বেকার বেঁচে থাকার সময় কালিয়াকুড়ির এই হাসপাতালটি পরিদর্শন করেছিলেন। পরে ডাক্তার ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে জেসন অস্থির হয়ে ওঠেন। কিন্তু তখন নিজের প্রশিক্ষণ ও ছেলেমেয়েরা ছোট থাকার কারণে জেসন বাংলাদেশে আসতে পারেননি।
ইত্যাদি অনুষ্ঠানের ডাক্তার দম্পতির প্রতিবেদনটি এখন সোশ্যাল মিডিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। নেটিজেনরা ভিডিওটি শেয়ার দিয়ে জেসিন-মেরিন্ডি দম্পতিকে প্রশংসা করছেন। তারা বলছেন, যে দেশে যাওয়ার জন্য দুনিয়ার সবাই পাগল সেই আমেরিকার বিলাসবহুল জীবন দূরে ঠেলে বাংলাদেশে এসে দরিদ্র মানুষের সেবা করে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তারা তা নজিরবিহীন বলেও দাবি করছেন। পাশাপাশি নিজের দেশের দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা দিতে কেউ এগিয়ে না আসা দেশবাসীর জন্য লজ্জার মনে করছেন তারা।