গোটা বিশ্বে অর্থ বিচরণ করে রেমিট্যান্স আকারে। প্রবাসীরা নিজ দেশে স্বজনের কাছে অর্থ প্রেরণ করেন। গত দুই বছরে রেমিট্যান্স আসলে অদৃশ্য অর্থ হয়ে গেছে। এটা বিশ্ব ব্যাংকের আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এখন ফেসবুক এ পথে আসতে চায়।
এ বছরের প্রথমেই বিশ্বের সর্ববৃহৎ সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম ক্রিপ্টোকারেন্সি আকারে রেমিট্যান্স সার্ভিস চালুর ইঙ্গিত দিয়েছে। এর পেছনে তাদের প্রচেষ্টা ক্রমশ তীব্রতর হচ্ছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এ কাজে নতুন কর্মী নিয়োগ দিয়েছে তারা। কলেবরে বাড়ছে তাদের ক্রিপ্টোকারেন্সি দল। ফেসবুক লন্ডন-ভিত্তিক নতুন প্রতিষ্ঠান চেইনস্পেস-কে নিজের করে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
ডিসেম্বরে এ খবরটি ছড়ায়। বিশ্বের সর্ববৃহৎ রেমিট্যান্স বাজারটি হলো ভারত। আর ভারতের হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের টার্গেট করেই তারা ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে নতুন রেমিট্যান্স সার্ভিস চালু করতে যাচ্ছে।
ফেসবুকের এমন আয়োজনে রীতিমতো উত্তেজিত বিনিয়োগকারীরা। ক্রিপ্টোকারেন্সির দুনিয়াটা উদীয়মান। এই ব্যবসার গুরুত্ব অনেকটা ফেসবুকের আগমনের ওপর নির্ভর করে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে উন্নয়নের জন্যে এখন পর্যন্ত ‘ফেসবুক কয়েন’ তেমন নজর কাড়েনি। মূলত ফেসবুকের ক্রিপ্টোকারেন্সি এজেন্ডা উদারপন্থী অর্থব্যবস্থাকে বাস্তবায়ন করবে। আর এর উত্থান বুঝতে রেমিট্যান্সব্যবস্থাকে জানতে হবে।
‘ইকোনমিক মাইগ্রেসন’ থেকে রেমিট্যান্সের ধারণা আসে। কারো কাছে অপ্রাতিষ্ঠানিক কমিউনিটি কিংবা ওয়েস্টর্ন ইউনিয়ন বা মানিগ্রামের মতো প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার মাধ্যমে অর্থ প্রেরণ করা হয়। অতি সাম্প্রতিক ব্যবস্থা হিসেবে মোবাইল পেমেন্ট সার্ভিসের কথা বলা যায়। আসলে অর্থ মজুরি হিসেবে এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভ্রমণ করে।
তবে বিশ্ব ব্যাংকের জন্যে রেমিট্যান্স এজেন্ডায় একটি বিষয় উঠে আসছে। তারা অর্থ পাঠানোর কাজটিকে আরো কম খরচে আনতে চায়। এ কাজে প্রতিযোগিতাও আছে। তাই কাজটাকে আরো সহজ করতে হবে।
২০১৪ সালেও ফেসবুক কার্যকর রেমিট্যান্স ব্যবস্থার দিকে সামান্য ইঙ্গিত দিয়েছিল। এ কাজে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের এগিয়ে আসার কাজে উৎসাহ দেয় বিশ্ব ব্যাংক। তাছাড়া রেমিট্যান্স পাঠানোর বাজারটি সম্প্রসারণশীল। এ ব্যবসা থেকে লাভা আসে।
ইকোনমিক মাইগ্রেশনের মাধ্যমে লভ্যাংশ বের করে আনবে ফেসবুক। সেইসঙ্গে এ বাণিজ্য দুনিয়ায় কলোনিয়াল শক্তি হিসেবেও আবির্ভূত হবে তারা। অর্থব্যবস্থায় বড় ধরনের উন্নয়নের প্রচেষ্টা থাকা দরকার। রেমিট্যান্স লেন-দেনে প্রাইভেট খাতের আগমনে নির্ভরশীলতাও বৃদ্ধি পাবে। ফেসবুকে এ খাতে এসে প্রাইভেটাইজেশন ঘটাবে। অর্থব্যবস্থায় নিজেদের অপরিহার্য প্লাটফর্ম হিসেবে দাঁড় করাবে।
গবেষণার মাধ্যমে ‘ব্যাংকিং দ্য আনব্যাংকেবল’ ধারণা সমৃদ্ধ হচ্ছে। যা ব্যাংকের মাধ্যমে করা দুষ্কর, তার সুব্যবস্থাই এই কর্মযজ্ঞের লক্ষ্য। এটা দারুণ জনপ্রিয়ও হচ্ছে। ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এ কাজে নিজেদের আধিপত্য বজায় রেখেছে। এখানে নানা শর্ত জুড়ে দিয়েছে। কিন্তু ফেসবুক তাদের কেন্দ্রিয় ব্যবস্থায় অনেক সমস্যার সমাধান দেবে অতি সহজে।
কৌশলগত দিক থেকে ফেসবুকের ক্রিপ্টোকারেন্সি স্ট্যাবলকয়েন হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। যার অর্থ এর একটা নির্দিষ্ট দাম থাকবে। আন্তর্জাতিকভাবে অর্থ লেন-দেনেই ব্যবহৃত হবে এই কয়েন। এমনিতেই ফেসবুকের হাতে কোটি কোটি মানুষের তথ্য রয়েছে। কাজেই এ পথে তাদের এগোতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে। আর এ কাজে ভারতের বাজার তাদের পরীক্ষামূলক গবেষণাগার হতে পারে।
সূত্র: রেড পিপার