অনলাইন গ্যাম্বলিং সাইট বেটউইনারের মাধ্যমে অর্থপাচারের প্রমাণ পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
বেটউইনারের সাইট পরিচালনাকারী তিন জন বাংলাদেশি এজেন্টকে গ্রেপ্তারের পর এ তথ্য জানিয়েছে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি)।
সিপিসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বেটউইনার সাইটে জুয়ায় অংশগ্রহণকারীদের টাকা বাইন্যান্স নামে মানি এক্সচেঞ্জ অ্যাপের মাধ্যমে মার্কিন ডলারে কনভার্ট করতো তারা। পরবর্তীতে ওই অ্যাপের মাধ্যমে এই টাকা বিভিন্ন দেশে পাচার হয়ে যেত।
বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মালীবাগ সিআইডি প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়।
এর আগে বুধবার (৩১ আগস্ট) কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিন এজেন্ট আবু বক্কর সিদ্দিক, আব্দুল্লাহ আল আউয়াল ও মো. তোরাফ হোসেনকে গ্রেপ্তার করে তারা।
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির সাইবার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ বলেন, “সাইবার পুলিশ সেন্টারের নিয়মিত মনিটরিংয়ের সময় বেটউইনার নামে অনলাইন বেটিং সাইটটি নজরে আসে, যেখানে অনলাইনে জুয়া খেলা হয়। সাইটটি নজরদারীর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের তিন এজেন্টকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়।”
তিনি বলেন, “একজন জুয়াড়ি মোবাইল নম্বর অথবা ইমেইলের মাধ্যমে বেটিং সাইটে বা অ্যাপসে একাউন্ট ওপেন করেন। সেসময় একাউন্টের বিপরীতে একটি ই-ওয়ালেট তৈরি হয়, যাকে জুয়াড়িরা ইউএসডিটি বলে থাকে। শুরুতে এর ব্যালেন্স থাকে শূন্য।”
“এই ওয়ালেটে ব্যালেন্স যোগ করার জন্য অনেক মাধ্যম রয়েছে যার মধ্যে বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায় এবং ট্রাস্ট এজিয়াটা অন্যতম। এগুলোর যেকোনো একটি ক্লিক করলে সেখানে একটি এজেন্ট নম্বর দেখায়। যে নাম্বারে নূন্যতম ৫০০ টাকা দিলে কিছুক্ষণের মধ্যে ই-ওয়ালেট বা ইউএসডিটি ব্যালেন্স যুক্ত হয়ে যায়। এ টাকা বা ব্যালেন্স দিয়ে সে পরবর্তীতে জুয়া খেলায় অংশ নিতে পারে,” যোগ করেন তিনি।
সম্প্রতি ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান এই জুয়ারি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনে অংশ নিয়েছিলেন। এরপরই বেটউইনারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে সিআইডি।
জুয়ারি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনে অংশ নেওয়ায় সাকিব আল হাসানকে নিয়ে নানা মহলে সমালোচনা হয়। কেন্দ্রীয় চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড় হিসেবে যেকোনো পণ্যের দূত হতে গেলে বিসিবির অনুমোদন প্রয়োজন।
কিন্ত এই চুক্তির খবর জানত না বিসিবি। এরপর বিসিবি সভাপতিও এ নিয়ে কথা বলতে বাধ্য হন। কারণ বাংলাদেশের আইন আর বিসিবির নীতি দুটোতেই জুয়া সংশ্লিষ্ট যেকোন কাজ অবৈধ।
আলোচনার মুখে পড়লেও শুরুতে সাকিব এই চুক্তি থেকে সরে আসতে চাননি। তার যুক্তি ছিল, সরাসরি বেটিং সাইট নয়, বেটিং সাইটের অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছেন তিনি।
বেটউইনারের সঙ্গে চুক্তি থেকে সরে না গেলে সেসময় সাকিব আল হাসানকে দল থেকে বাদ দেওয়ার ইঙ্গিত দেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এরপরই চুক্তি থেকে সরে আসেন তিনি।
এদিকে পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানাচ্ছে, দেশে বেটিং নিষিদ্ধ থাকায় ওইসব প্রতিষ্ঠানগুলো নানা কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছে। তারা সেলিব্রিটি এবং ইউটিউবারদেরকে টার্গেট করছেন।
এছাড়া বিভিন্ন মাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকহারে এসব ওয়েবসাইট বুস্ট করছে। তারা ওইসব জুয়ার অ্যাপগুলোকে ইনভেস্টমেন্ট অ্যাপ উল্লেখ করেও প্রচার চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে কর্মকর্তারা।