১৯৮৯ সালে টাংগাইলে জন্মগ্রহণ করেন নহরে জান্নাত মিষ্টি। বাবা ফজলুল করিম ও মা সায়মা করিম এর দুই সন্তানের মধ্যে মিষ্টি কনিষ্ঠ। স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া টাংগাইল শহরে। চঞ্চল প্রকৃতির মিষ্টি লেখাপড়া, খেলাধুলা আর সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পারদর্শী ছিলেন। পারিববারিক সিদ্ধান্তে ২০০৭ সালে বেসরকারী চাকুরীজীবি কে. এম. মেহ্দী হাসানের সঙ্গে বিয়ে হয় মিষ্টির। বর্তমানে মিষ্টি দুই সন্তানের জননী ও সফল নারী উদ্যোক্তা। টেকজুম থেকে নহরে জান্নাত মিষ্টির সাক্ষাতকার নিয়েছেন মোঃ দেলোয়ার হোসেন।
উদ্যোক্তার আগ্রহ কিভাবে তৈরী হলো?
আমার ছেলে মানসিব এর জন্মের পরপরই নিউমোনিয়া হয়। সামনে অনার্স ২য় বর্ষের শেষ পরীক্ষা। ঠিক সে সময়টাতে ওর অবস্থা বেশী খারাপ হয়। লেখাপড়া অথবা ছেলে যে কোনো একটা অপশন বেছে নিতে হবে! তাই আর হলো না লেখাপড়া! সেই থেকেই মনে একটা সুপ্ত ইচ্ছে ছিলো জীবনে কিছু তো অবশ্যই করবো! যা করতে গিয়ে অন্যের মুখাপেক্ষী হতে হবে না আমার সন্তানদের। সে চিন্তা থেকে উদ্যোক্তা হওয়ার আগ্রহ তৈরী হয়েছে।
অন্য উদ্যোগ না নিয়ে ই-কমার্স উদ্যোগ কেনো নিলেন?
ফেসবুকে ২০১৮ সালে পরিচয় হয় রোবায়দা নাসরিন আপুর সাথে। অনলাইনে তখন প্রচুর কেনাকাটা করতাম। ধারণাও ছিলো টুকটাক। তাঁতী বাড়ী থেকে একটি শাড়ী কিনে দিতে বলেন রোবায়দা নাসরিন আপু। পার্সেল টি পেয়ে শাড়ীর ডিজাইন ও কোয়ালিটিতে মুগ্ধ হয়ে আপু বলেন, ” মিষ্টি তুমি অনলাইন বিজনেস করো, তোমার রুচি আর সততা দিয়ে তুমি বহুদূর যেতে পারবে!” আপুর কথা শুনে স্মৃতি মনে পড়েছে ছোট বেলা মায়ের সাথে তাঁতী বাড়ী যাওয়ার শ্রুতিমধুর তাঁতের ঠকঠক শব্দ, তাঁতের শাড়ীতে পাই মা মা গন্ধ! সেই তাঁতের শাড়ীকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে সহজ মাধ্যম ই-কমার্স। তাই অন্য উদ্যোগ না নিয়ে ই-কমার্স কে বেছে নেওয়া। মায়ের স্মৃতি জড়িত থাকায় আমার মেয়ের নামে নাম করণ করছি “Arwaa -আরওয়া”।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?
প্রথমে মহাজনদের কাছ থেকে শাড়ী সংগ্রহ করে বিক্রি করলেও বর্তমানে নিজস্ব তাঁতী আছে ৩ জন। বিলুপ্তপ্রায় সকল টাংগাইল তাঁতের শাড়ীকে বিশ্ব দরবারে সমাদৃত করা আমার মূল উদ্দেশ্য। যেসব তাঁতীরা আমার উদ্যোগে অবদান রাখছে তাদের সর্বাত্মক সহযোগীতা করা। আমার ই-কমার্স কোম্পানি কে বৃহৎ কোম্পানি তে রূপান্তর করার স্বপ্ন ও পরিকল্পনা রয়েছে।
আপনার চ্যালেঞ্জ গুলো কিভাবে জয় করেছেন?
বাবা-মায়ের সাপোর্টে ‘আরওয়া’ শুরু করি বরের অমতে। মার দেওয়া ৫ হাজার টাকা পুঁজি দিয়ে শুরু করি আমার ‘আরওয়া’। বরের কথা ছিলো একটাই, “তুমি নিজে ডুববে, সাথে সবাইকে নিয়ে ডুববে! ব্যবসা তোমাকে দিয়ে হবে না! “ব্যবসা শুরুর প্রথম মাসে নিজেই (বর) বলে তুমি পারবে, আমি আছি তোমার সাথে। নিজেকে প্রমাণ করা ছিলো ১ম চ্যালেঞ্জ! নিজ হাতে সংসার আর সন্তানদের দেখাশোনা করে ব্যবসায় চালিয়ে নেওয়া ছিলো অন্যতম চ্যালেঞ্জ। পণ্য সংগ্রহ শুরু করে পেজ ম্যানেজ, অর্ডার গ্রহণ ও প্যাকিং করে ডেডলাইনের আগে কুরিয়ারে পার্সেল করা সহ সবকিছু একাই করতে হতো। মনোবল আর কঠোর পরিশ্রমের ফলে বেশ ভালো ভাবে সামলে নিতে পেরেছি।
আপনার ক্যারিয়ার এ উই কিভাবে অবদান রাখছে?
আমি উই তে যুক্ত হয়েছি ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে। টুকটাক পোস্ট গুলো পড়তাম। ডিসেম্বরে টাংগাইল চলে আসায় হতাশায় ডুবে গিছিলাম। একদিন ই-ক্যাবের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট ও উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) এর উপদেষ্টা রাজিব আহমেদ স্যারের সম্পর্কে আমার এক বন্ধুর কাছে জানতে পেরে মনে হলো আমার একজন শিক্ষক দরকার যার ছায়াতলে থেকে আমি ই-কমার্সের সকল জ্ঞান অর্জন করতে পারবো। তাই হয়েছে! স্যারের সান্নিধ্য পেয়ে উই এর অনলাইন আড্ডায় নিয়মিত জয়েন হয়ে ই-কমার্সের অনেক কিছু শিখেছি। উইতে কোন বিক্রি পোস্ট বা অর্থ প্রদান না করেই লাখ লাখ টাকার অর্ডার পাচ্ছি! উইয়ের প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশা আপু আর উপদেষ্টা রাজিব আহমেদ স্যারের বদৌলতে হাইটেক পার্কের আয়োজনে ফ্রী ই-কমার্স ট্রেনিং এর সুযোগ পেয়েছি। আমি উই এর কাছে চির কৃতজ্ঞ। উই কে পাশে পেয়েছি আমার স্বপ্ন পূরণে।