চীনের ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টরা হঠাৎ করে ভারতীয় স্টার্টআপের দিকে নজর দেয়া শুরু করেছেন। গত বছর তারা ভারতীয় বিভিন্ন স্টার্টআপে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, চীনা বিনিয়োগে ভারতীয় স্টার্টআপগুলো উজ্জীবিত হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু এতে অভ্যন্তরীণ অস্বস্তিও বাড়ছে। কারণ পুঁজি বিনিয়োগে চীনা প্রভাব বাড়লে নানা ইস্যুতে বিবদমান দুই দেশের ক্ষমতার ভারসাম্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন দেশটির বৈদেশিক নীতি বিশেষজ্ঞরা।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিনিটিভের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের শেষ প্রান্তিকে চীনা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে স্টার্টআপের বিনিয়োগ চুক্তির পরিমাণ ১৪০ কোটি ডলারে পৌঁছে গেছে। উপাত্ত সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ট্র্যাক্সন (ঞত্ধপীহ) বলছে, গত বছর মোট ৫৪ রাউন্ডে চীনা বিনিয়োগ এসেছে। যেখানে ২০১৩ সালেও মাত্র তিনটি এবং ২০১৭ সালে ছিল এর অর্ধেক।
ফলে ভারতের স্টার্টআপে তহবিল সরবরাহের দিক থেকে সেকুইয়া, সফটব্যাংকের মতো জায়ান্টদের সঙ্গে অন্যতম প্রভাবশালী বিনিয়োগকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে চীন।
এ ব্যাপারে ট্র্যাক্সনের সহপ্রতিষ্ঠাতা নেহা সিং বলেন, ভারত এখন বিনিয়োগের বিশাল বাজার। এখানে প্রভাবশালী বিনিয়োগকারী হতে প্রচুর নতুন বিনিয়োগ মডেল এখনো উদ্ভাবনের সুযোগ রয়েছে।
জানুয়ারির শুরুর দিকে বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ভারতীয় স্টার্টআপে আলিবাবা, দিদি চুশিংয়ের পাশাপাশি নতুন চীনা বিনিয়োগের বান ডেকেছে। ২০১৯ সালে রেকর্ড পরিমাণ বিনিয়োগ এসেছে। এই এক বছরেই বিনিয়োগ এসেছে ২০১৬ সালের সাত গুণ। সে বছর এসেছিল ৪৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার।
ভেঞ্চার ইন্টেলিজেন্সের তথ্যমতে, বছরওয়ারি হিসাবে গত বছর ভারতে স্টার্টআপে চীনা বিনিয়োগ ৯৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৩৯১ কোটি ৬০ লাখ ডলার, যেখানে আগের বছর ছিল ২০২ কোটি ডলার।
এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ভারতে চীনা বিনিয়োগ হঠাৎ বাড়তে শুরু করল তখনই, যখন এ দেশে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ থেকে প্রাইভেট ইকুইটি অথবা ভেঞ্চার ক্যাপিটাল বিনিয়োগ কমতে শুরু করেছে। ২০১৯ সালে মার্কিন বিনিয়োগকারীরা ৩৩১টি চুক্তির আওতায় ৯১৮ কোটি ডলার ভারতের বাজারে প্রবেশ করিয়েছে, যেখানে এর আগের বছর তারা ৩২০টি চুক্তির আওতায় বিনিয়োগ করেছিল ১ হাজার ৫২ কোটি ডলার।
চীনা বৃহৎ বিনিয়োগকারীরা মূলত ভারতীয় প্রযুক্তি স্টার্টআপগুলোকেই টার্গেট করছে। বিশেষ করে ভারতীয় বিলিয়ন ডলার মানের কোম্পানিগুলোকেই তারা বেছে নিচ্ছে। যেমন টেনসেন্ট ও দিদি চুশিং বেছে নিয়েছে রাইডশেয়ারিং কোম্পানি ওলা, আর আলিবাবা ও তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান অ্যান্ট ফিন্যান্সিয়াল বেছে নিয়েছে ফুড ডেলিভারি কোম্পানি জোমাটো।
অবশ্য ইদানীং তাদের মধ্যে বিনিয়োগে বৈচিত্র্য আনার প্রবণতাও লক্ষ করা যাচ্ছে। শাওমির প্রতিষ্ঠাতার বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান শানওয়ে ক্যাপিটাল, চায়না লজিং গ্রুপ, চায়না ইউরেশিয়া ইকোনমিক কো-অপারেশন ফান্ড ও বেয়ারিং এশিয়া এদের অন্যতম।
সর্বসম্প্রতি এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে পিং অ্যান গ্লোবাল ভয়েজার ফান্ড। ইউরোপ, চীন ও ইসরায়েলে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ২৫ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। ভারতের জয়পুরভিত্তিক কার প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘কারদেখো’-তে তারা বিনিয়োগ করেছে ৭ কোটি ডলার। ভারতে এটি তাদের প্রথম বিনিয়োগ। আরো ২ থেকে সাড়ে ৩ কোটি ডলারের বিনিয়োগ অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানা গেছে।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, চীনা বিনিয়োগকারীরা ভারতের চলমান অর্থনৈতিক সংকটকে তেমন একটা আমলে নিচ্ছেন না। তারা দীর্ঘমেয়াদের সম্ভাবনার দিকে নজর রাখছেন। পিং অ্যান গ্লোবাল ভয়েজারের ব্যবস্থাপক ডোনাল্ড লেসি বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ অথবা সাংস্কৃতিক পার্থক্যের কারণে ভারতকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। চীনা বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদি বিপুল সম্ভাবনার কথা ভেবেই এখানে আসছেন।
ভারতে সক্রিয় ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম ফোসান আরজেড ক্যাপিটালের ভারত অংশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তেজ কাপুর বলেন, বিনিয়োগকারীরা ভারতের মধ্যে দ্বিতীয় চীনকে দেখতে পাচ্ছেন। গ্রুপটি ২০১৯ সালে ভারতের অনলাইন ভ্রমণ ও হোটেল বুকিং কোম্পানি ইক্সিগো, লজিস্টিক ফার্ম ডেল্লিভেরি এবং অনলাইন পেরেন্টিং নেটওয়ার্ক মাইলোসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছে।