ঢাকার নিকটবর্তী সবুজ, শ্যামল শান্ত নদী বেষ্টিত একটি জেলা মুন্সিগঞ্জ জেলা। তাতঁ শিল্পের উপযোগী হওয়ায় এ জেলায় বৃটিশ আমল থেকে তাতঁ শিল্পের প্রচলন শুরু হয়। প্রয় দু’শ বছরের ঐতিহ্য মিশে রয়েছে মুন্সিগঞ্জের তাতঁশিল্পে। নিখুঁত বুননে তৈরি করা হয় জেলার তাতঁ পন্য। একসময় শাড়ী, লুঙ্গি, গামছার বেশ কদর ছিলো জেলার তাঁত শিল্পের।এমনকি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও এ জেলার তাঁত শিল্পের বেশ নাম ডাক ছড়িয়ে পরেছিলো।
তবে বর্তমানে মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রায় হারাতে বসেছে তার নিজস্ব ঐতিহ্য তাঁত শিল্প। নানা রকম প্রতিবন্ধকতা ও চরম লস যেনে তাদের পেয়ে বসেছে।তাই আগ্রহ হারাচ্ছে তাঁতি পরিবার। এখন আর শাড়ী বুনে না তাঁতিরা। তবে জেলার শ্রীনগর উপজেলার বাড়ৈখালি ইউনিয়নের শ্রীধরপুর গ্রামের শতাধিক পরিবার তাতঁশিল্পের সাথে এখনোও জড়িয়ে রয়েছে।মূলত তারাই ধরে রেখেছে পূর্ব পুরুষের কাছ থেকে পাওয়া এ পেশা। বাপ দাদার কাছ থেকে শেখা এ পেশা শুধুই তাদের পেশাই নয়। এক বুক আশা, ভরসা, ভালোবাসা এবং আবেগ ও।
তাঁতি পাড়ায় তাঁতিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে আধুনিক মেশিনে তৈরি সস্তা দরের লুঙ্গি দখল করে রেখেছে বাজার। ফলে নিপুণ হাতে বোনা নিখুঁত লুঙ্গির বাজার মন্দা। তাঁতিদের চড়া দামে সুতা কিনতে হয় লুঙ্গি।বুননের জন্য। কর্মচারীদের মজুরি ও আনুষাঙ্গিক খরচ অনেক বেশি, ফলে তাঁতিদের বাজারের সস্তাদরের পন্যের সাথে তাল মিলিয়ে দাম নির্ধারন করা সম্ভব নয়।
তাঁতি পাড়ায় যেনো এখন শুনশান নিরবতা। আগের মতো পুরো পাড়ায় তাতঁকলের চকর চকর শব্দ চারদিক আর মাতিয়ে রাখে না। তারপরেও হাতে গোনা শতাধিক তাঁতি পরিবার বংশ পরম্পরায় ধরে রেখেছে পূর্ব পুরুষের কাছ থেকে পাওয়া এ পেশা৷
তাঁতি পাড়ায় কয়েকজন তাঁতির সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের আক্ষেপের কথা। তাদের সন্তানেরা আর তেমন কেউ এ পেশায় নেই কিংবা থাকতে ইচ্ছুক না। সবাই অন্য পেশায় জড়িয়ে পরেছে। তাঁতিদের ধারনা এখন থেকে তাঁতি পারায় সুদিন ফিরিয়ে না আনলে হয়তো একসময় বিলুপ্ত হয়ে যাবে পুরোপুরি জেলার তাঁত শিল্প।
এত হারিয়ে যাওয়ার মাঝেও তাঁতের লুঙ্গির খানিকটা কদর এখনো বেশ রয়েছে। শিবরামপুর হাটে তাঁতিরা লুঙ্গি ও গামছা বিক্রয় করে। ঢাকা, মানিকগঞ্জ , সাভার,ধামরাই, গাবতলি বিভিন্ন যায়গা থেকে মুন্সিগঞ্জ জেলার তাঁতের লুঙ্গি কিনে নিয়ে যায়।
এছাড়াও বিভিন্ন বড় বড় লুঙ্গির কোম্পানিগুলো মুন্সিগঞ্জ জেলার লুঙ্গি কিনে নিয়ে চড়া দামে বিক্রি করে থাকে।কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে,সে সকল কোম্পানিগুলো তাদের কোম্পানির নামেই লুঙ্গি বিক্রি করে থাকে৷ এতে করে তাঁতিরা লুঙ্গি বিক্রি করলেও তাদের কিংবা মুন্সিগঞ্জ জেলার প্রচারণাটা আর আলাদা করে হয় না।
যে কোন শিল্প কে বাঁচাতে হলে আগে প্রচার ও প্রসারের চিন্তা করতে হয়। অসহায় তাঁতিদের প্রচারনা করা হচ্ছে না বলেই তাদের পিছিয়ে পরতে হচ্ছে।
জেলার হাতেগোনা কয়েকটি পরিবারের রয়েছে নিজস্ব তাতঁ। তবে হাজী আশরাফ আলী নামক একজন বিশিষ্ট ব্যাক্তির তাতেঁ বেশ কয়েকটি তাতঁকল রয়েছে। জৈনিক ব্যাক্তির তাতঁ ২০-৪০ জন স্থানীয় কর্মচারী রয়েছে।১০-১৫ টি তাতঁকলে লুঙ্গি বোনা হচ্ছে।
একটি তাতেঁর লুঙ্গি শেষ করতে মোটামুটি ৩-৫ দিন সময় লাগে৷ একতাতেঁ একসাথে ৫ টি লুঙ্গি বের হয়। জানা যায় যে, এ জেলার তাঁতিরা মুলত দুই ধরনের লুঙ্গি বুনে থাকে,এবং সেটা আলাদা হয় সুতার মান হিসেবে।
তাদের ভাষায় ৬০ শানা ও ৪০ শানা। ৬০ শানা মানে সুতার ঘনত্ব ও মানে উন্নত। ৪০ শানা লুঙ্গির ৬০ শানার চেয়ে একটু কম ঘনত্ব। তবে মানে তেমন বেশি পার্থক্য নেই। চিকন ও মিহি সুতার লুঙ্গি গুলো চমৎকার আরাম দায়ক বলে একবার যে ব্যাবহার করে সে বার বার লুঙ্গির প্রয়োজনে তাঁতি পাড়ায় আসে।
সবশেষে বুঝা যায় যে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব ও প্রচারের অভাবে তেমন প্রসার হচ্ছে না জেলার তাঁত শিল্প, যদিও এর গুনগত মান বেশ ভালো।নিজ জেলার ই কমার্স উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে জেলার তাঁত শিল্পকে বাঁচাতে।জেলার একটি তাতঁ বাচলে সেটিই জেলার অর্থনীতির অগ্রসর ঘটাবে।সেই সাথে একটি জেলার তাঁত শিল্প অনেক পরিচিতিও পাবে।
সোনিয়া দেওয়ান
ওনার অফ সেজদাহ ফুড
মুন্সিগঞ্জ জেলা।