দেশের সফটওয়্যার খাত দ্রুত এগিয়ে চলেছে। একসময় যে স্বপ্ন দেখার সাহস ছিল না দেশের উদীয়মান এ খাতে, এখন সে সাফল্য ধরা দিচ্ছে। দেশের ছোট-বড় অনেক প্রতিষ্ঠান এখন দেশ ও বিদেশে কাজ করছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের আয়কে ‘ডিজিটাল বিপ্লব’ মনে করছেন প্রযুক্তিবিদরা।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ২০০৮ সালে রফতানি আয় ছিল ২৬ মিলিয়ন ডলার, যা এখন বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। এখন ৫ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যে ছুটছে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত। দেশের বিভিন্ন খাতে পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে ডিজিটাল মাধ্যম দিয়ে। বাংলাদেশে সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে মেগা প্রকল্প ই-টিকিটিং সিস্টেম, ই-টেন্ডার সিস্টেম, ই-পাসপোর্ট, পদ্মা সেতুতে টোল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, বায়োমেট্রিক সিম রেজিস্ট্রেশন সিস্টেমের মতো নানা উদ্যোগ। এসব খাতের সফলতা থেকে দেশের সফটওয়্যার খাতের দুরন্ত এগিয়ে চলা প্রতীয়মান হয়। বর্তমানে দেশে সরকারি সেবার ক্ষেত্রে ৩৫ ভাগ মানুষ ডিজিটাল সেবা লাভ করছে। তথ্যপ্রযুক্তি ও সফটওয়্যার খাতের এসব উন্নয়ন এসেছে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সাফল্য ধরেই।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, স্থানীয় সফটওয়্যার খাতের ওপর আস্থা বাড়ছে বলেই সরকারি পর্যায়ে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ডিজিটালাইজেশনের বিষয়টি সামনে এসেছে। পাশাপাশি স্থানীয় প্রতিষ্ঠান চাহিদা ও সেবা নিশ্চিত করায় বেসরকারি খাতও স্থানীয় আইটি প্রতিষ্ঠানকে নিজ নিজ চাহিদাপত্রে প্রাধান্য দিচ্ছে।
এলআইসিটির তথ্যমতে, এভারেস্ট গ্রুপ আইসিটি মার্কেট ফোরকাস্ট অনুযায়ী চলতি বছর স্থানীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের আকার ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে, যা গত বছর ছিল ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। স্থানীয় বাজারের আকার বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিভিত্তিক পণ্য ও সেবা রফতানি ১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে, যা গত বছর ছিল ৮০০ মিলিয়ন ডলার। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিভিত্তিক পণ্য ও সেবা রফতানি বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ।
বেসিসের সমীক্ষা অনুযায়ী, স্থানীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে কর্মসংস্থান বাড়ছে। শুধু বেসিস সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোয় কর্মরত আছেন ৩ লাখ ২০ হাজার জনবল। এছাড়া দেশে ফ্রিল্যান্সারদের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। সব মিলিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে কাজ করছেন ৯ লাখ ৭০ হাজার মানুষ।
বেসিসের ঐকান্তিক প্রয়াসে দেশের সফটওয়্যার খাতের উন্নতি সম্ভব হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনার পর ২০১৮ সালে তথ্য ও যোগাযোগ খাতভিত্তিক পণ্য ও সেবা রফতানি আয়ের ওপর ১০ শতাংশ আর্থিক প্রণোদনা চালু করে সরকার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২৩টি প্রতিষ্ঠান রফতানি আয়ের ওপর ১০ শতাংশ আর্থিক প্রণোদনা পেয়েছে। পাশাপাশি আবেদনকৃত মোট ১৬৬টি প্রতিষ্ঠানের ১৬২ মিলিয়ন ডলার রফতানি আয়ের ওপর ১৬ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার আর্থিক প্রণোদনা প্রদানের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।