বিশ্বের সবচেয়ে বড় হ্যাকাথন ‘নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ’ এর চলতি বছরের ‘বাংলাদেশ পর্ব’ অনুষ্ঠিত হলো ঢাকায়। গত ৪ অক্টোবর (শুক্রবার) থেকে শুরু হওয়া টানা ৩৬ ঘন্টার এই হ্যাকাথন প্রতিযোগিতা গতকাল (শবিবার) শেষ হয়েছে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর উদ্যোগে এবং বেসিস স্টুডেন্টস ফোরামের সহযোগিতায় আয়োজিত ১১তম নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ-এর সফল পরিসমাপ্তি ঘটে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে।
শনিবার আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ (এআইইউবি) এর অডিটোরিয়ামে ইভেন্টের শেষ দিনে প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের চার্জ ডি’অ্যাফেয়ার্স হেলেন লাফেভ এবং সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এআইইউবি-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন নাদিয়া আনোয়ার।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ, জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি এম রাশিদুল হাসান, সহ-সভাপতি (প্রশাসন) সৈয়দ মোহাম্মাদ কামাল, সহ-সভাপতি (অর্থ) ইকবাল আহমেদ ফখরুল হাসান, বেসিসের পরিচালক মীর শাহরুখ ইসলাম ও বিপ্লব ঘোষ রাহুল, এবং নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ ২০২৪ এর আহ্বায়ক অভিজিৎ ভৌমিক ও নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশ পর্বের উপদেষ্টা মোহাম্মদ মাহদী-উজ-জামান।
উপস্থিত অতিথিবর্গের মাঝে আরও ছিলেন বাংলাদেশের ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের অ্যাক্টিং ইকোনমিক ইউনিট চিফ জেমস গার্ডিনার এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ মামদুদুর রশীদ।
অনুষ্ঠানে এআইইউবি-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন নাদিয়া আনোয়ার বলেন, “এই ইভেন্টটি শুধুমাত্র আমাদের দেশের তরুণদের জন্যই নয় বরং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ উৎকর্ষ সাধনের জন্যও তাৎপর্যপূর্ণ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সর্বদা মানুষের অগ্রগতির অগ্রভাগে রয়েছে। প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, শিল্প এবং সমাজকে নতুন আকার দিচ্ছে। এটি সর্বোপরি আমাদের তরুণদের আগামী দিনের বিজ্ঞানী এবং প্রযুক্তিবিদ হওয়ার জন্য উত্সাহিত করবে। এআইইউবি এমন আয়োজনের অংশীদার হতে পেরে গর্বিত এবং আমরা পরবর্তীতেও এই আয়োজনের সাথে থাকতে চাই।”
ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের চার্জ ডি’অ্যাফেয়ার্স হেলেন লাফেভ বলেন, “নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে আপনাদের এই বিস্ময়কর সাফল্যের জন্য আমি আপনাদেরকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ ২০২৪ হলো একটি অসাধারণ প্ল্যাটফর্ম যা শুধুমাত্র উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করে না বরং আমাদের তরুণদের মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি শেখার আগ্রহ জাগায়। এটা অসাধারণ যে বিশ্বের অন্য কোনো দেশ টানা তিনবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়নি। আপনাদের নিজেদেরকে নিয়ে আপনাদের গর্ব করা উচিৎ। আমি পরের বছর আবারো আপনাদের মধ্য থেকে পঞ্চম বারের মতো বিজয়ী দল দেখতে চাই।”
সমাপনী বক্তব্যের শুরুতে মুগ্ধের স্বপ্ন পুরণ এবং তানভিনের ড্রোন উড়ানোর চ্যালেঞ্জ গ্রহণে উপস্থিত প্রতিযোগীদের প্রতিজ্ঞা করান বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ। তিনি বলেন, “আমি মুগ্ধের ভাই স্নিগ্ধের সাথে কথা বলেছি তখন তার চোখে কষ্টের পাশাপাশি অনেক স্বপ্নও দেখেছি, আমি বিশ্বাস করি তোমরা জেন জিরাই সেই স্বপ্ন পুরণ করে দেখাবে। বাংলাদেশ কখনো হেরে যাওয়ার দেশ নয়। শত শত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আমরা নিয়মিতভাবে এগিয়ে যাচ্ছি। স্টুডেন্টরা এই নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে অংশগ্রহণের মাধ্যমে লোকাল থেকে গ্লোবাল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, এমনকি পরবর্তিতে নাসাতে চাকরিও করছে।”
তিনি আরও বলেন, বেসিস টানা ১১তম বারের মতো এই প্রতিযোগিতা আয়োজন করছে, এই ধারাবাহিকতা আমাদের তরুণদেরকে উজ্জীবিত করবে এবং পঞ্চমবার বিশ্বজয় করবে বলে আমি আত্মবিশ্বাসী।”
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্র্রেশন-নাসা আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বের ১৮৫টি দেশের প্রযুক্তিবিদ, বিজ্ঞানী, ডিজাইনার, আর্টিস্ট, শিক্ষাবিদ, উদ্যোক্তাদের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রের মেধাবী তরুণদের একত্রিত করে পৃথিবীর বিভিন্ন বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানে উদ্ভাবনী সমাধান খুঁজে বের করার লক্ষ্যে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।
এরই অংশ হিসেবে বেসিসের উদ্যোগে বাংলাদেশের ৯টি শহরে (ঢাকা, চট্রগ্রাম সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, ময়মনসিংহ এবং কুমিল্লা) এ আয়োজন করেছে। নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে এবার ১ কোটি শিক্ষার্থীকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্ত করার পাশাপাশি ২ লাখ শিক্ষার্থীকে সরাসরি ও প্রতিযোগিতায় যুক্ত করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ‘লুনার ভিআর প্রজেক্ট’ বেস্ট ইউজ অব ডাটা ক্যাটাগরিতে চাঁদে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা দিবে এমন ভার্চুয়াল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘টিম অলীক।
২০২১ সালে ‘বেস্ট মিশন কনসেপ্ট’ ক্যাটাগরিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এবং বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (বাউয়েট) সম্মিলিত দল ‘টিম মহাকাশ’।
এরপর ২০২২ সালে “টিম ডায়মন্ডস” – “সবচেয়ে অনুপ্রেরণামূলক” বিভাগে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়। নাসা ইন্টারন্যাশনাল স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ ২০২৩-এর বেস্ট স্টোরিটেলিং ক্যাটাগরিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশের টিম ভয়েজার্স।
নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ ২০২৪ এ বিজয়ীয়া হলেন:
ঢাকা: চ্যাম্পিয়ন কোয়ান্টাম ভয়েজার্স, ১ম রানার আপ টিম টাইটান, ২য় রানার আপ টিম হাইড্রো (ভার্চুয়াল), বরিশাল: চ্যাম্পিয়ন টিম ফিনিক্স, ১ম রানার আপ অ্যাকোয়া-অ্যাগ্রোপ্রেডিক্টা, ২য় রানার আপ টিম ইয়টাবাইট, চট্টগ্রাম: চ্যাম্পিয়ন আরবান ইউটোপিয়ানস (ভার্চুয়াল), ১ম রানার আপ টিম ব্লুসেন্ট্রি, ২য় রানার আপ টিম রিকারশন, কুমিল্লা: চ্যাম্পিয়ন টি মাইনাস জিরো (ভার্চুয়াল), ১ম রানার আপ হেলিও আলকেমিস্ট (ভার্চুয়াল), ২য় রানার আপ এক্সোভার্স (ভার্চুয়াল), খুলনা: চ্যাম্পিয়ন টিম অ্যাটলাস, ১ম রানার আপ টিম নভাফ্লেয়ার, ২য় রানার আপ গ্লোবাল প্রোটেক্টর, ময়মনসিংহ: চ্যাম্পিয়ন ইকোরেঞ্জার্স (ভার্চুয়াল), ১ম রানার আপ মনসুনফাইভ, ২য় রানার আপ লুনার_হার্ভেস্টার্স (ভার্চুয়াল), রংপুর: চ্যাম্পিয়ন টিম ইনোভেটর্স বিডি (ভার্চুয়াল), ১ম রানার আপটিম নভোচারী, ২য় রানার আপ এগ্রি ভিশন, রাজশাহী: চ্যাম্পিয়ন এনভো_ফাইটার্স (ভার্চুয়াল), ১ম রানার আপ কোডব্ল্যাক (ভার্চুয়াল), ২য় রানার আপ দ্য অর্বভেঞ্জার্স (ভার্চুয়াল), সিলেট: চ্যাম্পিয়ন টিম ওআরসিএ (ভার্চুয়াল), ১ম রানার আপ টিম নভো, ২য় রানার আপ সাস্ট ব্রেইনস্টর্মারস।