চলতি বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) বিশ্বব্যাপী সেমিকন্ডাক্টর বিক্রি কমেছে ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ। এছাড়া বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) চেয়ে দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) সেমিকন্ডাক্টর বিক্রি দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ বেড়ে ৯ হাজার ৮২০ কোটি ডলারে পৌঁছালেও, তা এক বছর আগের একই প্রান্তিকের চেয়ে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ কম। সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (এসআইএ) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। খবর টেলিকম লিড।
এসআইএর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জুন মাসে সেমিকন্ডাক্টর বিক্রি ৩ হাজার ২৭০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা মে মাসের চেয়ে দশমিক ৯ শতাংশ কম। গত মে মাসে সেমিকন্ডাক্টর বিক্রি ৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছিল। তবে গত জুনে সেমিকন্ডাক্টর বিক্রি এক বছর আগের একই মাসের চেয়ে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ কমে ৩ হাজার ৯৩০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।
বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিকস ডিভাইসের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে ডিভাইসগুলোর জন্য চিপের চাহিদা। এর ফলে সম্প্রসারণ হচ্ছে সেমিকন্ডাক্টর শিল্প বা চিপের বাজার। ক্রমবর্ধমান এ খাতের রাজস্বে টানা তিন বছর উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। কিন্তু চলতি বছরের প্রথমার্ধে খাতটির রাজস্ব হ্রাস সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এক ধরনের আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে।
এসআইএ-সংশ্লিষ্টদের ভাষ্যে বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর খাতের রাজস্ব সংকুচিত হওয়ার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, মূল ধারার ইলেকট্রনিকস যন্ত্রাংশের দুর্বল চাহিদা, বিভিন্ন অঞ্চলের মুদ্রার বিপরীতে শক্তিশালী ডলার এবং নতুন উদ্ভাবন কমে আসা। অটোমোটিভ, মোবাইল ফোন এবং ক্লাউড অবকাঠামোগত উদ্ভাবনে এক ধরনের স্থিতাবস্থা বিরাজ করছে। যে কারণে চীনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্মার্টফোন বাজারগুলোয় বিক্রি কমে গেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সেমিকন্ডাক্টর খাতের রাজস্বে।
আগামীতে ক্লাউড অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ, ফাইভজি ডিভাইস ব্যবহার, ওয়াই-ফাই ৬ অ্যাডপশন, অটোমোটিভ সেন্সরস, পাওয়ারট্রেইন প্রযুক্তি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ট্রেনিং অ্যাকসেলেটর বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর খাতের রাজস্ব প্রবৃদ্ধির অন্যতম অনুষঙ্গ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে গার্টনার জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে এক বছর আগের একই সময়ের চেয়ে বৈশ্বিক বাজারে স্মার্টফোন সরবরাহ উল্লেখযোগ্য কমেছে। এছাড়া চলতি বছর বিশ্বজুড়ে স্মার্টফোন বিক্রি ২ দশমিক ৫ শতাংশ কমার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে, যা বাজারটির মন্দা কটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং বার্ষিক স্মার্টফোন বিক্রি কমার হার এটাই সর্বোচ্চ হবে। চলতি বছর পার্সোনাল কম্পিউটার (পিসি), ট্যাবলেট ও মোবাইল ফোনের সরবরাহ মোট ২২০ কোটি ইউনিটে দাঁড়াবে, যা গত বছরের চেয়ে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ কম। তবে চলতি বছর সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি দেখা যাবে মোবাইল ফোনের বাজারে। সামগ্রিকভাবে ফিচার ফোন ও স্মার্টফোন মিলে মোবাইল ডিভাইসের বাজারে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ পতন দেখা যাবে। এর প্রভাব পড়বে বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর শিল্প খাতে।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র-চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য বিরোধ সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের রাজস্ব কমার অন্যতম কারণ। বৃহৎ অর্থনীতির দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বিরোধের কারণে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের পাশাপাশি বৈশ্বিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান উৎপাদন কমিয়েছে। অনেকে উৎপাদন কমাতে বাধ্য হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্য বিরোধের কারণে স্মার্টফোন, ট্যাবলেট এবং কম্পিউটার প্রযুক্তি শিল্প খাতে সরবরাহ কমছে। যে কারণে চাহিদা কমছে এসব ডিভাইসের অত্যাবশ্যকীয় চিপের।
বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর খাতে প্রতিযোগিতা বেড়েছে। ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে আগামীতে এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একীভূতকরণ বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্য বিরোধ নিরসন হলে সেমিকন্ডাক্টর খাতের রাজস্বে উল্লম্ফন দেখা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।