ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট হ্যাকারদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্যবস্তু। কারণ যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত এসব প্লাটফর্মে ব্যক্তিগত তথ্য থাকে। অন্যান্য অ্যাকাউন্টের সঙ্গেও লিংক করেন ব্যবহারকারীরা। কিন্তু একই পাসওয়ার্ড বারবার ব্যবহার করা, টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু না করা এবং কিংবা প্রয়োজনের তুলনায় তথ্য শেয়ার করায় এসব অ্যাকাউন্ট হ্যাকারদের জন্য হ্যাক করা সহজ হয়
ফেসবুক
বিশ্বজুড়ে ফেসবুকের ৩০০ কোটির বেশি ব্যবহারকারী রয়েছে। ফলে এটি ব্যক্তিগত তথ্যের বিশাল ভাণ্ডার। প্রতিটি অ্যাকাউন্টে জন্মতারিখ, বন্ধুদের তালিকা, ই-মেইল, ফোন নম্বর, লোকেশন ও পেমেন্ট তথ্য থাকতে পারে। হ্যাকাররা এসব তথ্য পরিচয় চুরি, ফিশিং (প্রতারক লিংক পাঠিয়ে তথ্য হাতিয়ে নেয়া) বা ডার্ক ওয়েবে বিক্রি করতে পারে।
ইনস্টাগ্রাম
ইনস্টাগ্রাম শুধু ছবি শেয়ার করার প্লাটফর্ম নয়, বরং প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব (ইনফ্লুয়েন্সার), ব্যবসা ও ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। হ্যাকাররা অ্যাকাউন্ট দখল করে প্রতারণামূলক পণ্য প্রচার করতে পারে বা অ্যাকাউন্ট ফিরিয়ে দেয়ার নামে মুক্তিপণ দাবি করতে পারে।
হোয়াটসঅ্যাপ
হোয়াটসঅ্যাপে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন থাকলেও হ্যাকাররা ব্যবহারকারীর পরিচয় নিশ্চিত করার পদ্ধতিকে টার্গেট করে। সিম সুইচিং বা ফিশিংয়ের মাধ্যমে তারা অন্যের অ্যাকাউন্ট নিয়ন্ত্রণে নিতে পারে। একবার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হলে তারা বন্ধুবান্ধব ও পরিবারকে প্রতারণামূলক লিংক পাঠিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতে পারে।
অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখতে যা করতে হবে
১. শক্তিশালী ও আলাদা পাসওয়ার্ড ব্যবহার
এক্ষেত্রে প্রথম প্রতিরক্ষা হলো শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার। একই পাসওয়ার্ড বারবার ব্যবহার করা যাবে না। পাসওয়ার্ডে বড় হাতের ও ছোট হাতের অক্ষর, সংখ্যা ও বিশেষ চিহ্ন যুক্ত করতে হবে। একইভাবে সহজ কিছু যেমন “password123” বা “abcd1234” ব্যবহার করা যাবে না।
প্রতিটি অ্যাকাউন্টের জন্য আলাদা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে। সব পাসওয়ার্ড মনে রাখা কঠিন হলে পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করা যেতে পারে।
পাবলিক প্লেসে (ক্যাফে, বাস, ট্রেন) থাকলে কেউ যেন পাসওয়ার্ড দেখে ফেলতে না পারে, সেজন্য গোপনীয়তা রক্ষাকারী স্ক্রিন প্রোটেক্টর ব্যবহার করুন। এ ধরনের স্ক্রিন প্রোটেক্টর শুধু সরাসরি সামনে থেকে দেখলে পরিষ্কার দেখা যায়। বাঁ বা ডান পাশ থেকে কেউ তাকালে স্ক্রিন কালো বা ঝাপসা দেখাবে।
২. টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু করা
টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন অ্যাকাউন্টে বাড়তি নিরাপত্তা যোগ করে। এটি একটি অতিরিক্ত স্তরের নিরাপত্তা, যেখানে পাসওয়ার্ড দেয়ার পরও একটি ভেরিফিকেশন কোড পাঠানো হয়।
যদি কারও পাসওয়ার্ড হাতেও চলে যায়, তাহলে টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন কোড ছাড়া তারা ঢুকতে পারবে না। গুগল অথেনটিকেটর বা Authy-র মতো অ্যাপ ব্যবহার করা যেতে পারে, যা প্রতি ৩০ সেকেন্ড পরপর নতুন কোড তৈরি করে। এছাড়া ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ফেস আইডি ব্যবহার করতে পারেন।
৩. সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন থাকা
সবকিছু করলেও হ্যাকাররা সবসময় নতুন উপায়ে আক্রমণ চালানোর চেষ্টা করবে। তাই সর্বশেষ সাইবার নিরাপত্তা আপডেট সম্পর্কে জানুন, ফিশিং প্রতারণা চেনার দক্ষতা অর্জন জরুরি এবং যাচাই ছাড়া কোনো লিংকে ক্লিক করা যাবে না। অনলাইনে নিরাপদ থাকতে হলে সতর্ক থাকাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ!