করোনাভাইরাস (COVID-19) নিয়ে সারা বিশ্ব আজ চিন্তিত। দিনে দিনে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুহার। সেই তালিকায় বাদ নেই নিবেদিত প্রাণ চিকিৎসকেরাও।ধারণা করা হচ্ছে, পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫০% করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। কিন্তু সে অনুসারে নেই চিকিৎসা ব্যবস্থা। এই মহামারীর গাণিতিক হিসেব বলে আমাদের দেশের প্রায় ১০% অর্থাৎ প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আর আমাদের মতো ঘন বসতির দেশে এই শতাংশ যে আরো বেশি হবে সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু আমাদের হাসপাতালগুলোর এত ধারণ ক্ষমতা নেই।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, কোভিড-১৯ এ আক্রান্তদের প্রায় ১০-১২ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ১০ লাখ রোগীর মেডিকেল ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন হবে। কারণ করোনাভাইরাস আক্রান্তদের শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষত যাদের শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে এটি আরো প্রকট আকার ধারণ করে।
মেডিকেল ভেন্টিলেটর হলো এমন একটি যন্ত্র যার মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজ চালিয়ে নেওয়া যায়। ফুসফুসের কার্যক্রম বন্ধ কিংবা ব্যাঘাত ঘটলে এই ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা করা হয়। কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগীদের ফুসফুস যখন একদমই কাজ করা বন্ধ করে দেয় তখন এই ভেন্টিলেটরই রোগীর প্রাণ রক্ষায় সহায় হয়। এদিকে উন্নত দেশগুলোতে ডাক্তারদের সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে কাকে রেখে কাকে ভেন্টিলেটর সুবিধা দেবেন। পরিস্থিতি এতটাই করুণ! উন্নত দেশগুলো রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে এই চাহিদা পূরণ করতে।আর অন্য দিকে, বাংলাদেশে সরকারি – বেসরকারি সহ প্রায় ৫ হাজার ২০০ হাসপাতাল রয়েছে। ৬১০টি সরকারি হাসপাতালের মাত্র ২৭টি আইসিইউ সুবিধা আছে। অন্যদিকে, এই মুহূর্তে বিদেশ থেকে খুব বেশি ভেন্টিলেটর আমদানী করাও সম্ভব নয়। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রও ভেন্টিলেটর আমদানী কমিয়ে দিয়েছে, কারণ একেকটি ভেন্টিলেটরের দাম ২১ – ৫০ লাখ টাকা। বাংলাদেশের মত দেশের পক্ষে এত ভেন্টিলেটর যোগান দেওয়া প্রায় অসম্ভব।
এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের আল্যামনাই মিলে আয়োজন করেছেন একটি প্রতিযোগিতার। ছুঁড়ে দিয়েছেন চ্যালেঞ্জ – কীভাবে খুব স্বল্প টাকায়, সহজ উৎপাদনযোগ্য (থ্রিডি প্রিন্টিং, আরডুইনো, কম্পিউটার নিউমেরিক্যাল কনট্রোল, স্মার্টফোন অ্যাপের সাহায্যে) এবং যেকোনো স্থানে ব্যবহারোপযোগী ভেন্টিলেটর ডিজাইন করা যায়। প্রতিযোগিতায় কোভিড – ১৯ মোকাবেলায় মৃত্যুপথযাত্রী রোগীদের বাঁচাতে কম টাকায়, সহজে উৎপাদনযোগ্য, সহজ ব্যবহারযোগ্য এবং পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে ব্যবহারযোগ্য মেডিকেল ভেন্টিলেটর ডিজাইন করতে হবে। সেরা ৩টি ডিজাইনকে পুরস্কৃত করা হবে। এই ডিজাইনগুলো পুরো পৃথিবীর জন্য উন্মুক্ত থাকবে যাতে যে কেউ যেকোনো প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারেন। তবে সেরা ডিজাইনটির আদলে ২০০০ কপি ভেন্টিলেটর স্থানীয় পর্যায়ে তৈরি করা হবে। অর্থ জোগান হবে ক্রাউডসোর্সিং এর মাধ্যমে।
প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের সকল শিক্ষার্থী, কর্মজীবী এবং যেকোনো শ্রেণী- পেশার মানুষ এতে অংশ নিতে পারবেন। তবে প্রতিটি দলে একজন মেডিকেল প্রফেশনাল (ছাত্র কিংবা প্র্যাকটিসরত) এবং একজন সার্টিফাইড ইঞ্জিনিয়ারিং/টেকনিক্যাল ছাত্র বা প্রফেশনাল থাকতে হবে। প্রোজেক্টের সাথে ৩-৫ জনের দলের প্রত্যেকের সিভি বা স্টুডেন্ট বা প্রফেশনাল আইডি প্রদান করতে হবে। আইডিয়া জমা দেয়ার শেষ তারিখ মার্চ ৩১, ২০২০। বিস্তারিত আরো জানতে ভিজিট করুন projectventilator.org
এই প্রতিযোগিতাটি মূলত মনট্রিল জেনারেল হাসপাতাল ফাউন্ডেশন এবং ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কোড লাইফ ভেন্টিলেটর চ্যালেঞ্জে’র অনুপ্রেরণায় তৈরি।