বৈদ্যুতিক বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ছাড়াও কম্পিউটার, সেলফোন, ট্যাবসহ বিভিন্ন ডিভাইসে চিপ ব্যবহার হয়। বাজার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার পাশাপাশি কর্মক্ষমতা বাড়াতে চিপ উৎপাদন প্রযুক্তিতে পরিবর্তন আনছে কোম্পানিগুলো। বর্তমানে জনপ্রিয়তায় এগিয়ে তিন ন্যানোমিটার প্রযুক্তিতে তৈরি চিপ। অ্যাপলের এ১৭প্রো চিপসেট এ প্রযুক্তিতে তৈরি। তবে বিশ্লেষক মিং-চি-কুওর মতে, আগামী বছর এ প্রযুক্তির চাহিদা কমে আসবে।
গিজমোচায়নার খবরে বলা হয়, অনেক কোম্পানি আগামী বছর চিপ উৎপাদন নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নেবে। অন্যদিকে কুপারটিনোর প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপলও ২০২৪ সাল থেকে তিন ন্যানোমিটার চিপের চাহিদা কমাবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে উৎপাদনকারী এএসএমএলকে ইইউভি ইকুইপমেন্ট বাজারজাত ২০-৩০ শতাংশ কমাতে হবে।
প্রযুক্তি বিশ্লেষক কুওর মতে, আগামী বছর তিন ন্যানোমিটার চিপের জন্য অ্যাপলের চাহিদা পূর্বাভাসের তুলনায় কম থাকবে। তার মতে, এটি কোম্পানির ম্যাকবুক ও আইপ্যাড বাজারজাত কমার ক্ষেত্রে চলতি বছর সবচেয়ে বড় অবনমন। এ দুটি পণ্যের বাজারজাত যথাক্রমে ৩০ ও ২২ শতাংশ কমেছে।
এক ব্লগপোস্টে বিশ্লেষক জানান, কভিড-১৯ মহামারীর সময় ওয়ার্ক ফ্রম হোমের প্রচলন বেড়েছিল। অন্যদিকে বর্তমানে নতুন বৈশিষ্ট্যের প্রতি গ্রাহকদের আগ্রহও কমে এসেছে। যে কারণে ডিভাইসগুলোর বিক্রিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ২০২৪ সালের হিসেবে তিন ন্যানোমিটার চিপের চাহিদা কমিয়েছে অ্যাপল। মূলত ম্যাকবুক ও আইপ্যাডের বাজার সেভাবে প্রবৃদ্ধি অর্জন না করায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
অ্যাপলের চাহিদা কমলে এর প্রভাব পড়বে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানি এএসএমএলের ওপর। এছাড়া আগামী বছর কোয়ালকমও তিন ন্যানোমিটার চিপের চাহিদা পূর্বাভাসের তুলনায় কমাবে। এর মূলে দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমত চিপ উৎপাদনে প্রয়োজনীয় উপাদান সরবরাহ বন্ধ করবে হুয়াওয়ে। দ্বিতীয় কারণ হলো স্যামসাংয়ের স্মার্টফোনে এক্সিনোস ২৪০০-এর ব্যবহার বৃদ্ধি।
সম্প্রতি বাজারে আনা মেট ৬০ ও ৬০ প্রো ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইসে সাত ন্যানোমিটার প্রযুক্তিতে তৈরি কিরিন ৯০০০এস ফাইভজি প্রসেসর ব্যবহার করেছে হুয়াওয়ে। এর মাধ্যমে কোম্পানিটি ভালো অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে। যেখানে আগে কোয়ালকমের ফোরজি ফ্ল্যাগশিপ প্রসেসর ব্যবহার করত চীনের এ প্রযুক্তি কোম্পানি। অন্যদিকে স্যামসাংও গ্যালাক্সি এস২৩ মডেলে স্ন্যাপড্রাগন ৮ জেন ২ চিপ ব্যবহার করে আসছিল। দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানিটিও এ চিপ ব্যবহার কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এর পরিবর্তে ২৪০০সহ এক্সিনোসের এস সিরিজে ঝুঁকছে।
তিন ন্যানোমিটার প্রসেস প্রযুক্তির মাধ্যমে অ্যাপলের এ১৭ প্রো চিপ তৈরি করেছে তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (টিএসএমসি)। তবে দ্রুতই চিপ উৎপাদন প্রযুক্তিতে পরিবর্তন আনতে পারছে না এ প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৬ সালের আগে দুই ন্যানোমিটার প্রযুক্তিতে চিপ উৎপাদনে যাবে না টিএসএমসি।
ব্যাটারির ব্যবহার কমাতে ও কার্যক্ষমতা বাড়াতে ফিনফেট ট্রানজিস্টর থেকে গেট অল অ্যারাউন্ড (জিএএ) প্রযুক্তিতে স্থানান্তরিত হতে চাইছে টিএসএমসি। এজন্য দুই ন্যানোমিটার প্রসেস প্রযুক্তি ব্যবহার কোম্পানিটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এর ব্যবহার শুরু হলে সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন খাতে স্যামসাং ফাউন্ড্রির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারবে টিএসএমসি। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তি জায়ান্টটি এরই মধ্যে তিন ন্যানোমিটার নোডে জিএএ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। কিন্তু দ্রুত উৎপাদনে যেতে না পারলে টিএসএমসির প্রতিযোগীরা এগিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন প্রযুক্তিবিশারদরা। আগামী বছর পাওয়ার ভায়া টেকনোলজি চালুর পরিকল্পনা নিয়েছে ইন্টেল। এর মাধ্যমে ২০২৫ সাল নাগাদ প্রসেস প্রযুক্তিতে ১৮এ (১ দশমিক ৮ ন্যানোমিটার) নোডের মাধ্যমে নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে পৌঁছানোর ব্যাপারে আশাবাদী যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রযুক্তি কোম্পানি।