ভারতীয় সেলফোন অপারেটর রিলায়েন্স জিও ইনফোকমের ১০ শতাংশ মালিকানা কিনতে চায় সোস্যাল মিডিয়া জায়ান্ট ফেসবুক। এরই মধ্যে ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ আম্বানি নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে আলোচনাও শুরু করেছে মার্ক জাকারবার্গ পরিচালিত ফেসবুক। কয়েক বিলিয়ন ডলারে জিওর উল্লিখিত মালিকানা ক্রয়ে আগ্রহী ফেসবুক। এছাড়া জিওর মালিকানা কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বৈশ্বিক সার্চ জায়ান্ট গুগল। এ নিয়ে রিলায়েন্স জিও কর্তৃপক্ষ গুগলের সঙ্গেও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বলে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এরই মধ্যে জিওর মালিকানা ক্রয় বিষয়ে ফেসবুক ও জিওর কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে করোনাভাইরাসের কারণে এখন বিশ্বব্যাপী সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থগিত থাকায় উভয় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা গত কয়েক দিন এ বিষয়ে আলোচনায় বসতে পারেননি।
গত বছরের নভেম্বরে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, জিওর বাজারমূল্য ৬ হাজার ৫০০ কোটি ডলার থেকে ৭ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছে। অর্থাৎ সেলফোন অপারেটরটির ১০ শতাংশ মালিকানা কিনতে ফেসবুককে ৬৫০ থেকে ৭০০ কোটি ডলার গুনতে হতে পারে।
২০১৫ সালে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করে জিও। ২০১৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। জিওর হাত ধরে ভারতের টেলিকম খাতে তীব্র মূল্যযুদ্ধের সূচনা হয়। বাজার দখলের জন্য সেলফোন কল রেট ও ইন্টারনেট ডাটার দাম অনেকটা কমিয়ে দেয় প্রতিষ্ঠানটি। ফলাফল হিসেবে ৩৭ কোটি গ্রাহক নিয়ে জিও এখন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ও ভারতের সবচেয়ে বড় সেলফোন অপারেটর। জিওর গ্রাহক বাড়লেও এমন আগ্রাসী নীতি ভারতের টেলিকম খাতের অন্য কোম্পানিগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। গ্রাহক হারিয়ে ক্রমাগত লোকসান সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে তারা।
ভারতে বিদেশী কোম্পানিদের ব্যবসা করার জন্য বিভিন্ন আইন মেনে চলতে হয়। জিওর হাত ধরে ভারতের টেলিযোগাযোগ খাতে প্রবেশ করলে ফেসবুকের জন্য অনেকটা সহজ হবে।
ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড়, সাশ্রয়ী ও দ্রুত প্রবৃদ্ধির টেলিকম বাজার। তবে দেশটির টেলিকম খাত টানা কয়েক বছর নজরকাড়া সব অর্জনের পর এখন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা নিয়ে সংকটপূর্ণ সময় পার করছে, যা একটি বাজারের সমগ্র চিত্র বদলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
একদিকে সেলফোন অপারেটরগুলো বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ঋণের বোঝা এবং অন্যদিকে তীব্র প্রতিযোগিতা মোকাবেলা করে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছে। এতে বাড়তি অনিশ্চয়তা যোগ করেছে অ্যাডজাস্টেড গ্রস রেভিনিউর (এজিআর) সংজ্ঞা নিয়ে ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে চলমান মামলার রায় ডিপার্টমেন্ট অব টেলিকমিউনিকেশনের (ডিওটি) পক্ষে যাওয়া। দেশটির টেলিকম খাতে মূল্যযুদ্ধ মোকাবেলা করতে গিয়ে সেলফোন অপারেটরগুলোর মুনাফা শূন্যের কোটায় নেমেছে। বাধ্য হয়ে গত কয়েক বছরে একাধিক অপারেটর বাজারটি থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে এবং কয়েকটি অপারেটর প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে একীভূত হয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সেলফোন অপারেটরগুলোর অর্থ সংকট এবং তীব্র প্রতিযোগিতা ও মূল্যযুদ্ধের কারণে বাজারে যেকোনো সময় পুরো ভিন্ন চিত্র দেখা যেতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
ভারতীয়রা বিশ্বের যেকোনো দেশের থেকে সবচেয়ে কম দামে ইন্টারনেট ডাটা ব্যবহার করেন। দেশটিতে মোবাইল কল রেটও তুলনামূলক কম। ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ আম্বানির সেলফোন অপারেটর রিলায়েন্স জিও ইনফোকম কার্যক্রম শুরুর পর মূল্যযুদ্ধের জের ধরে দেশটিতে মোবাইল কল রেট অনেকটাই কমে গেছে। গত তিন বছরে ভারতে একবারও মোবাইল কল রেট ও ইন্টারনেট ডাটার দাম বাড়ানো হয়নি। বরং ক্রমাগত কমতে দেখা গেছে। সর্বশেষ গত নভেম্বরে দুটি সেবার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিল জিও। ক্রমাগত লোকসানের মুখে ভোডাফোন আইডিয়া ও ভারতী এয়ারটেলও ডিসেম্বর থেকে বাড়তি শুল্কের ঘোষণা দেয়। এতে সেলফোন অপারেটরগুলোর গ্রাহকদের মোবাইল কল রেট ও ইন্টারনেট ডাটার জন্য বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে।