২০৩৪ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ফাইভজি চিপসেটের বাজার মূল্য দাঁড়াতে পারে ২৪ হাজার ৭৪৩ কোটি ডলার। এক্ষেত্রে বাজারটি ২০২৪ সাল থেকে প্রতি বছর ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ হারে বাড়বে। উচ্চ গতির ইন্টারনেটের চাহিদা, বিস্তৃত নেটওয়ার্ক কভারেজ ও স্মার্ট সিটি প্রকল্প সম্প্রসারণের কারণে ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) ডিভাইসের বাড়তি চাহিদা এ প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। বৈশ্বিক বাজার গবেষণা ও পরামর্শক সংস্থা প্রেসিডেন্স রিসার্চের চলতি মাসের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
সংস্থাটি বলছে, ২০২৪ সালে এ বাজার ৪ হাজার ৭৬৮ কোটি ডলারে পৌঁছবে।
২০২৩ সালে ফাইভজি চিপসেট বাজারে সর্বোচ্চ হিস্যা ছিল এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের (৪৮ শতাংশ)। প্রেসিডেন্স রিসার্চের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৪ সালে এ অঞ্চলে ফাইভজি চিপসেট বাজার মূল্য প্রায় ২ হাজার ২৮৯ কোটি ডলার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০৩৪ সালের মধ্যে সংখ্যাটি প্রায় ১২ হাজার কোটি ডলারে দাঁড়াবে। এ সময় বাজারটি প্রতি বছর ১৮ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ হারে বাড়বে।
প্রেসিডেন্সের মতে, ফাইভজি প্রযুক্তি সমর্থিত বেস স্টেশন ও স্মার্টফোনে ব্যাপক বিনিয়োগের কারণে গত বছর এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চল ফাইভজি চিপসেট বাজারের শীর্ষে ছিল। এ সময় হুয়াওয়ে ও স্যামসাংয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ কোম্পানিগুলো ফাইভজি চিপসেট মডিউল তৈরিতে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে।
এদিকে জিএসএমএর মোবাইল ইকোনমি প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগামী বছর বাণিজ্যিকভাবে ফাইভজি নেটওয়ার্ক চালু হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে এশিয়া অঞ্চলে সাড়ে ৬৭ কোটির বেশি ফাইভজি সংযোগ থাকবে। অর্থাৎ পরবর্তী কয়েক বছর এশিয়ার বড় একটি অংশ ফাইভজি প্রযুক্তি ব্যবহার করবে।
প্রেসিডেন্স রিসার্চ আরো বলছে, উন্নত প্রযুক্তি উৎপাদনের প্রয়োজনীয়তা বাড়ায় চীন ও ভারতে ফাইভজি চিপসেট উপাদানের ব্যবহার আগামী বছরগুলোয় বাড়বে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে ফাইভজি চিপসেট বাজারের ব্যাপক সম্প্রসারণ প্রত্যাশা করছে সংস্থাটি। কারণ স্মার্ট সিটি, স্মার্ট ইন্ডাস্ট্রি ও হোম অটোমেশন প্রকল্পে ব্যাপক বিনিয়োগ হয় এ অঞ্চলে। এছাড়া উন্নত গ্র্যাফিকসসহ অনলাইন গেমিং যুক্তরাষ্ট্রের খেলোয়াড়দের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। দেশটি স্বয়ংক্রিয় যানবাহন ও স্মার্ট ট্রান্সপোর্ট অবকাঠামো ব্যবহারে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এসব প্রযুক্তি যুক্তরাষ্ট্রে ফাইভজি চিপসেটের চাহিদা বাড়াবে বলে ধারণা করছেন প্রেসিডেন্সের বিশ্লেষকরা।
জিএসএমএ পূর্বাভাস দিয়েছে যে ২০২৫ সালের মধ্যে উত্তর আমেরিকায় আইওটি সংযোগের সংখ্যা দাঁড়াবে ৫৪০ কোটি ডলারে। উল্লেখ্য, আইওটি হলো মানুষ ও বিভিন্ন যন্ত্রের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা বিশাল এক নেটওয়ার্ক। এ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যন্ত্রগুলো তথ্য আদান-প্রদানের পাশাপাশি পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুযায়ী সেসব তথ্য বিশ্লেষণ করে কাজে লাগাতে পারে। বর্তমানে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পণ্য গুদামে রাখা থেকে শুরু করে ভোক্তার হাতে পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত আইওটি ব্যবহার করছে। অটোমেশনের জন্য কারখানা ও কৃষিতে এর ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে।
প্রযুক্তিসংশ্লিষ্টদের মতে, ফাইভজি চিপসেটের প্রধান লক্ষ্য ব্যবহারকারীদের ফাইভজি নেটওয়ার্কের চাহিদা অনুযায়ী একটি ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক তৈরিতে সহায়তা করা। ইন্টারনেট সংযুক্ত ডিভাইসের সংখ্যা বাড়ায় ফাইভজি প্রযুক্তির চাহিদা বেড়েছে। বর্তমানে ফোরজি এলটিইর পর ফাইভজি হলো পরবর্তী প্রজন্মের স্মার্ট মোবাইল নেটওয়ার্ক। এসব নেটওয়ার্ক মোবাইল ব্রডব্যান্ড থেকে শুরু করে আইওটি প্রযুক্তি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থায় সংযোগ বিস্তৃত করে। ফলে বিশ্বের সব স্থানে দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়। উচ্চ গতির ইন্টারনেট ও বিস্তৃত নেটওয়ার্ক কভারেজের চাহিদা বাড়ায় এ শিল্প সম্প্রসারণ হচ্ছে।
এছাড়া পূর্বাভাসকালে ফাইজি চিপসেট বাজারের সম্প্রসারণে ভূমিক রাখবে মোবাইল ব্রডব্যান্ড অপারেটিং ফ্রিকোয়েন্সির বাড়তি চাহিদা। তবে ফাইভজি শিল্পের প্রবৃদ্ধিতে কিছু জটিলতার কথাও উল্লেখ করেছেন প্রযুক্তিবিদরা, যেমন উচ্চ বিনিয়োগ খরচ, প্রযুক্তি ও অবকাঠামো তৈরিতে চ্যালেঞ্জ ও তথ্যের গোপনীয়তা এবং সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ।