চীনা বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি নতুন একটি লাইট-বেইজড কোয়ান্টাম কম্পিউটার উন্মোচন করেছেন। এটি ফোটন (আলোকরশ্মি) চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যসব কোয়ান্টাম কম্পিউটারের গতির রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। এর মডেল জিওঝাং ৩.০।
কম্পিউটারটি তৈরি করেছে চীনা পদার্থবিদ প্যান জিয়ানওয়ে এবং তার নেতৃত্বাধীন একটি দল। এটির ২৫৫টি ফোটন শনাক্তের সক্ষমতা রয়েছে। জিওঝাং ২.০ মডেলটি ১১৩টি এবং জিওঝাং ১.০ ৭২টি ফোটন শনাক্ত করতে পারত।
জিওঝাং ৩.০ ও গাউসিয়ান বোসন নমুনার সমস্যা সমাধানে জিওঝাং ২.০ থেকে কয়েক লাখ গুণ দ্রুততার সঙ্গে কাজ করে। এটি কোয়ান্টাম গণনার জন্য উপযুক্ত একটি গাণিতিক মডেল। গাউসিয়ান বোসন নমুনার সবচেয়ে জটিল নমুনাটিও এক মাইক্রো সেকেন্ডে গণনা করতে পারে এটি। এতদিন পর্যন্ত বিশ্বের দ্রুততম সুপার কম্পিউটার হিসেবে পরিচিত ফ্রন্টিয়ারের কাজটি সম্পন্ন করতে সময় লাগবে দুই হাজার কোটি বছরেরও বেশি।
প্যান জিয়ানওয়েইন ও তার দলের গবেষণাটি সম্প্রতি আমেরিকান বৈজ্ঞানিক জার্নাল ফিজিক্যাল রিভিউ লেটারস অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে। প্যান জিয়ানওয়েইন বলেন, ‘কোয়ান্টাম কম্পিউটারের আল্ট্রা-ফাস্ট সমান্তরাল কম্পিউটিং ক্ষমতা রয়েছে। এটি কোড ডিসিফারিং, বড় ডাটা অপ্টিমাইজেশন, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, ম্যাটেরিয়াল ডিজাইন ও ড্রাগ বিশ্লেষণের মতো ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট অ্যালগরিদমের মাধ্যমে প্রচলিত কম্পিউটারের তুলনায় শক্তিশালী কম্পিউটিং ক্ষমতাসম্পন্ন সাপোর্ট দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
টরন্টোভিত্তিক কোম্পানি জানাদু গত বছরের জুনে জানায়, তাদের কোয়ান্টাম কম্পিউটার বোরিয়ালিস ২১৯ ফোটন পর্যন্ত শনাক্ত এবং ৩৬ মাইক্রো সেকেন্ডে জিবিএস কাজ সম্পাদন করতে পারে। একটি প্রচলিত কম্পিউটারের একই কাজ সম্পন্ন করতে নয় বছর সময় লাগবে।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিভিন্ন ধরনের কোয়ান্টাম কম্পিউটারের তুলনা করার সময় লোকজনের মনোযোগ বাড়ানো উচিত। কেননা এগুলো বিভিন্ন পদ্ধতির ভিত্তিতে তৈরি করা হয়।
সাধারণত তিন ধরনের কোয়ান্টাম কম্পিউটার রয়েছে। এগুলো হলো ইলেকট্রনভিত্তিক, অ্যাটমভিত্তিক ও ফোটন বা আলোকরশ্মিভিত্তিক। ব্রাসেলসভিত্তিক ব্যবস্থাপনাবিষয়ক একটি কনসাল্টিং ফার্ম সম্প্রতি একটি জরিপ প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, প্রায় ৪০ শতাংশ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন ইলেকট্রনভিত্তিক কোয়ান্টাম কম্পিউটারগুলোর পরবর্তী দশকে সফল হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। ৩৫ শতাংশ মনে করেন চূড়ান্ত বিজয়ী হবে অ্যাটমভিত্তিক কোয়ান্টাম কম্পিউটারগুলো এবং ২৬ শতাংশের বিশ্বাস ফোটনভিত্তিক কোয়ান্টাম কম্পিউটার এগিয়ে থাকবে।
সাধারণভাবে গুগল ও আইবিএমের মতো বড় প্রযুক্তি জায়ান্টগুলো ইলেকট্রনভিত্তিক কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির দিকে মনোনিবেশ করছে। অন্যদিকে, অপেক্ষাকৃত ছোট সংস্থাগুলো ফোটনভিত্তিক কম্পিউটারের দিকে নজর দিচ্ছে।
ফোটনভিত্তিক কোয়ান্টাম কম্পিউটার নির্মাতাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাইকোয়ান্টাম, যুক্তরাজ্যের ওআরসিএ, নু কোয়ান্টাম ও তন্দ্রাসিস্টেম গ্লোবাল, কানাডার জানাদু ও ফ্রান্সের কোয়ান্ডেলার নাম উল্লেখযোগ্য।
চীন ফোটনভিত্তিক কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি করতে হেফেইয়ের ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি অব চায়নার (ইউএসটিসি) গবেষণা দলটির ওপর নির্ভর করছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্যানেল দল জিওঝাং ১.০ উন্মোচন করে। এটি ছিল চীনের প্রথম আলোভিত্তিক কোয়ান্টাম কম্পিউটার, যা ৭৬টি ফোটন শনাক্ত করতে পারে। সে সময় চীন নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের পর কোয়ান্টাম আধিপত্য অর্জনকারী দ্বিতীয় দেশ হিসেবে দাবি করেছিল।