বৈশ্বিক পরিধেয় ডিভাইস বাজারে প্রবেশ করতে চায় গুগল। এরই অংশ হিসেবে গত নভেম্বরে ২১০ কোটি ডলারে পরিধেয় প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা ফিটবিটকে কিনতে চুক্তিবদ্ধ হয় প্রতিষ্ঠানটি। তবে মার্কিন সার্চ জায়ান্টটির এ অধিগ্রহণ চুক্তিতে বড় ধরনের ঝুঁকি দেখছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এ চুক্তির ফলে ডাটা সুরক্ষা ঝুঁকিতে পড়বে বলে মন্তব্য করেছে ইইউ। খবর বিবিসি।
গুগলের ফিটবিট অধিগ্রহণের ফলে বাজার প্রতিযোগিতা প্রভাবিত হবে কিনা বা বৈশ্বিক সার্চ জায়ান্টটির কাছে অনেক বেশি মানুষের ব্যক্তিগত তথ্যের দখল চলে যাবে কিনা, সে বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ইউরোপের নীতিনির্ধারক সংস্থাটি।
ফিটনেস ট্র্যাকিং ডিভাইস তৈরি করছে ফিটবিট, যা ব্যবহারকারীর হূদস্পন্দন, কার্যকারিতার পর্যায় ও ব্যবহারকারীর জিপিএস ডাটা পর্যবেক্ষণ করে এবং সে অনুযায়ী নানা শারীরিক অসংগতির তথ্য সরবরাহ করে। বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা শেষে গুগলের এ অধিগ্রহণ ঠেকানোর দাবি জানিয়েছে ২০টি ভোক্তা সংগঠন এবং গোপনীয়তাবিষয়ক আইনজীবীদের একটি দল।
অন্যদিকে গুগলের বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের স্বার্থে ফিটবিটের ডাটা ব্যবহার করবে না তারা এবং সংগ্রহ করা ডাটা বিষয়ে তারা স্বচ্ছ থাকবে।
গুগলের ফিটবিট অধিগ্রহণের বিরোধিতা করে প্রাইভেসি ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, কারো এত বেশি ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করা কোনো প্রতিষ্ঠানের উচিত বলে আমরা মনে করি না। আমরা এ অধিগ্রহণের বিরোধিতা করছি। গুগলের ফিটবিট অধিগ্রহণ পরিধেয় প্রযুক্তিপণ্য বাজারে অন্যায্য প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করবে এবং অসংখ্য ফিটবিট ডিভাইস ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলবে।
ইইউ এ অধিগ্রহণ চুক্তিতে অনুমোদন দেবে নাকি বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হবে, সে বিষয়ে ২০ জুলাইয়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন নীতিনির্ধারকরা। গুগল ও ফিটবিটের বেশকিছু প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানের কাছে বিস্তারিত প্রশ্নাবলি পাঠিয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। সম্ভাব্য এ অধিগ্রহণের ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো অসুবিধায় পড়বে কিনা, সে বিষয়টিই জানতে চেয়েছে ইইউ।
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গুগলের ফিটবিট অধিগ্রহণ চুক্তির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রক সংস্থাও। তারা আগামী আগস্টে বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
গুগলের বিরুদ্ধে ইউরোপে একাধিক তথ্য কেলেঙ্কারির ঘটনা নিয়ে তদন্ত চলমান। এ পরিস্থিতির মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি ফিটবিটকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিলে ইউরোপ অঞ্চলের গ্রাহকদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত তথ্য বেহাত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। গুগলের ফিটবিট অধিগ্রহণ ইউরোপের নাগরিকদের জন্য তথ্য নিরাপত্তা ঝুঁকি কয়েক গুণ বাড়াবে।
এ বিষয়ে গুগলের এক মুখপাত্র জানান, আমরা তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিধেয় ডিভাইস বাজারে ভালো কিছু পণ্য সরবরাহের লক্ষ্য থেকে ফিটবিট কিনতে সম্মত হয়েছি। এ অধিগ্রহণ চুক্তিটি বাস্তবায়নে বিভিন্ন দেশের নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের প্রয়োজন রয়েছে। গুগলের ব্যবসার প্রধান শর্তই হলো গ্রাহকের তথ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা। আমরা বিষয়টিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। ফিটবিট অধিগ্রহণ নিয়ে কোনো দেশ বা অঞ্চলের নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের উদ্বেগ থাকলে আমরা তাদের সহায়তা করতে চাই। গুগলের ফিটবিট অধিগ্রহণ পরিধেয় ডিভাইস বাজারে কোনো ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না।
বৈশ্বিক অনলাইন অনুসন্ধান ও মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম খাতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে আছে গুগল। বেশ কিছুদিন ধরে কোর ব্যবসায় অনলাইন অনুসন্ধান ও অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমের পাশাপাশি হার্ডওয়্যার খাতে ব্যবসায় সম্প্রসারণে জোর দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। অন্যদিকে বৈশ্বিক পরিধেয় প্রযুক্তিপণ্য বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাপলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে খারাপ সময় পার করছে ফিটবিট।
গত নভেম্বরে ফিটবিটের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জেমস পার্ক বলেন, আমরা একটি বিশ্বস্ত ব্র্যান্ড তৈরি করতে পেরেছি। যে কারণে বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ৮০ লাখের বেশি মানুষ সুস্থ জীবনযাপনের জন্য সক্রিয়ভাবে আমাদের পণ্য ব্যবহার করছে।
তিনি বলেন, ফিটবিটের ভবিষ্যৎ মিশন বাস্তবায়ন এবং আরো বেশি মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য গুগল আদর্শ অংশীদার। গুগলের সঙ্গে অংশীদারিত্বের কারণে ভবিষ্যতে ফিটবিটের উদ্ভাবনী কার্যক্রম আরো বাড়বে। ফলে পরিধেয় প্রযুক্তিপণ্য ক্যাটাগরিতে আরো নতুন পণ্য যুক্ত হবে এবং মানুষ পরিধেয় পণ্যে আরো বেশি স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট সেবা পাবেন।
গুগলের ডিভাইস ও সার্ভিস ব্যবসায় বিভাগের জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট রিক অস্টারলো বলেন, পরিধেয় প্রযুক্তিপণ্যের পথপ্রদর্শক ফিটবিটের সঙ্গে চুক্তির ফলে যৌথ প্রচেষ্টায় আরো উন্নত ও সর্বোত্কৃষ্ট হার্ডওয়্যার উন্মোচন করা সম্ভব হবে। এ অধিগ্রহণ চুক্তির ফলে বিশ্ববাসী আরো উন্নত সফটওয়্যার ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তিসংবলিত পরিধেয় ডিভাইস ব্যবহারের সুযোগ পাবেন।
বৈশ্বিক পরিধেয় প্রযুক্তিপণ্য বাজারে একটি পরিচিত নাম ফিটবিট। শুরুতে ফিটনেস ব্যান্ড দিয়ে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ফিটবিট। এরপর একের পর এক পরিধেয় ডিভাইস এনে সাড়া ফেলে প্রতিষ্ঠানটি। এর তৈরি ব্যান্ডের সেন্সর হাতের কব্জি থেকে নানা তথ্য নেয়। একই সঙ্গে আছে জিপিএসসহ নানা ফিচার, যা বাইরে থেকেও তথ্য নেয়। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যায় ব্যবহারকারী কতটা হাঁটলেন। তবে প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে বাজার দখল হারিয়ে এখন খারাপ সময় পার করছে প্রতিষ্ঠানটি।