হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছে জনপ্রিয় গেমিং স্ট্রিমিং প্লাটফর্ম টুইচ। হ্যাকাররা কোম্পানিটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও স্ট্রিমারদের আয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। বুধবার টুইচের বিভিন্ন তথ্যসংবলিত ১২৫ জিবি পরিমাণ ডাটা অনলাইনে প্রকাশ হয়ে পড়ে। খবর বিবিসি।
প্রকাশিত এসব তথ্যে দেখা যায়, অ্যামাজনের মালিকানাধীন এ কোম্পানি থেকে দুই বছর ধরে শীর্ষস্থানীয় স্ট্রিমাররা প্রত্যেকে কয়েক কোটি ডলার উপার্জন করেছেন। হ্যাকিংয়ের বিষয়টি অনুধাবন করার পর পরই এ বিষয়ে তাত্ক্ষণিক কাজ করতে শুরু করে টুইচ কর্তৃপক্ষ। এক টুইট বার্তায় টুইচ জানায়, হ্যাকিংয়ের মাত্রা শনাক্ত করতে তারা জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু করেছে। হ্যাকিং সম্পর্কিত কোনো নতুন তথ্য তাদের হাতে আসা মাত্রই তারা তা কমিউনিটিতে শেয়ার করে জানিয়ে দেবে।
টুইচের এক স্ট্রিমার বিবিজি ক্যালক জানান, হ্যাকারদের প্রকাশিত তথ্যে তার আয়ের যে বিবরণ প্রকাশ করা হয়েছে তা শতভাগ মিলে গেছে। প্লাটফর্মটির আরেক স্ট্রিমার জানান, প্রকাশিত তথ্যে তার আয়ের বিবরণ সম্পূর্ণ প্রকাশিত হয়েছে। একটি অনলাইন ফোরামে প্রকাশিত এসব তথ্যে দেখা যায়, ২০১৯ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত যেসব পেমেন্ট করা হয়েছে তার ডাটা উন্মুক্ত করা হয়েছে। এসব উন্মুক্ত হওয়া তথ্যে দেখা যায়, প্লাটফর্মটির যেসব শীর্ষস্থানীয় স্ট্রিমারের উপার্জন প্রকাশ করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ডানজিওনস অ্যান্ড ড্রাগনস চ্যানেল ক্রিটিকালরোল, কানাডিয়ান এক্সকিউসি ও আমেরিকান সামিট ১ জি।
টুইচ সাধারণত তার পরিচালনা কার্যক্রম কঠোরভাবে গোপনীয় রাখার জন্য প্রসিদ্ধ। এর মধ্যে প্লাটফর্মটির স্ট্রিমারদের কী পরিমাণ পেমেন্ট করা হয়, এসব তথ্যও গোপন রাখে প্লাটফর্মটি। ফলে হ্যাকিংয়ের এ ঘটনা প্লাটফর্মটির জন্য বেশ বিব্রতকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এটি এমন এক সময় ঘটেছে যখন ইউটিউব গেমিংয়ের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলো গেমিং প্রতিভাগুলোকে বাগে আনতে বড় অংকের বেতন দেয়ার প্রস্তাব দিচ্ছে। সুতরাং এ ঘটনা বেশ উল্লেখযোগ্য প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে সক্ষম হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এদিকে হ্যাকিংয়ের ঘটনায় জড়িতরা দাবি করছে, তাদের কাছে ভিডিও স্ট্রিমিং প্লাটফর্মটির সোর্সকোড রয়েছে। প্রকাশিত এসব তথ্যে আরো দেখা যায়, স্ট্রিমারদের উপার্জনের পাশাপাশি প্লাটফর্মটির সোর্স কোডসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিগত তথ্যের বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে। এসব প্রযুক্তিগত বিবরণ অনুযায়ী কিছু প্রডাক্ট ও প্লাটফর্ম এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তি পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। উন্মুক্ত হওয়া এসব তথ্য এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যে যাতে মনে হয় এর কিছু তথ্য অন্তত বিশ্বাসযোগ্য ও সঠিক। এসব তথ্যের মধ্যে রয়েছে কোর কনফিগারেশন প্যাকেজ, ডেভেলপার টুলস ও তথ্য নিরাপত্তা-সংক্রান্ত বিভিন্ন ডাটা।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে বেশ গোপনীয় কিছু তথ্য রয়েছে। যেমন—অভ্যন্তরীণ সার্ভারের পূর্ণ বিবরণ। সাধারণত এসব তথ্যে কেবল টুইচের কর্মীরাই প্রবেশ করতে সক্ষম। যদি হ্যাকারদের দ্বারা প্রকাশিত সব তথ্য সঠিক হয়, তবে এটি হবে এযাবত কালের সবচেয়ে বড় হ্যাকিংয়ের ঘটনা। যার মাধ্যমে একটি কোম্পানির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য একের পর এক উন্মুক্ত হয়ে যাবে।
হ্যাকিংয়ের এ ঘটনার পর টুইচ বিষয়টি স্বীকার করে জানায়, প্লাটফর্মটির সার্ভার কনফিগারেশন পরিবর্তনের সময় কিছু ত্রুটির কারণে বহু ক্ষতিকর থার্ড পার্টির অনুপ্রবেশ ঘটেছে। তবে এসব হ্যাকার লগ-ইন ক্রেডিনশিয়াল সম্পর্কিত তথ্য হাতিয়ে নিতে পারেনি বলে জানায় টুইচ। একই সঙ্গে ব্যবহারকারীদের ক্রেডিট কার্ড নম্বরও প্রকাশ করতে সক্ষম হয়নি বলে জানায় তারা।
স্ট্রিমিং প্লাটফর্মটি জানায়, হ্যাকাররা প্রতিষ্ঠানটির স্ট্রিমিং পরিষেবা সম্পর্কিত কিছু সোর্স কোড, অ্যামাজন গেস স্টুডিওর অপ্রকাশিত কিছু স্ট্রিম প্রতিদ্বন্দ্বী এবং অর্থ প্রদানের বিবরণ প্রকাশ করেছে মাত্র।