যদি বলি প্রতিনিয়ত আপনার পাশে থাকা স্মার্ট ডিভাইসগুলো আপনার মারাত্মক ক্ষতি করছে। সংবাদটি শুনতে যতটা না খারাপ তারচেয়েও ভয়ানক বাড়ির ভেতর এই সমস্ত ডিভাইস ব্যবহারে বাড়ছে মৃত্যু ঝুঁকি।
২০০৭ সাল নাগাদ আইফোনের প্রকাশের পর, আমাদের মধ্যে অনেকেই ‘ডিভাইস’ এর সম্পূর্ণ ক্ষতিকর প্রভাবগুলি বুঝতে পারেনি। অ্যাপেলের স্মার্ট আইফোন ব্যবহারকে আড়ম্বরপূর্ণ মনে করতো।
কিন্তু এর আগেই অনেকে স্মার্ট ফোন ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। এক গবেষণায় দেখা গেছে বর্তমানের ৫জি,ওয়াইফাই, বিভিন্ন স্মার্ট ডিভাইসের কারণে মৃত্যু হার বাড়ছে দ্রুত গতিতে। এমনকি ঘুমের সময় পাশে নিয়ে রাখা ডিভাইসটি মস্তিষ্কের প্রতিনিয়ত ক্ষতি করছে।
মনোবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, দুশ্চিন্তা, কাজের চাপ আর ফোন নিয়ে অনেকের দিন কাটে। এমন অবস্থায় স্লিপ টেক্সটিং ঘটতে পারে। এতে মানুষের ঘুমের অনীহা বাড়ে।
আরেকটি উদাহরণ দেখা যায়, স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহারে ব্যস্ত থেকে অনেকেই রাস্তা পারাপার থেকে শুরু করে অনেক কাজ করে থাকেন। তাই সড়কে মৃত্যু হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ার এক গবেষণায় বলা হচ্ছে, মৃত্যু হার বৃদ্ধির পেছনে গাড়ির চালকদের স্মার্ট ফোনে টেক্সট পড়া এবং ডিভাইস ব্যবহারকে দায়ি করা হচ্ছে। কারণ ২০১৩ সাল থেকে ৩১ শতাংশ সড়কে মৃত্যু এই কারণে হয়ে থাকে।
তবে এই সংখ্যাটা ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ছিল ৫১ শতাংশ এবং ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার ফুটপাতে হাঁটার সময় স্মার্ট ডিভাইসে মৃত্যু হয়েছে এক বছরেই ২০ শতাংশ।
অনেক সময় দেখা যায় অনেকে ফোন ব্যবহার করতে করতেই রাস্তা পার হচ্ছে, সেখানে রাস্তার গাড়ি, বাস এমনকি মোটরবাইককে পাত্তাই দিচ্ছে না। তাই অনেক সময় খাম খেয়ালিপনার জন্য সড়কেও বাড়ছে মৃত্যু সংখ্যা।
দ্যা আরএসিকিউ মুখপাত্র পোল টারনার বলেন, সম্প্রতি রাস্তা পারাপারের সময় কেউ যদি স্মার্ট ফোন ব্যবহার করেন তাকে শাস্তি দেওয়া হবে।
অন্যদিকে স্মার্ট ফোন ব্যবহারে ঘাড় ব্যথা হতে পারে। কমতে পারে চোখের জ্যোতি। যুক্তরাজ্যের চক্ষু বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে জানিয়েছেন, ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারে দৃষ্টি বৈকল্য সৃষ্টি হতে পারে। এতে করে মায়োপিয়া বা ক্ষীণ দৃষ্টির সমস্যা দেখা দিতে পারে। স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা সাধারণত চোখ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার দূরত্ব রেখে তা ব্যবহার করেন। তবে, অনেকের ক্ষেত্রে এ দূরত্ব মাত্র ১৮ সেন্টিমিটার।
কানে কম শোনা। ফোন ব্যবহারের ফলে কানের সমস্যা তৈরির বিষয়টি অভ্যাসের ওপর নির্ভর করে। হেডফোন ব্যবহার করে উচ্চশব্দে গান শুনলে অন্তকর্ণের কোষগুলোর ওপর প্রভাব পড়ে এবং মস্তিষ্কে অস্বাভাবিক আচরণ করে। একসময় বধির হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
অতিরিক্ত সময় ধরে মেসেজ বা বার্তা টাইপ করা হলে আঙুলের জয়েন্টগুলোতে ব্যথা হতে পারে এবং অবস্থা বেশি খারাপ হলে আর্থরাইটিসের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ, ডেস্কটপের অতিরিক্ত ব্যবহার ও অতিরিক্ত টেলিভিশন দেখার ফলে সবচে বেশি দেখা দেয় ঘুমের সমস্যা বা নিদ্রাহীনতা। যারা ঘুমাতে যাওয়ার আগে এ ধরনের প্রযুক্তি-পণ্য অতিমাত্রায় ব্যবহার করেন তাদের শরীরে মেলাটোনিনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে; যার কারণ প্রযুক্তিপণ্য থেকে নির্গত উজ্জ্বল আলো। এক পর্যায়ে ঘুমের মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয় এবং স্লিপ ডিজঅর্ডারের ঝুঁকি তৈরি হয়।