কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence) বা এআই প্রযুক্তির অগ্রগতিতে বদলে গেছে কনটেন্ট নির্মাণের ধরন। এখন অনেকেই এআই ব্যবহার করে সহজেই ভিডিও তৈরি করছেন, কোনোটা কার্টুন, কোনোটা ভয়েসওভার, আবার কোনোটা বাস্তবসম্মত অ্যানিমেটেড ফরম্যাটে। ফলে অনেকেরই প্রশ্ন, এআই দিয়ে তৈরি ভিডিও দিয়ে কি ইউটিউব বা ফেসবুক থেকে আয় করা সম্ভব? এই ভিডিওগুলো কি মনিটাইজ হবে?
চলুন, বিষয়টি বিশ্লেষণ করে দেখা যাক—
১. এআই ভিডিও কি?
এআই ব্যবহার করে তৈরি ভিডিও বলতে বোঝানো হয় যেসব ভিডিও সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি। যেমন-
টেক্সট টু ভিডিও জেনারেশন: স্ক্রিপ্ট দিয়ে ভিডিও তৈরি (উদাহরণ: Pictory, Sora, Runway)
ভয়েসওভার জেনারেশন: এআই ভয়েস দিয়ে স্ক্রিপ্ট পড়ানো
অ্যানিমেশন, ফেস সিঙ্ক, বা অ্যাভাটার ভিডিও
অভিনেতাহীন সিনেম্যাটিক সিন তৈরি
২. মনিটাইজেশন নীতিমালা: ইউটিউব ও ফেসবুক
ইউটিউব মনিটাইজেশন (YouTube Partner Program – YPP)
ইউটিউব অনুমতি দেয় এআই টুল ব্যবহৃত ভিডিও থেকে আয় করতে, যদি কনটেন্ট মূলত আপনার নিজের তৈরি হয় এবং এতে ‘মূল্য সংযোজন’ (value addition) থাকে।
কেবলমাত্র এআই দিয়ে বানানো কোনো বক্তব্যহীন, অরিজিনাল চিন্তাবর্জিত ভিডিও মনিটাইজ হবে না।
উদাহরণ: আপনি যদি চ্যাটজিপিটি দিয়ে স্ক্রিপ্ট লেখেন, ইলেভেন ল্যাবস দিয়ে ভয়েস বানান, এবং পিকটোরি দিয়ে ভিডিও বানান—তবুও ভিডিওটি তথ্যবহুল, নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে তৈরি ও ইউনিক হলে মনিটাইজ করা সম্ভব।
ইউটিউব স্পষ্ট করে বলেছে:
‘Reused or automatically generated content without significant commentary or educational value is not eligible.’
অর্থাৎ ‘পুনর্ব্যবহৃত বা স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি কনটেন্ট, যদি তাতে উল্লেখযোগ্য মন্তব্য বা শিক্ষামূলক মূল্য না থাকে, তবে তা যোগ্য বিবেচিত হবে না।’
ফেসবুক মনিটাইজেশন (Meta for Creators)
ফেসবুক রিলস বা ভিডিও মনিটাইজেশন করতে হলে ভিডিওতে কপিরাইট ভঙ্গ না হওয়া, কমিউনিটি গাইডলাইন না লঙ্ঘন করা, এবং মূলত নিজস্ব কনটেন্ট থাকা জরুরি।
এআই দিয়ে বানানো ভিডিও যদি মৌলিক ও নিজের গল্পে তৈরি হয়, তবে ফেসবুক মনিটাইজেশনের সুযোগ থাকে।
ফেসবুক রিলস প্লে বোনাস, অ্যাডস অন রিলস, ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেলস, সাবস্ক্রিপশন—এসব মাধ্যমেও আয় করা যায়, যদি কনটেন্ট মানসম্মত হয়।
৩. যেসব ক্ষেত্রে মনিটাইজেশন হবে না:
পুরোপুরি কপি করা এআই কনটেন্ট (যেমন চ্যাটজিপিটি দিয়ে হুবহু নিউজ লেখা এবং ভয়েস দিয়ে চালিয়ে দেওয়া)
হুবহু কপিরাইট মিউজিক/ভিজ্যুয়াল এআই দিয়ে ব্যবহার করা
রিইউজড বা লো ইফোর্ট ভিডিও (উদাহরণ: শুধু একটা এআই মুখ ঘোরানো ভিডিও বারবার আপলোড করা)
ডিপফেইক, বিভ্রান্তিকর এআই ভিডিও
৪. কীভাবে এআই ভিডিও দিয়ে আয় করবেন?
১. নিজের স্ক্রিপ্ট লিখুন: তথ্যনির্ভর, শিক্ষামূলক বা বিনোদনমূলক হওয়া জরুরি
২. এআই দিয়ে ভয়েস ও ভিডিও তৈরি করুন: টুলস যেমন — Pictory, HeyGen, RunwayML, ElevenLabs
৩. ভিডিও সম্পাদনা করুন: যাতে মনে হয় এটি মানুষের চিন্তা ও প্রচেষ্টার ফল
4. কমিউনিটি গাইডলাইন মেনে চলুন: ভিডিওতে ভুল তথ্য, সহিংসতা বা বিভ্রান্তি যেন না থাকে
৫. চ্যানেল বা পেজ গড়ে তুলুন: নিয়মিত ভিডিও আপলোড করে ফলোয়ার বাড়ান
৬. মনিটাইজেশন অনুরোধ করুন ইউটিউব বা ফেসবুকের নির্ধারিত শর্ত পূরণ করে
ইউটিউবে অনেক চ্যানেল আছে যাদের ভিডিও ১০০% এআই তৈরি, তবুও আয় হচ্ছে কারণ তারা ইউনিক ও শিক্ষামূলক কনটেন্ট দেয় (যেমন- ‘AI Explained’, ‘Tech Simplified’)
ফেসবুকে রিলসে ছোট এআই অ্যানিমেটেড গল্প, সংবাদ বা জীবনধারা বিষয়ক ভিডিও মনিটাইজ হচ্ছে
হ্যা, এআই দিয়ে তৈরি ভিডিও দিয়ে আয় করা সম্ভব। তবে কনটেন্ট হতে হবে মৌলিক, তথ্যবহুল এবং গাইডলাইনের অনুগত। কেবলমাত্র কপি করা, কম প্রচেষ্টার ভিডিও দিয়ে মনিটাইজেশনের আশা করলে সেটি ব্যর্থ হবে। প্রযুক্তিকে সহায়ক হিসেবে ব্যবহার করুন, প্রতিস্থাপক হিসেবে নয়।