সরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়ার পরও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় আইসিটি খাতে জিডিপিতে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। এ খাতের ৯৯ শতাংশ উদ্যোক্তা প্রথম প্রজন্মের এবং তারা ব্যাংক ঋণ পান না। এই অবস্থায় যদি এ খাতে কর অবকাশ সুবিধা বঞ্চিত হয় তাহলে আগামীতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাবে এবং শিল্প রফতানি হ্রাস পাবে। মেধাবীরা চলে যাবে বিদেশে। এমন পরিস্থিতিতে এ খাতে কর অব্যাহতি সুবিধা চালু রাখার দাবি জানিয়েছে খাত সংশ্লিষ্টরা।
রোববার (৫ মে) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট ফর স্মার্ট বাংলাদেশ’ গোল টেবিল বৈঠকে এ প্রস্তাবনা তুলে ধরেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান কাজী নাবিল আহমেদ, সংসদ সদস্য ফেরদৌস আহমেদ এবং জারা মাহবুব।
মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচক ছিলেন বিডি জবসের প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাশরুর, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজ, ব্রেইন স্টেশনের সহপ্রতিষ্ঠাতা রাইসুল কবির, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট অ্যাঞ্জেল ইনেভেস্টর তানভীর আলী, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ হোসাইন, সিআরআই পলিসি অ্যাডভাইজার ইমরান আহমেদ, স্মার্ট টেকনোলজিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মাদ জহিরুল ইসলাম, পিআরআই সিনিয়র ফেলো ড. মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান, স্পেকট্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কনসোর্টিয়ামের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফোরকান বিন কাশেম, এডিএন টেকনোলজিস চেয়ারম্যান আসিফ মাহমুদ, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট মো. আশরাফ আহমেদ, চট্টগ্রাম চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি চেয়ারম্যান ওমর হাজ্জাজ, এফবিসিসিআই ভাইস প্রেসিডেন্ট আমিন হেলালী প্রমুখ।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, সরকার নানা উদ্যোগ নেয়ার পরও ভারত, এস্তোনিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনস থেকে আইসিটি খাতে জিডিপিতে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। রাজস্ব বোর্ডের ভুল উপাত্তের কারণে বাংলাদেশে আইসিটি খাতে কর অবকাশ সুবিধা তুলে দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। তাদের মতে, বিশ্ব যখন এআই নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে তখন এমন সিদ্ধান্তে এ সম্ভাবনাময় খাত মুখ থুবড়ে পড়বে। এই খাতকে জিডিপি নয় ক্রসকাটিং সেক্টর হিসেবে বহুমুখী কল্যাণের খাত হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। প্রয়োজন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েট তৈরির চেয়ে দক্ষ কর্মী গড়ে তুলে জ্ঞানভিত্তিক ইকোনোমির দিকে নজর দেয়া। এই খাত যেহেতু সম্ভাবনার, তাই ব্যবসায়ীদের এই ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে সুযোগ দেয়া দরকার। ট্যাক্স গ্র্যান্ট দিলে ব্যবসায়ীদের ওপর কর দেয়াটা সহজ হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে সমর্থন দিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘আগামী ৫ বছরে আইসিটি খাতে ৫ বিলিয়ন রফতানির লক্ষ্য নেয়া হয়েছে। ১০ বছর সাপোর্ট পেলে আইসিটি হবে দেশের প্রধান আয়ের খাত। এআই ও সাইবার সিকিউরিটি প্রযুক্তির মতো বিষয়ে দক্ষ জনসম্পদের রিসোর্স পুল গঠন করা না হলে আগামীতে জনসম্পদ বেকার হয়ে পড়তে পারে।’
আইসিটি খাত সংশ্লিষ্ট এ প্রস্তাব আমলে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, ‘যারা ট্যাক্স দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) তাদের ওপর আরও ট্যাক্সের বোঝা চাপায়। কিন্তু যারা ট্যাক্স দিচ্ছে না তাদের ট্যাক্স নেটের আওতায় আনার কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।’
আগামী বাজেটে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার আশ্বাস দেন তিনি।
ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ও প্রাইভেট ইকুইটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ভিসিপিয়াব) আয়োজনে গোল টেবিল বৈঠক সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সভাপতি শামীম আহসান।