সিঙ্গাপুরের ন্যানইয়াং টেকনোলজিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা পাতলা সেমিকন্ডাক্টরের ফাইবার বা তন্তু তৈরি করেছেন, যার মাধ্যমে কাপড়ে বোনা যাবে। এই ফাইবার দিয়ে স্মার্ট পরিধানযোগ্য ইলেকট্রনিকস পণ্য তৈরির কাজও শুরু করেছেন বিজ্ঞানীরা। নেচার জার্নালে এ বিষয়ে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে।
ন্যানইয়াং টেকনোলজিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এরই মধ্যে যান্ত্রিক নকশার মাধ্যমে ১০০ মিটার লম্বা চুলের মতো পাতলা ফাইবার তৈরি করেছেন। এখন এই ফাইবার দিয়ে কাপড় বোনার কাজ চলছে। ফাইবারের মান ও কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য একটি স্মার্ট টুপিও তৈরি করা হয়েছে, যা একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সংকেত গ্রহণ করে নিরাপদে রাস্তা পার হতে সাহায্য করতে পারে।
বিজ্ঞানীদের দাবি, নতুন এই উদ্ভাবন বহুমাত্রিক সেমিকন্ডাক্টর ফাইবার বিকাশে ভূমিকা রাখবে। শুধু তাই নয়, বৈদ্যুতিক ও আলোর মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদানের পাশাপাশি যোগাযোগ প্রযুক্তির বিকাশও ঘটাবে। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী ওয়েই লেই বলেন, ‘আমরা উচ্চ-মানের সেমিকন্ডাক্টর ফাইবার তৈরি করেছি। সেমিকন্ডাক্টর ফাইবার তৈরির কাজ বেশ জটিল প্রক্রিয়া। আমাদের ফাইবার প্রযুক্তি দীর্ঘস্থায়ী চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে ত্রুটিমুক্ত ফাইবার তৈরিতে সহায়তা করবে।’
ত্রুটিমুক্ত ফাইবার তৈরির জন্য বিজ্ঞানীরা সাধারণ সেমিকন্ডাক্টর উপাদান ও সিনথেটিক উপাদানের মধ্যে সংযোগ করতে সিলিকা গ্লাস টিউবসহ একটি সিলিকন সেমিকন্ডাক্টর কোর ও একটি অ্যালুমিনোসিলিকেট গ্লাস টিউবসহ জার্মেনিয়াম কোর ব্যবহার করেছেন। প্রাথমিকভাবে গবেষণাগারের পরীক্ষায় সেমিকন্ডাক্টর ফাইবার চমৎকার কর্মক্ষমতা দেখিয়েছে। আলোকসংবেদী পরীক্ষায় দেখা গেছে, বিভিন্ন ফাইবার অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ইনফ্রারেড পর্যন্ত দৃশ্যমান আলোর পরিসর শনাক্ত করতে পারে। শুধু তাই নয়, ৩৫০ কিলোহার্টজ ব্যান্ডউইথ পর্যন্ত সংকেত পাঠাতে পারে ফাইবারগুলো। সেমিকন্ডাক্টর ফাইবার সাধারণ ফাইবারের তুলনায় ৩০ গুণ বেশি শক্তিশালী। আর তাই সেমিকন্ডাক্টর ফাইবার দিয়ে বোনা একটি কাপড় ওয়াশিং মেশিনে ১০ বার পরিষ্কার করা হলেও নষ্ট হয়নি।
সেমিকন্ডাক্টরের ফাইবার তৈরি বিষয়ে বিজ্ঞানী গাও হুয়াজিয়ান জানিয়েছেন, ‘সেমিকন্ডাক্টর তৈরিতে সিলিকন ও জার্মেনিয়াম দুটি বহুল ব্যবহৃত উপকরণ। এসব পদার্থ অত্যন্ত ভঙ্গুরপ্রবণ হিসেবে বিবেচিত। আমরা সেই চ্যালেঞ্জকে মাথায় রেখে নতুন ফাইবার তৈরি করেছি। এসব ফাইবার দিয়ে নানা ধরনের পোশাক তৈরির কাজ চলছে।’