টেলিকম খাতে ভারসাম্য রাক্ষায় রাষ্ট্রীয় মোবাইল অপারেটর টেলিটক শক্তিশালী করার মিশনে বিদেশী দেশ আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
জাতীয় সংসদে মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের প্রশ্নের জবাবে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘আমাদের উপলব্ধি করা উচিত, টেলিটকের মতো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান কী কারণে সমকক্ষতা অর্জনের ধারেকাছেও যেতে পারেনি। বরং বাংলাদেশের মোবাইল ফোন মার্কেটের তলানিতে বসে আছে। গ্রামীণফোন বাংলাদেশে ৪০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। আর গত বছর পর্যন্ত আমি হিসাব নিয়ে দেখেছি, টেলিটকের বিনিয়োগ ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এক সময়কার বিটিটিবিকে ভেঙে যে কয়টা কোম্পানি করা হয়েছে তার মধ্যে একটি বিটিসিএল। অন্যটি টেলিটক। আমি মনে করি, দুটি প্রতিষ্ঠান এক থাকলে তার শক্তি অনেক বেশি হতে পারত।’
মন্ত্রী বলেন, ‘গত দেড় বছরে টেলিটকের যে প্রকল্পগুলো নেওয়া হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন অব্যাহত রয়েছে। তাতে প্রত্যাশা করতে পারি, টেলিটক অচিরেই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠবে। টেলিটকে বেশ কয়েকটি দেশ বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করছে এবং তা পর্যালোচনার পর্যায়ে আছে। এ ক্ষেত্রে কারও সঙ্গে হ্যান্ডশেক করা সুবিধাজনক হলে নিশ্চয়ই আমরা তা গ্রহণ করব। একই সঙ্গে বিটিসিএলের যেসব প্রযুক্তিগত সুবিধা রয়েছে, তাতে টেলিটককে সম্পৃক্ত করা গেলে উভয় প্রতিষ্ঠান উপকৃত হবে। এই বিষয়ের প্রতি আমরা নজর দিচ্ছি।’
সরকারি দলের শামীম ওসমানের প্রশ্নের জবাবে মোস্তাফা জব্বার বলেন, গ্রামীণফোন বা রবিসহ অন্যান্য মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট অপারেটররা সরকারকে বিভিন্নভাবে কর দেয়। তারা গ্রস রেভিনিউয়ের (মোট আয়) শতকরা প্রায় ৫০ শতাংশ সরকারকে দেয়। অর্থাৎ তাদের গ্রস রেভিনিউ ১০০ টাকা হলে তার অর্ধেকটা সরকারের রাজস্ব খাতে যায়।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অডিট করতে গিয়ে গ্রামীণফোন ও রবির ক্ষেত্রে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি, যে পদ্ধতিতে তারা সরকারকে রাজস্ব দিয়েছে, তার বাইরে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কর ফাঁকি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ক্ষেত্রে গ্রামীণের কথা উল্লেখ করতে গেলে বলা যায়, তাদের কাছে মূল পাওনা আসলে ৪ হাজার কোটি টাকার মতো। কিন্তু যেহেতু তারা এই কর দেয়নি, তাই তা সারচার্জ এবং সুদ মিলিয়ে ১২ হাজার ৮০০ কোটি টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে।’
বকেয়া টাকা আদায় করতে গিয়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে একটু সংকটের মধ্যে পড়তে হয়, জানিয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘আমরা যদি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করি, ধরা যাক টাকা না দেওয়ার জন্য গ্রামীণের লাইসেন্স বাতিল করে দিলাম। কিন্তু এতে চাপটি পড়বে দেশের জনগণের ওপর। ফলে জনগণের ব্যবস্থাটি সঠিক রেখেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি চিন্তা করতে হয়। আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান টেলিটক বিকল্প হিসেবে দাঁড়ানোর সক্ষমতা অর্জন করতে পারলে অন্যদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব ছিল। তার পরও রাষ্ট্রীয় অর্থ আদায় করার জন্য আমরা আইনগত দিক থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপ গ্রহণ করছি।’
জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, পাওনা আদায়ের জন্য সর্বশেষ গ্রামীণের ব্যান্ডউইডথের ৩০ ভাগ গ্যাপিং (কমিয়ে দেওয়া) এবং রবির ১৫ ভাগ গ্যাপিং করা হয়েছে। তাদের বলা হয়েছে, অবিলম্বে যেন তারা পাওনা পরিশোধ করে। মন্ত্রী আরও বলেন, ‘দুঃখজনক যে আমরা কোনো অপারেটরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গেলে তারা আদালতে যায়। তাতে পুরো প্রসেসটাই বিলম্বিত হয়ে যায়। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরে এই বকেয়াটা রয়ে গেছে।’
মোস্তাফা জাব্বার জানান, মোবাইল ফোন অপারেটরদের মধ্যে গ্রামীণ ও রবির অডিট হয়েছে। অন্য যারা আছে তাদেরও অডিট হবে। পাওনা আদায় করার জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে ২২ হাজার পর্ন সাইট বন্ধ করা হয়েছে জানিয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেন, কয়েক হাজার জুয়ার সাইট বন্ধ করেছি। ফেসবুক ইউটিউবে যে ধরনের পর্ন সংক্রান্ত অথবা নোংরা যেসব অশ্লীল তথ্যাদি বা উপাত্ত আছে সেগুলোকে অপসারণ করার ব্যবস্থা নিয়েছি। টিকটক নামক একটি অ্যাপ আছে যা দিয়ে এ ধরনের নোংরামি করা হয়, সেটিও বন্ধ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, টেলিকম বিভাগের অধীনে টেলিকম সাইবার সিকিউরিটি নামে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। আগামী সেপ্টম্বর-অক্টোবরে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। প্রকল্পের মূল্য উদ্দেশ্য ডিজিটাল নিরাপত্তা বিধান করা এবং একটি নিরাপদ ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করা। আশা করছি, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ার পর যে ধরনের পরিস্থিতি আছে সেটি আর থাকবে না।