প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশাসন যতই চীনা সরবরাহকারীদের দূরে ঠেলার পরিকল্পনা করুক না কেন, ভারতীয় টেলিকম অপারেটররা কিন্তু ফাইভজি প্রযুক্তির নেটওয়ার্ক স্থাপন প্রকল্পে হুয়াওয়ে ও জিটিইর মতো চীনা কোম্পানিকে পাশে চাইছে। এ কারণে তারা ভারতের ডিপার্টমেন্ট অব টেলিকমিউনিকেশনসের (ডিওটি) প্রতি আর্জি জানিয়েছে, ফাইভজি প্রযুক্তির ল্যাব ট্রায়ালের ক্ষেত্রে সরঞ্জাম ও সরবরাহকারীভিত্তিক আবেদনপত্র জমা দেয়ার বিধিনিষেধ যেন প্রত্যাহার করে নেয় সরকার। মূলত নতুন প্রজন্মের এ প্রযুক্তির পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রক্রিয়া মসৃণ করতেই এ ছাড় চাচ্ছে টেলিকম কোম্পানিগুলো। খবর ইকোনমিক টাইমস।
বুধবার ডিওটিকে এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি দিয়েছে সেলুলার অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (সিওএআই)। ওই চিঠিতে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বিভিন্ন ট্রায়াল ইকুইপমেন্ট আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার ও উৎসদেশ সম্পর্কিত বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের আবেদনও করা হয়েছে। অপারেটররা জানিয়েছে, প্রুফ অব কনসেপ্ট (পিওসি) ও ট্রায়াল রানের ক্ষেত্রে ভেন্ডররা সাধারণত স্থানীয় উৎস থেকে সংগ্রহের পরিবর্তে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিগুলো বাইরে থেকে আমদানি করে—এটাই দীর্ঘদিনের প্রচলিত একটি ধারা। এখন এ ধারায় হঠাৎ পরিবর্তন আনতে গেলে ফাইভজির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।
ওয়াকিবহাল সূত্রগুলো জানিয়েছে, ডিওটিকে অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এ চিঠি দেয়ার উদ্দেশ্য হলো ফাইভজি প্রযুক্তির পরীক্ষা ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে হুয়াওয়ে ও জিটিইর মতো চীনা সরবরাহকারীদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে সরকারের আনুষ্ঠানিক অবস্থান পরিষ্কারভাবে জানা।
সরকারিভাবে ভারতের টেলিকম খাতে চীনা সরবরাহকারীদের কার্যক্রম এখনো নিষিদ্ধ করা হয়নি। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে মোদি প্রশাসন রাষ্ট্রায়ত্ত অপারেটর বিএসএনএল ও এমটিএনএলকে নির্দেশ দিয়েছে, তারা যেন যন্ত্রপাতি কেনার নতুন চুক্তি করার সময় চীনা সরবরাহকারীদের পরিহার করে। এছাড়া বেসরকারি অপারেটরদেরও একই পথ অনুসরণের জন্য চাপ দিচ্ছে সরকার। কিন্তু এগুলোর কোনোটিই আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত বা নির্দেশনা নয়।
এ অবস্থায় টেলিকম অপারেটররা চাইছে, দীর্ঘমেয়াদি সরঞ্জাম চুক্তির যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সরকার যেন বিষয়টিতে স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়। বিশেষ করে এমন এক সময়ে এ অচলাবস্থার তৈরি হয়েছে, যখন নতুন প্রজন্মের ফাইভজি প্রযুক্তির যুগে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে ভারত। টেলিকম কোম্পানিগুলোও সে অনুযায়ী দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা সাজাতে ব্যস্ত।
সিওএআই বলেছে, বিদ্যমান নির্দেশনা অনুযায়ী নতুন প্রজন্মের সফটওয়্যার ও অ্যাপ্লিকেশন সরবরাহকারীদের সঙ্গে ফাইভজির পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিয়ে কাজ করতে গেলে এর অনুমোদনের জন্য ডিওটি ও ওয়্যারলেস প্ল্যানিং অ্যান্ড কো-অর্ডিনেশন (ডব্লিউপিসি) বিভাগে নথিপত্র জমা দিতে হয়। এ বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা হলে অপারেটররা আরো দ্রুত ও সহজে ফাইভজি প্রযুক্তির পরীক্ষা চালাতে পারবে বলে সিওএআই জানিয়েছে।
আগামী বছরের জানুয়ারি-মার্চের দিকে ফোরজি স্পেকট্রামের নিলাম আয়োজন করতে পারে ডিওটি। তার কিছুদিনের মধ্যেই ফাইভজি স্পেকট্রামের নিলামও অনুষ্ঠিত হবে। সিওএআই নিলামে বরাদ্দকৃত ট্রায়াল স্পেকট্রাম অনুযায়ী নির্ধারিত সীমার মধ্যে যেকোনো শহর অথবা অঞ্চলে ফাইভজির পরীক্ষা চালানোর শিথিলতা দাবি করেছে। এছাড়া সময়মতো পরীক্ষা চালানোর অনুমোদন প্রাপ্তির প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য ডিওটিতে একজন নোডাল অফিসারকে মনোনয়ন দেয়ারও আর্জি জানিয়েছে সংগঠনটি।
এদিকে নকিয়া ও এরিকসনের মতো ইউরোপীয় সরঞ্জাম সরবরাহকারীরা বলেছে, ভারতে আসলে ফাইভজির পরীক্ষামূলক প্রয়োগের কোনো প্রয়োজনীয়তাই নেই। কারণ এরই মধ্যে শতাধিক দেশে এ প্রযুক্তির বাণিজ্যিক প্রয়োগ শুরু হয়ে গেছে।
ভারত এরই মধ্যে স্মার্ট কৃষি, স্মার্ট পরিবহন, ফিনটেক, স্মার্ট হেলথকেয়ার, স্মার্ট গ্রিড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিসহ বিভিন্ন প্রকল্পে ফাইভজি প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এ লক্ষ্যে ডিওটি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, স্টার্টআপ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরঞ্জাম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ দিয়েছে। এ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে হুয়াওয়েও রয়েছে।